পিকআপ ভ্যানের ডান পাশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। অনেক কষ্টে বাঁ পাশের দরজা খুলে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন পিকআপটির চালক নূরুল ইসলাম। কিন্তু অগ্নিদগ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা পাননি। আগুনে তাঁর দুই হাত ও কোমর থেকে পা পর্যন্ত দগ্ধ হয়েছে।
শরীরে ব্যান্ডেজ নিয়ে যন্ত্রণাকাতর নূরুল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল মঙ্গলবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়ার পর দুপুরের দিকে দুর্বৃত্তরা রাজধানীর কাজী আলাউদ্দিন রোডে নূরুলের পিকআপে আগুন দেয়। ফকিরাপুলে একটি মিনিবাস ও বাবুবাজারে একটি মাইক্রোবাসেও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
সন্ধ্যায় বার্ন ইউনিটে গেলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে নূরুলের প্রশ্ন, ‘ভাই, আমার গায়ে আগুন দিল ক্যান?’ তাঁর কথা, সাধারণত হরতাল হলে জ্বালাও-পোড়াও হয়। কিন্তু গতকাল তো হরতাল ছিল না। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায়ের বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘ভাই, আমি এসব বুঝি না।
’
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিলে এর প্রতিবাদে দলটির ডাকা গত ১৮-১৯ সেপ্টেম্বরের হরতালে দেওয়া আগুনে দুই ট্রাকচালক ও এক বাসচালক মারা যান।
নূরুল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত স্ট্যান্ডার্ড ফিনিশ ওয়েল কোম্পানির মালামাল পিকআপ ভ্যানে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। তিনি জানান, গতকাল বেলা দুইটার দিকে তিনি পিকআপে মশার কয়েল নিয়ে আরমানিটোলার বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতে যাচ্ছিলেন। বঙ্গবাজার পার হয়ে কাজী আলাউদ্দিন রোডে ফায়ার সার্ভিসের দপ্তরের সামনে যানজটে পড়েন। তখন সাত-আটজন যুবক পিকআপের কাছে আসেন।
ওই যুবকদের একজন বোতল থেকে তরলজাতীয় পদার্থ পিকআপের ডান পাশে ছুড়ে মারেন। তরল পদার্থের কিছুটা তাঁর শরীরেও লাগে। আরেক যুবক দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে পিকআপের ওই অংশে ছুড়ে মারলে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
নূরুল বলেন, ‘ডান পাশের দরজা দিয়া নামার সুযোগ ছিল না।
আগুন আর আগুন। দেখি আমার প্যান্ট ও হাতে আগুন ধইরা গেছে। অনেক চেষ্টা কইরা বাঁ পাশের দরজা খুইলা বাইর হই। আমার শরীরে তহন আগুন। হাত দিয়া ঝাপটা মারতে মারতে আগুন নেবাই।
’ তিনি বলেন, আগুনে তাঁর মুঠোফোন পুড়ে গেছে। একজনের সহায়তায় তিনি হাসপাতালে আসেন এবং আরেকজনের মুঠোফোন থেকে প্রতিষ্ঠানে খবর দেন। কথা বলার সময় মাঝেমধ্যে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক নাসিমা ই তাসলিম সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণত ৪০ শতাংশ দগ্ধ হলে আশঙ্কাজনক হিসেবে ধরা হয়। নূরুলের শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।
নূরুলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরের রাজা চাবিতলায়। থাকেন গাজীপুরের বাগেরবাজার এলাকায়। তিনি জানান, মাসে ১০-১২ হাজার টাকা উপার্জন করেন। এর বেশির ভাগ গ্রামের বাড়িতে পাঠান। কারণ, ছোট তিন ভাইবোন লেখাপড়া করে।
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে নূরুল দ্বিতীয়। বড় ভাই থাকেন মালয়েশিয়ায়।
ঘটনা শুনে হাসপাতালে আসেন স্বজন এবং স্ট্যান্ডার্ড ফিনিশ অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রবিউল আলম বলেন, ‘আমরা নূরুলের পাশে আছি, থাকব। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।