আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাচ্চার খাবার সমাচার

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটা শিশুই আলাদা আর তাদের খাবারের চাহিদাও ভিন্ন। এমনকি একথাও বলা হয়ে থাকে, দিনভেদে একই শিশুর খাবারের প্রতি চাহিদা বা আগ্রহের রকমফের ঘটে। মাঝেমধ্যে শিশু কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই তার জন্য বরাদ্দ খাবার খেয়ে ফেলে। আবার অন্যদিন হয়তো একদমই খেতে চায় না। এতে মা-বাবা চিন্তিত হয়ে পড়েন।

আশংকাবোধ করেন শিশুর এই ‘না খাওয়া’টা হয়তো তার স্বাভাবিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত করছে।
আসলে শিশুর এই খেতে না চাওয়াটা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। বাচ্চাদের খাওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে ডব্লিউএইচও'র ‘ইনফ্যান্ট অ্যান্ড ইয়াং চাইল্ড ফিডিং’সহ বেশ কিছু চাইল্ড কেয়ার গাইডলাইন বা দিকনির্দেশনা দিয়েছে। তারা বলছে—
১. শিশু বসতে শেখার পরপরই তাকে নিজে নিজে খাবার খেতে অভ্যস্ত করে তুলুন। বিভিন্ন খাবারের রং, ধরন, গন্ধ শেখার পাশাপাশি হরেক রকম খাবার ধরতে ও খেতে শেখার মাধ্যমে শিশু খাবারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।


২. শিশুকে কখনও জোর করে কিংবা বকা দিয়ে বা মারধর করে খাওয়ানো যাবে না। উৎসাহ দিয়ে, প্রশংসা করে শিশুকে খাওয়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো কোনো সময় শিশুর বৃদ্ধির গতি কিছুটা কমে আসে, অথবা শিশু মাঝেমধ্যে খেলাধুলা কমিয়ে দেয় (inactive থাকে)। সেসব সময় শিশুর খাবারের চাহিদাও কমে আসে।
৩. শিশুকে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও রাতের মূল খাবারের মাঝে দুবার হালকা নাস্তা দেওয়া প্রয়োজন।

তবে লক্ষ রাখতে হবে, নাস্তা যেন খুব ভারি না হয়। মূল খাবারের কাছাকাছি সময়ে যেন শিশুকে নাস্তা দেওয়া না হয়। ভারি নাস্তা বা মূল খাবারের অল্প আগে কোনো খাবার খেলে স্বাভাবিকভাবেই শিশুর ক্ষুধাভাব কমে যাবে।
৪. অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবক একই পরিমাণ নাস্তা ও মূল খাবার শিশুকে দিয়ে থাকেন। যা শিশুর শরীরে ক্ষুধামন্দা তৈরি করে।

তাই নাস্তার পরিমাণ কম ও মূল খাবারের পরিমাণ বেশি দেওয়া কতর্ব্য।
৫. শিশুর পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি তার খাবারে বৈচিত্র্য আনতে হবে। যেমন শিশুকে বলা যেতে পারে, ‘আপেল নাকি আম কোনটা খেতে চাও?’
শিশু যেটা খেতে চাইবে সেটাই তাকে দিতে হবে।
৬. শিশুকে ফলের রস বা জুস না খাইয়ে আস্ত ফল খাওয়ান।

খুব বেশি পরিমাণে তরল খাওয়ালে শিশুর পেট ভরে যাবে। তবে পুষ্টির চাহিদাতে ঘাটতি দেখা দেবে।
৭. শিশুকে চকলেট, পিটস, জুস— ধরনের খাবার যত কম দেওয়া যায় ততই ভালো। এসবে মিষ্টিজাতীয় উপাদান বেশি থাকে বলে শিশুর ক্ষুধা নিবৃত্ত হয়ে যায় এবং মূল খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
৮. বিভিন্ন ধরনের খাবার শিশুকে দিন।

একই ধরনের খাবার বারবার না খাইয়ে খাবারে বৈচিত্র্য আনা জরুরি।
৯. শিশুকে তার খাওয়ার সময় বেধে দিন ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে। ওই সময়ের মধ্যে শিশু তার বরাদ্দ পরিমাণ খাবার শেষ করতে না পারলে জোর করবেন না। শিশুকে আধাঘণ্টার বেশি সময় ধরে খাওয়ালে শিশুর মধ্যে অরুচি তৈরি হয় ও হজমে ব্যাঘাত ঘটে।
১০. টেলিভিশন দেখতে দেখতে শিশুকে খাওয়ানো যাবে না।

পরিবারের সবাই একত্রে বসে শিশুকে সঙ্গে নিয়ে খেলে খাওয়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে সে।
শিশুর বুদ্ধি ও বিকাশ ঠিকমতো হচ্ছে কি না বা তার শরীরে পুষ্টির সরবরাহ যথেষ্ট কি না তা বোঝার সহজ উপায় হল, শিশুর গড় ওজন লক্ষ করা। জন্ম থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর ওজন বাড়ার পরিমাণ যদি হয় নিচের তালিকাটির মতো, তবে শিশুর বৃদ্ধির গতি নিয়ে চিহ্নিত হওয়ার কিছু নেই।
জন্ম থেকে ৬ মাস : ওজন বাড়বে ৬০০-৮০০ গ্রাম করে।
৭-১২ মাস : ওজন বাড়বে ৩০০-৪০০ গ্রাম করে।


১৩-২৪ মাস : ওজন বাড়বে ১৫০-২০০ গ্রাম করে।
তবে শিশুর বয়স ২ বছর পার হলে ওজন বৃদ্ধির এই গতি কিছুটা ধীর হয়ে আসে। ২ থেকে ৫ বছরের শিশুর ওজনের তালিকা :
২৫-৩৬ মাস : ১১.৭-১৪.৫ কেজি।
৩৭-৪৮ মাস : ১৪-১৬.৩ কেজি।
৪৯-৬০ মাস : ১৬.৩-১৮.৩ কেজি।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ওজন তালিকা ধরে আপনার শিশু বেড়ে ওঠে, সে যদি হাসিখুশি, সজীব ও প্রাণবন্ত থাকে, ঘন ঘন অসুখে আক্রান্ত না হয়, তবে শিশুর খাওয়া দাওয়া নিয়ে মা-বাবার উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।