আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুন্দরবন নাকি অসুন্দর ভবিষ্যত ?



অন্ধকার ভালো নাকি মৃত্যু ? আলো নাকি বিশুদ্ধ বাতাস ? কর্ম সংস্থান নাকি প্রকৃতির বিপর্যয় ? মোটা দাগের কিছু প্রশ্ন করছি প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রকে নিয়ে। আমার মনে হয় প্রকৃতি বিষয়ে যার নূন্যতম জ্ঞ্যান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে, তার চেয়েও বড় কথা যারা প্রকৃতিতে লালিত হয়ে এর মমতার স্পর্শে বড় হয়েছেন তারা খুব সহজেই এই স্পর্শকাতরতা সম্পর্কে অবহিত। আর যারা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে অথবা প্রকৃতির কোলে থেকেও একে ভালোবাসতে বা বুঝতে পারেনি তারাই এই ব্যাপারে একেবারেই নেইভ। যখন তারা বলেন এই প্রকল্পের ফলে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবেনা আমি বিস্মিত হই। কারণ আমি জানি প্রকৃতি কি ভাবে বাঁচে আর কি ভাবে মরে যায়।

এটা এতটাই স্পর্শকাতর যে একবার মৃত্যুর দিকে ধাবিত হলে আর ফেরানো যায়না। চোখের সামনে ঢাকার প্রকৃতির মৃত্যু দেখেছি এবং দেখছি। এই মৃত্যু খালি চোখে এবং সল্প সময়ে উপল্বদ্ধি করা যায়না। কিন্ত যখন বোঝা যায় তখন আর ফেরার পথ থাকে না কারণ প্রকৃতির ক্ষয় অপুরণীয়। আমরা কি পেরেছি বুড়িগঙ্গাকে বাচাতে ? আমরা কি পেরেছি মধুপুর, জাফলং, আর হালুয়াঘাটের মত অনেক সমৃদ্ধ প্রকৃতিকে ধরে রাখতে ? সুন্দরবন অত্যন্ত স্পর্শকাতর প্রকৃতির পর্যায়ে পরে আর তাই এটা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

তারা বলছে প্রকল্পটি বাফার জোনের বাইরে হবে। কিন্ত কিছুদিন আগেও এই তথাকথিত বাফার জোন সুন্দরবনেরই অংশ ছিল। যারা বলছেন এর ফলে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না, যা হবে তা খুবই সামান্য এবং বৈজ্ঞানিক ভাবে এর মোকাবেলা করা হবে তারা কি তিরিশ বছরের ডাউন দ্যা লাইন দেখতে পাচ্ছেন না ? প্রকৃতির ক্ষয় যেমন দ্রুত হয় আবার তেমনি ধীরে, যা বোঝা যায় কয়েক দশক পর। সুন্দরবনেও আস্তে আস্তে এই অপুরনীয় ক্ষতিটা যে হবে তা অবধারিত। আমি নিশ্চিত ভাবে বলছি কারণ আমি দেখেছি মানুষের পদচারণা আর বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে কত সুন্দর সুন্দর প্রকৃতির মৃত্যু ঘটেছে।

শুধুতো বিদ্যুত প্রকল্পই নয়। এটা কে ঘিরে মানুষের যে পদচারণা আর কর্মকান্ড শুরু হবে আশে পাশে তার যে কি প্রভাব পরবে তারা কি তা বিবেচনায় রেখেছেন ? এগুলোই ধীরে ধীরে সুন্দরবনের মৃত্যু ডেকে আনবে। আজকের প্রয়োজনে আর বিলাসিতার জন্য কিম্বা আরো কিছু উপকারের আশায় যদি এই বিদ্যুত কেন্দ্রটি হয়েই যায় তাহলে আমি নিশ্চিত যে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের দায়ী করবে এই কান্ডজ্ঞ্যানহীন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করার জন্য। সুন্দরবনের উপকারিতা থেকে তাদের বঞ্চিত করার জন্য। তারা বলবে' বিদ্যুতের তো বিকল্প ছিল, কিন্ত সুন্দরবনের তো কোন বিকল্প ছিলনা'? পারবো কি আমরা এ দায় থেকে মুক্তি পেতে ? তাই এই প্রকল্পটি অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হোক এটাই আমার আন্তরিক আশা।

আর তর্ক বিতর্ক নয়, এটা বিতর্কের উর্দ্ধে। কর্তৃপক্ষ, প্লিজ এই বিদ্যুত কেন্দ্রটিকে রামপাল থেকে অন্য কোথাও সরিয়ে নিন। সুন্দরবনকে অন্তত বেনিফিট অফ ডাউট দিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.