অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে করে কিন্তু গুছিয়ে লিখতে পারি না ... "মা, আমি চলে যাচ্ছি! তুমি একটুও মন খারাপ করো না, সবার কি এত নিষ্ঠুর পৃথিবীতে থাকা চলে? বল মা? তুমি কি মা মনে কর তোমার এগার বছরের এই ছোট্ট খুকিটা কিছু বুঝে না! শিশু বলেই কি আমাদেরকে বড়দের সব কথা শুনতে হবে?? কেউ কি কোন ব্যাপারে আমাদেরকে ভালভাবে বুঝিয়ে দিতে পারে না মা? ছোট বলেই আর মেয়ে বলেই কি আমরা তাদের কেনা গোলাম হয়ে গেছি মা?? যা ইচ্ছা তাই করবে? রাস্তার কুকুরগুলো তোমার মেয়েকে অশালীন নোংড়া কথা বলবে? তোমার খুকির ছোট্ট মনে কি মা এত কষ্ট মানায় বল??" "মা, আমি চলে যাচ্ছি! জান মা, পৃথিবীতে যাওয়ার আগে শুনেছিলাম পৃথিবী অনেক সুন্দর! আসলেই কি সুন্দর মা?? তাহলে কেন মা আমার চলে যেতে হয় পরীর দেশে? পৃথিবীর কুৎসিত রূপ দেখব যদি জানতে পারতাম মা, তাহলে আমি তোমার গর্ভেই পরীর দেশে আসার পথ খুঁজে নিতাম! আমাদের মত খুকিদের বাঁচার জন্য কি একটা সুন্দর পৃথিবী কেউ গড়ে দিতে পারে না মা?" "বাবা, তোমার কি মনে পড়ে প্রথম যখন আমি তোমার হাত ধরে স্কুলে গিয়েছিলাম? আমি হাটতে পারছিলাম না, তোমাকে বলতেই তুমি পুরো রাস্তা আমাকে কোলে নিয়ে বাসায় এসেছিলে! তোমার কত কষ্টই না হয়েছিল তাই না বাবা? জানো বাবা আমি একলা পথ হাটতে শিখেছিলাম! আমি চেয়েছিলাম তুমি যাতে আমার জন্য এত কষ্ট আর না কর! কিন্তু বাবা ঐ পশুগুলো সেটা চায় নি, তারা জানে না যে তারা তোমাকে কষ্ট দিতে চায়! তারা ভেবেছে আমি এগার বছরের শিশু আমি কিছুই বুঝি না! দেখো বাবা, বাসার কাছেই তো স্কুল ছিল, কিন্তু পশুগুলো আমাকে এ ক'দিনে রাস্তায় কি সব কথা বলেছে, কি আচরণ করেছে তুমি জান না বাবা! আমি তোমাকে, মাকে বলতে পারিনি এত নোংড়া কথা! লজ্জায় ঘৃণায় প্রতি রাতে শুধু কেঁদেছি!" "তাদের দোষ নেই বাবা, তারা অসুস্থ! তাদের হয়ত ভাল চিকিৎসা দরকার! ছোট হলেও বাবা বুঝেছি, মানুষ খারাপ হতে পারে না, কিন্তু সমাজ অসুস্থ মানুষের জন্ম দেয়! ভবিষ্যতে যাতে কোন বাবার খুকির আর আমার মত কাজ করতে না হয়, সে জন্য অসুস্থ লোকগুলো যাতে সমাজে আর না জন্মে এমন ব্যবস্থা কি তোমরা করতে পারবে না বাবা?" "আমি চলে যাচ্ছি মা! তুমি আমার কথা মনে করে কেঁদো না কেমন? তুমি আমার জন্য যে নীল জামাটা পরশু কিনে এনেছিলে সেটা তো আমার পরাই হল না মা! দেখ কি কান্ড স্কুলের কারণে সুযোগই পেলাম না, তুমি হয়ত ভেবেছ সেটা আমার পছন্দ হয়নি! বিশ্বাস কর মা এখানে কেউ মিথ্যে বলে না! জামাটা অনেক সুন্দর! তুমি সেটা আনিসাকে দিয়ে দিও! তুমি যখন জামাটা শপিং ব্যাগ থেকে বের করে আমার হাতে দিয়েছিলে মা, তখন সে জামাটার দিকে তাকিয়ে ছিল! আমি বুঝতে পেরেছিলাম মা তার জামাটা অনেক পছন্দ হয়েছে!" "বাবা, আমি পরীর দেশে চলে গেলাম! এখানে আমার মত কত পরী জান?? সবাই রাগ করে পৃথিবী থেকে চলে এসেছে! অনেক অনেক শিশু পরী, মেয়ে পরী! এখানে আমি অনেক ভাল আছি বাবা! কোন কষ্ট নেই, কোন নোংড়া পশু নেই যে আমাদেরকে থাবা বাড়িয়ে দেবে! আমাদের মত অনেক পরী বাবা পৃথিবীতেও আছে, তারা সুযোগ পায় না আমাদের এখানে আসার! অনেকেই রাস্তাটা চেনে কিন্তু বাবা-মার দিকে তাকিয়েই কষ্ট পায় তাদের ছেড়ে আসতে! বাবা তুমি তাদের খোঁজ নিও! তাদের মাঝেই আমাকে খুঁজে পাবে! তাদের না বলা কথাগুলো শোনার চেষ্টা করো! তাহলে আমি ভাল থাকব! আমরা ভাল থাকব!" ...
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।