মুখোশ
-হ্যালো
-হুম, কি কর?
-বুয়া সেই কোন সন্ধ্যায় রান্না করে রেখে গেছে। খাবারগুলো গরম করছি।
-রাত বাজে বারোটা, এখনো খাও নাই?
-সবে তো ফিরলাম। সারাদিন দৌড়ের উপর ছিলাম।
-এভাবে খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম করলে তো শরীর খারাপ করবে।
-আর তো মাত্র কিছু দিন। এর পর রোজ রোজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরব। সুন্দরী বউ রান্না করে খাবার নিয়ে টেবিলে বসে থাকলে আমি কিভাবে অত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকি?
-বউয়ের অত দরদ নাই। বউ ঘুমাতে চলে যাবে। বউয়ের ঠেকা পড়ে নাই।
- স্বামী অফিস শেষে হাতের কাজ সেরে রাত করে বাসায় ফিরবে, বাঙ্গালী বউ খাবার নিয়ে টেবিলে বসে থাকতে থাকতে রাগ সপ্তমে চড়াবে, রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে যাবে। টেবিলে বসে বসে ঝিমুবে। চোখে ঘুম নিয়ে সদ্য বাসায় ফেরা স্বামীর সাথে ঝগড়া করবে, এটাই নিয়ম।
-সব নিয়ম মেনে হবে এমন কোন নিয়ম নাই।
-এজন্যই তো বিয়ের আগের ভালোবাসা আর পরের ভালোবাসা তুমি এক নিয়মে ফেলে দেরী করে বাসায় ফেরার রাতে অভিযোগ করবে, আমি তোমাকে আর আগের মত ভালবাসি না।
ভালোবাসায় সমতা প্রমান করার জন্য আমরা দুজন ছুটির দিনগুলোতে শহর ভ্রমনে বেরুবো। রিকশায় সারাদিন ঘুরব। বিকালে পার্কের সবুজ ঘাসে বসে অতীতের গাঁয়ে জমা শ্যাওলাগুলো তুলে নিয়ে সেখানে নতুন রঙ লাগাব। কোনদিন হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নামবে। সে বৃষ্টিতে হাত ধরাধরি করে ভিজে দুজন ভেজা চড়ুইয়ের মত ছোট্ট নীড়ে ফিরে আসব।
খড়কুটোর দিয়ে তৈরি কোন বাসা। আমাদের আলমারি ভর্তি হয়ত টাকা থাকবে না। দু’তিনটা ফিক্সড ডিপোজিটের একাউন্টও হয়ত থাকবে না। শুধু ভালবাসা থাকবে। ঘর ভর্তি ভালোবাসা।
একাউন্ট ভর্তি ভালোবাসা। সে একাউন্টে ভালোবাসার অভাবে কোন চেক কোনদিন বাউন্স করবে না। বাসায় জায়গা না পেয়ে কিছু ভালোবাসা জানালা দিয়ে, ভেন্টিলেটর দিয়ে, দরজার ফাঁক গলে উপচিয়ে পড়বে।
-হুম, আর?
-আমার ডাইনিং রুমে কোন ফ্যান থাকবে না। খাওয়ার সময় বউ হাতপাখা দিয়ে বাতাস করবে।
-তোমার তো অনেক প্ল্যান!!!
-আরে আসল প্ল্যানের কথাই তো বলি নাই। শোন, আমাদের দুটো বাবু থাকবে। একটা ছেলে, একটা মেয়ে। পিঠেপিঠি বয়সের। সারাদিন ওরা মারামারি, ঝগড়াঝাটি করবে।
সন্ধায় পড়তে বসবে। খাওয়ার টেবিলে কেউ একজন গ্লাস ভেঙে ফেলবে। তুমি ধমক দিবে, রাগের চোটে দু’একটা মাইরও দিয়ে বসতে পারো। তারপর বাচ্চাগুলো ফুঁপিয়ে কাঁদবে। বাবা বাসায় ফিরলে মায়ের নামে বিচার দিবে।
তারপর ওরা একসময় ওদের ছোট ছোট জামাগুলোর দিন ফুরোবে। পিঠে স্কুলব্যাগ নিয়ে ওরা স্কুলে যাবে। ওরা নামকরা স্কুল-কলেজে পড়বে। পরীক্ষায় ফার্স্ট হবে। ছেলেটা কলেজের কোন সুন্দরী মেয়ের প্রেমে পড়বে।
প্রেমের যন্ত্রনায় রাতে ওর ঘুম হবে না। কোন একদিন মেয়েটাও তার বইয়ের ভাঁজে প্রেমপত্রের অস্তিত্ব আবিষ্কার করবে। তারপর বাবা-মা থেকে লুকিয়ে রাতে চুপিচুপি সে প্রেমপত্র পড়ে অজান্তে হাসবে। ওর হৃদয়ের একূল ওকূলে ঝড় উঠবে। সকালে উঠে আমাদের সামনে ভাব দেখাবে সব ঠিকমত’ই চলছে।
ওরা ভাববে আমরা কিছু বুঝি না। আমাদের যে ওদের মতই অতীতের কিছু দিন ছিল তা ওদের ভাবনাতেই আসবে না।
অরিন কাঁদছে। ওর চোখ বেয়ে ঝাপসা রঙের কষ্ট গড়িয়ে পড়ছে। বিষাদের শূন্যতায় ওর বুকে পাথর ঝেঁকে বসেছে।
অথচ বছর খানেক আগেও স্রোতস্বিনী নদীর মত ওর দু’চোখ বেয়ে স্বপ্ন বয়ে যেত। জীবনটাকে ওর আশীর্বাদ মনে হত। মাঝে মাঝে জীবনের স্বল্প দৈর্ঘ্যের জন্য উপরওয়ালার কাছে অনুযোগ প্রকাশ পেত। আর এখন পথটা তার অনেক দীর্ঘ মনে হয়। যেন নিরুদ্দেশে ছুটে চলা কোন পথিক।
কষ্টের অনুভূতি জীবনের ক্ষণগুলোকে অনেক দীর্ঘ করে দেয়। সে ক্ষণগুলো শত প্রহসনেও ফুরোতে চায় না। যেন তাদের শেষ নাই।
বছরখানেক আগের একটা রোড় এক্সিডেন্টে অরিনের পথটার সীমা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যে জানালা গলে একসময় ভালবাসার লহর বয়ে যেত সে জানালায় অন্ধকার ভর করে।
অরিনের বুক ভর্তি নিশ্চুপ হাহাকার সে অন্ধকারে নিমিষেই মিলিয়ে যায়।
একজন অন্ধকারে অলক্ষ্যে বিমূর্ত দাঁড়িয়ে অরিনের জন্য জল ফেলে।
****এটা গল্প লেখার একটা ব্যর্থ প্রয়াস। গল্পটা এত্তোগুলো পঁচা হলে লেখক দায়ী না। ফার্স্ট এটেম্পট বলে মাফ করে দিয়েন।
গল্পলেখার ইচ্ছাটা মাথায় উঠেছিল 'রিয়েল ডেমোন' এর কারণে। অসাধারণ লিখত ছেলেটা। আমি মুগ্ধ পাঠক। আরো অনেকেই। মাঝখানে অনেকদিন ব্লগে আসা হয়নি।
প্রায় বছর দেড়েক। এসে দেখি 'রিয়েল ডেমোন' নাই হয়ে গেছে। ছেলেটাকে মিসাই। গল্প লেখার এই ব্যর্থ প্রয়াসটা ওর জন্য তোলা থাকল।
আর আমার বন্ধু সুকান্তের জন্য।
আমার ছাইপাশ লেখার সমালোচক সে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।