খসড়া ভোটার তালিকার ওপর আপত্তি গ্রহণ ও শুনানির দিনে কাল নির্বাচন কমিশনে ১৪টি আপত্তি জমা পড়েছে বিভিন্ন জেলা, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা ও ক্লাব থেকে। মূল আপত্তিটা বারিধারা ড্যাজলার্সের কাউন্সিলর ও বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর। বিসিবির নির্বাচনপ্রক্রিয়ার অনেক মৌলিক বিষয় নিয়েই গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
সাবের হোসেন চৌধুরীর প্রথম অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের কাজের এখতিয়ার নিয়ে। কাল সন্ধ্যায় শুনানি শেষে সাংবাদিকদের কাছে সেটির ব্যাখ্যা দিলেন তিনি, ‘আমি কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছি, অ্যাপিলেট ডিভিশনের যে রায়ের আলোকে নির্বাচন হবে, তাদের কাছে সেটার সার্টিফায়েড কপি আছে কি না।
কারণ অ্যাপিলেট ডিভিশনের রায় হলে লিখিত সার্টিফায়েড কপি ছাড়া পরবর্তী কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা যায় না। কিন্তু তাঁরা বললেন তাঁদের কাছে এখনো রায়ের কপি আসেনি। ’ তাই সাবের হোসেনের দাবি, ‘রায়ের কপি না আসা পর্যন্ত নির্বাচনপ্রক্রিয়া বা তফসিল বাতিল করতে হবে। স্থগিত করতে হবে। রায় পাওয়ার পর সেটা পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
মুখে মুখে তো নির্বাচন হতে পারে না। ’
নির্বাচনী বিধিমালা প্রণয়ন না করেই নির্বাচন কমিশন বিসিবির নির্বাচন পরিচালনায় নেমে পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক বোর্ড সভাপতি। সাবের চৌধুরীর অভিযোগ বিসিবির দেওয়া খসড়া ভোটার তালিকা নিয়েও, ‘গঠনতন্ত্রের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচনসংক্রান্ত সব কাজ করবে নির্বাচন কমিশন। গঠনতন্ত্রের কোথাও এমন কিছুর উল্লেখ নেই যেটা নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত কোনো এখতিয়ার বিসিবিকে দেয়। ’ বিসিবি সাধারণ পরিষদ গঠনের জন্য কাউন্সিলরের নাম চাইতে পারলেও বিসিবির চিঠিতে ‘নির্বাচন পরিচালনা’ করার কথাও উল্লেখ আছে বলে দাবি তাঁর, ‘বিসিবি সাধারণ পরিষদ গঠনের জন্য কাউন্সিলর মনোনয়ন করতে বিভিন্ন সংস্থাকে অবগত করতে পারে।
কিন্তু বিসিবির চিঠিতে নাম চাওয়া হয়েছে সাধারণ পরিষদ গঠন এবং পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য। এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এমনকি তারা যে ছকে নাম চেয়েছে সেটারও কোনো বৈধতা নেই। ’ বর্তমান খসড়া ভোটার তালিকা বাতিল করে তাই নির্বাচন কমিশনকে নতুন খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের জন্য সময় খুবই কম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ সাবের চৌধুরীর।
তফসিলকে ‘মনগড়া শিডিউল’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘একটা শূন্য পদে নির্বাচনের জন্যও যেখানে ৪৫ দিন সময় দিতে হয়, সেখানে ২৭টি পদে নির্বাচনের জন্য কীভাবে মাত্র ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়?’
এসবের সঙ্গে পুরোনো অভিযোগগুলোও তুলেছেন নতুন করে। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভোটার তালিকা করার সময় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ক্লাবগুলোর সর্বশেষ মৌসুমের স্ট্যান্ডিং ধরার কথা। সে অনুযায়ী ২০১২-১৩ মৌসুমের স্ট্যান্ডিং অনুযায়ী হওয়ার কথা কাউন্সিলর। অথচ এ ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়েছে ২০১১-১২ মৌসুমের স্ট্যান্ডিং! এ ছাড়া অনেক জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা নির্বাহী পরিষদের সভা ছাড়াই কাউন্সিলরের নাম পাঠিয়েছে, কোথাও বা পালন করা হয়নি সভার সিদ্ধান্ত, অনেক ভোটার সাধারণ পরিষদেরও সদস্য নন—সাবের চৌধুরীর অভিযোগের তালিকায় আছে এসবও।
নিজের তোলা আপত্তিগুলোর জবাব নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে লিখিতভাবে চেয়েছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনও আজকের মধ্যে জবাব দেবে বলে আশ্বস্ত করেছে সাবের চৌধুরীকে। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমান সংবাদমাধ্যমের কাছেও বলেছেন, ‘আপত্তিগুলো পর্যালোচনার পর আগামীকাল (আজ) আমরা আদেশ দেব। ’ তবে অ্যাপিলেট ডিভিশনের সার্টিফায়েড কপি না থাকার ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট, ‘অ্যাপিলেট ডিভিশনের সার্টিফায়েড কপি আমার কাছে থাকার দরকার নেই। কারণ হলো, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আমাকে বলেছে বিসিবির ২০১২ সালের গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য। সেই গঠনতন্ত্র আমার কাছে আছে।
যদি অ্যাপিলেট ডিভিশনের কপির প্রয়োজন হয়, সেটা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বুঝবে। এটা আমার দায়িত্ব না। এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব না। ’
তফসিল অনুযায়ী আজ বেলা ৩টায় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও সব আপত্তির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেটা সম্ভব নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার পরও আশাবাদী, ‘কাল (আজ) বেলা ৩টা পর্যন্ত সময় আছে।
কিছু জিনিস পর্যালোচনা করতে হবে বলেই এই সময়টা আমরা রেখেছি। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।