নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই দেশ অচল করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ থেকে এ হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা সরকারকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, নির্দলীয় সরকার ছাড়া যে মুহূর্তে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে, সেই মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ অচল করে দেওয়া হবে। ' একই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আবারও আগামীকাল রবিবার সারা দেশে উপজেলা-থানা-পৌরসভায় বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি। মহানগর ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে নির্বাচনকালীন 'সর্বদলীয়' সরকার প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ চলাকালে মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত যানচলাচল বন্ধ রাখা হয়।ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম, নাজিম উদ্দিন আলম, জাফরুল হাসান, শিরিন সুলতানা, মুনির হোসেন, মীর নেওয়াজ আলী, রাজিব আহসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়াও বক্তব্য দেন জামায়াতের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহ, ডা. রেদোয়ান উল্লাহ শাহেদী, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, শফিকুল ইসলাম মাসুদ, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, খেলাফত মজলিশের অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের, এনডিপির গোলাম মোর্তুজা, ছাত্রশিবিরের আতিকুর রহমান আতিক প্রমুখ। 'সর্বদলীয়' সরকারকে অবৈধ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা সংকট সমাধানে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিলেন।
তিনি (রাষ্ট্রপতি) এখন পর্যন্ত পদক্ষেপ নিতে পারেননি। এর আগেই সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলে দিলেন নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার জন্য তিনি রাষ্ট্রপতির অনুমতি পেয়েছেন। এর মাধ্যমে সংকট সমাধানের সব পথ সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে আমলেই নিচ্ছে না। তারা একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
সরকারের লেজুড়বৃত্তি নির্বাচন কমিশন একের পর এক এমনসব আইন প্রণয়ন করছে, যাতে তারাই (আওয়ামী লীগ) জয়ী হতে পারে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন নাকি আগামী সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করবে। নির্দলীয় সরকার না করে যদি তফসিল ঘোষণা হয়, আমরা তা মানব না। যেদিন থেকে তফসিল হবে, সেদিন থেকেই বাংলাদেশ অচল হয়ে যাবে। রাজধানীতে সভা-সমাবেশের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার কঠোর সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এ সরকারের গণতন্ত্রের নমুনা এটাই।
এ রকম অবস্থায় আমাদের আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ নেই। রাজধানীবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, রাজপথের আন্দোলনে ঢাকাবাসীকে জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠুন ঢাকাবাসী। রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
পঙ্কজ শরণের সমালোচনায় মির্জা আব্বাস : ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের নাম উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, 'পঙ্কজ শরণরা যত চেষ্টাই করুন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে পারবেন না।
' তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখছি, পঙ্কজ শরণ লম্বা লম্বা কথা বলছেন। বাংলাদেশে নাকি তাদের স্বার্থ রয়েছে। এ জন্য ভারতীয় ওই রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ এরশাদ, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের মন্ত্রীদের বাসায় বাসায় বৈঠক করছেন। তাকে বলব, আপনি কেবল নিজের স্বার্থই দেখছেন। এদেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষার কথা আপনি বলছেন না।
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের জনগণ কারও আধিপত্য মেনে নেবে না। এদেশের জনগণ নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছে। প্রয়োজনে তারা আবার রক্ত দিয়ে হলেও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। দলের স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকার রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফলকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বলেই একতরফা নির্বাচন করতে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী রিমোট কন্ট্রোলের বোতাম টিপ দেবেন, আর জেলার ডিসি-এসপিদের মাধ্যমে ৩০০ আসনের ফলাফল বেরিয়ে আসবে।
এহেন নির্বাচন বিএনপি কোনোভাবে হতে দেবে না।
সভাপতির বক্তব্যে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, সংবিধানের দোহাই দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। এখন আমাদের নির্দলীয় সরকারের দাবিতে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সবাইকে কারাগারে নিলেও আন্দোলন দমন করা যাবে না।
জামায়াত নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, 'আমাদের নেতাদের জেলে রেখে, ফাঁসির আদেশ দিয়ে এ সরকার একতরফা নির্বাচন করে পার পাবে না।
হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, সীতাকুণ্ডের ঘটনা শুধু একটা নমুনা। প্রতিরোধ এখনো থামেনি। ' শফিকুল ইসলাম মাসুদ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আবদুল কাদের মোল্লার রায় নিয়ে যদি নাড়াচাড়া করা হয়, তাহলে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে আগুন জ্বলবে। মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে এক মিনিটে রায় ঘোষণা করা হলে বাংলাদেশ কাঁপিয়ে দেওয়া হবে।
এলডিপি নেতা রেদোয়ান আহমেদ বলেন, আমাদের জোট ভাঙার জন্য সরকার অনেক প্রলোভন ও লোভ দিচ্ছে।
এতে কোনো কাজ হবে না।
রাজশাহী : রাজশাহীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে মহানগর ১৮ দলীয় জোট। বেলা ১১টার দিকে নগরীর ভুবনমোহন পার্ক থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি প্রধান প্রধান সড়ক ও মোড়গুলো প্রদক্ষিণ শেষে একইস্থানে এসে শেষ হয়। এর আগে ভুবনমোহন পার্কে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন, রাজশাহী সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, ১৮ দলীয় জোটের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডল, সহকারী সেক্রেটারি মাইনুল ইসলাম, যুবদল কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর যুগ্ম-আহ্বায়ক আসলাম সরকার, মহানগর ছাত্রদল সভাপতি মাহফুজুর রহমান রিটন, সাধারণ সম্পাদক শাহ মইনুল হোসেন চৌধুরী শান্ত প্রমুখ।
বরিশাল : বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার এমপি বলেছেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি মানা না হলে বরিশালে এমন আন্দোলন শুরু হবে যে, এ সরকারের কোনো মন্ত্রীকে বরিশাল ঢুকতে দেওয়া হবে না। সকালে নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হল সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
মহানগর বিএনপির সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ এমপি, মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাড. মুয়াযয্ম হোসাইন হেলাল, বিএনপি নেতা এবায়েদুল হক চাঁন, উজিরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু। বগুড়া : বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা ১৮ দলের আহ্বায়ক ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশ নিয়ে চক্রান্ত করছে। তাই লোক দেখানো সর্বদলীয় সরকার গঠন করে সংসদ নির্বাচনে জয় পেতে চায়।
গতকাল বিকালে বগুড়া পৌর পার্কে জেলা ১৮ দলের বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। বক্তব্য দেন বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন চান, জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, জাগপা সভাপতি আমির হোসেন মণ্ডল, ইসলামী ঐক্য জোটের ইঞ্জিনিয়ার শামসুল হক, এলডিপির মোখলেছার রহমান, বিএনপি নেতা মাহবুবর রহমান বকুল, মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, সিপার আল বখতিয়ার, মেহেদী হাসান হিমু প্রমুখ। কিশোরগঞ্জ : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে কিশোরগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডক্টর এম. ওসমান ফারুক। শহরের রথখোলা ময়দান থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে কালীবাড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহ-সভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল, শরীফুল আলমসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন। রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : রূপগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। সকালে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপজেলার তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়া এলাকায় মিছিল বের করলে এই লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। থানার উপ-পরিদর্শক মফিজুর রহমান মলি্লক জানান, সকাল ১০টার দিকে উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকা থেকে বিএনপির ২০/২৫ জন কর্মী একটি মিছিল বের করার চেষ্টা করে। লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হওয়া মিছিলটি থেকে নাশকতা ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কায় পুলিশ তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
তারাব পৌর যুবদল নেতা জাকির হোসেন রিপন জানান, সকাল ১০টার দিকে বিএনপি ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা নোয়াপাড়া তহসিল অফিস এলাকায় জড়ো হলে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ এসে মিছিলের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।