আমার কথা সিরিয়াসলি নিয়া বাঁশ খাইলে নিজ দায়িত্বে বাঁশ খাইয়েন
সাবিরুল ইসলামের একটা সেমিনারে যোগ দিতে গেলাম আজকে বিকালে। আমার থেকে বয়সে খানিকটা বড় একটা ছেলে এত খ্যাতি আর সাফল্যের অধিকারী হয়েছে,সেটা নিঃসন্দেহে একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। সেই বিস্ময়বালককে দেখাটাই ছিল মূলত আমার যাওয়ার কারণ।
লিফটে ওঠার সময়ই দেখলাম সেই মানের এক পাংকু মা আর মেয়েও সেমিনারে এসেছে। মেয়েকে দেখে ভ্রূ কুচকে গেল।
এত পুচকা মেয়ে এই সেমিনারে এসেছে কেন?তারপর আবার আমার মনকে বোঝালাম-সাবিরুল এত কম বয়সে যদি এত বড় বড় কাজ করে ফেলতে পারে,তাহলে এই মেয়ে কেন সাবিরুলের সেমিনারে আসতে পারবে না। কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস!সেই কিশোরী আমার ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণিত করল। আমি এবং আমার বন্ধুরা কিছুক্ষণের মধ্যেই টের পেলাম-এই কিশোরী সাবিরুলের ফ্যান্টাসিতে ফান্টা-সেভেনাপ হয়ে আছে। সাবিরুল যাই বলে তাতেই সে মাথা ঝাকায়,সাবিরুল যাই প্রশ্ন করে তাতেই কিশোরী বুঝুক কিংবা না বুঝুক চিল্লায়ে উত্তর দেয়,কোন টিভিতে কবে সাবিরুলকে দেখিয়েছে তাই কন্যার মুখস্থ। সাবিরলের সব প্রশ্নে সেই কিশোরী হাত তুলছে দেখে একটা ব্যাপার ভেবে আতংক লাগল-আল্লাহ না করুক,সাবিরুল যদি এখন হঠাৎ এখন প্রশ্ন করে বসে-কে কে... সকালে উঠে গরুর গোবর দিয়ে দাত মাজে,তাহলেও কি এই মেয়ে পজেটিভ উত্তর দেবে?
মেয়েটার জন্য এক সময় মায়া লাগল।
এককালে আমিও সাকিব-আল হাসানের জন্য দিওয়ানা ছিলাম। সে যাক গে। এই সব রোমান্টিক কথা বাদ দিয়ে কাজের কথা বলি।
সাবিরুল ইসলাম আসলেই একটা সেই মানের ট্যালেন্ট। এত সতস্ফূর্ত প্রেসেন্টেশন আমি আগে দেখিনি।
প্রেসেন্টেশন এতটা নাটকীয় ভঙ্গীতে বলা যেতে পারে তা অনেক আগে একবার একটা মুভিতে দেখেছিলাম। কিন্তু বাস্তবে এই প্রথম। সাবিরুলের সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটা চোখে পড়ল তা হল-সে ব্যবসার অলিগলি বেশ ভাল জানে। ভাল বলতে সেইইইইইইইইইই ভাল। সেলফ ব্র্যান্ডিংটা ভালই করল।
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সেলফ ব্র্যান্ডিং না করেই বা উপায় কি?
সাবিরুলের লক্ষ্য সমগ্র পৃথিবীর এক মিলিয়ন লোককে ইন্সপায়ার করা। ব্যাপারটা খারাপ না। কিন্তু স্বভাবের দোষেই মনে কিছু প্রশ্ন এসে গেল। প্রশ্নোত্তোর পর্বে তাই প্রশ্নটা করেই ফেললাম।
"একজন উদ্যোক্তা হিসাবে দেশের জন্য এই এক মিলিয়ন মানুষকে ইন্সপায়ার করা ছাড়া আর কি দায়িত্ব পালন করছেন?"
সাবিরুল সাহেব আমাকে যা উত্তর দিলেন তাতে আমার মনে হল উনি আসলে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরছেন কেবল রথ দেখা আর সাথে কলা বেচার জন্য।
উত্তরটা ছিল এরকম যে তিনি শিক্ষা ব্যাবস্থায় সাহায্য করছেন এবং সেটা কিরকম সাহায্য সেটা জানতে হলে আমাকে আগে তার লেখা বইটা পড়তে হবে। তার মানে বইটা আগে আমাকে কিনতে হবে।
দুঃখিত সাবিরুল,আমি আপনার সমালোচক হয়ে গেলাম। কিন্তু প্রেসেন্টেশনের মাঝখানে বইয়ের প্রদর্শনটা বেশ বিরক্তিকর ছিল।
আমার বিরক্তিটা বোধহয় আয়োজকরাও ধরতে পেরেছিল।
তাই ঘোষনা দিল যে চা আর বিক্কুর ব্যবস্থা আছে। দুই টাকার বিক্কুর প্যাকেট সবার হাতে ধরিয়ে দিল।
সেমিনার শেষে সেই কিশোরীকে দেখলাম,মায়ের কাছে সাবিরুলের অটোগ্রাফ আনতে যাবে বলে বায়না ধরেছে। মনে মনে হাসলাম আর কিশোরিকে বললাম,"ছেমড়ি,একদিন নিজের এইসব বলদামীর কথা মনে কইরা খালি শরম পাবি আর হাসবি!বুঝলি?"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।