মানুষ আসে মানুষ যায় কিন্তু সময় যায় চিরতরে
মাঘ এর মাঝামাঝি-মোটামুটি শীত পড়ছে। ষড় ঋতুর বাংলাদেশ বিভিন্ন ঋতুতে রকমারি রুপে সজ্জিত হয়ে বার বার ফিরে আসে আমাদের মাঝে। তেমনি বছরের অন্যান্য ঋতুর ন্যায় শীত ও ফিরে এসেছে কুয়াশার চাঁদর গায়ে জড়িয়ে। হাড় কাঁপানো শীতের শেষ প্রায়। শুরু হয়েছে পাতা ঝরার পালা।
সবুজ পাতার গাছ এখন হতে চলেছে বিবর্ন-অনেকটাই হলুদাভ রঙ এ সেজেছে প্রকৃতি। ক্রমেই ঝরা পাতায় ভরে যাবে বনরাজি-পাতা শুন্য গাছেরা মৃত প্রায় দাঁড়িয়ে রইবে বসন্তের আগমনের অপেক্ষায়।
শীতের রাতে সহসাই মনে পড়ে যায় গ্রাম্য সেই স্মৃতিময় দিনগলো যা পিছনে ফেলে এসেছি অনেকদিন হয়ে গেলো। এখন আর শীতের সন্ধায় বন্ধুদের নিয়ে গাঁয়ের মাঠে খেজুর রস পেড়ে খেতে যাওয়া হয়না। সকালের রোদে মাটিতে বসে নানা প্রকারের পিঠা পায়েস সহসা আর খাওয়া ওঠে না।
মন উচাটন করা ফসলের মাঠের শীতকালীন সবজির গন্ধ ভেসে আসেনা । যান্ত্রিক শহরের জীবনে হারিয়ে গেছে গ্রামীন সেই সুখ দুঃখে ভরা সহজ সরল দিনগুলি। চোখ বুঝলেই এখনো মনের পর্দায় উঠে আসে সেই ছবির মত সাজানো গ্রামের প্রতিচ্ছবি। যা আমাকে প্রতিনিয়ত হাতছানি দেয়। কচুড়ি পানার সাদা-বেগুনী ফুলে বাতাসের দোল মৃদু নড়াচড়া,মনে করিয়ে দেয় আমার শিকড়ের অস্তিত্ব।
অনেকদিন পর-যেতে চলেছি আমার পুন্যভুমি চির আপন ঠিকানায়,আমার গ্রামে। যার কাঁদা মাটির গন্ধ এখনো লেগে আছে আমার সমস্ত শরীড় জুড়ে। হাজার হাজার যান্ত্রিক গাড়ি-ডিজেল-পেট্রোল,কলকারখানার ধোঁয়ার মাঝেও আমি যে মাটির গন্ধ খুঁজে ফিরি-যে এঁদো স্যাঁতসেতে জীর্ন পঁচা ধানের গাছের মাঠ-গরু মহিষের চোনা গোবরে ভরা গোয়াল ঘরের প্রকট অস্বচ্ছতা তা কি এই নগর জীবনে মেলে? আমি বার বার ফিরে যেতে চাই ঐ দুর্ঘন্ধময় চাষীর আবাদি জমিতে। যার হাতে পরম আদরে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন-যার মাধ্যমে আমরা পায় আমাদের দৈনন্দিন চাহিদার খাদ্য-বস্ত্র সেই কৃষকের হাতে হাত ধরে-বুকে বুক মিলিয়ে আমি বলতে চাই-পরম বন্ধু আমার,আমি তোমাদের ছিলাম-তোমাদেরই আছি। তোমার উৎপাদিত ফসলে তোমার আবাদি সবজিতে আমি ঐ নগর জীবনেও বেঁচে আছি।
আজ আমি যা কিছু তা তো তোমারই অবদান-তাই আজকের এই আমি তোমার আশির্বাদে-তোমার আরাধনায়-তোমার কল্যানেই । আমার সমস্ত অস্থি মজ্জায় তুমি মিশে আছো,আমি তোমাকে ভুলে যেতে পারিনি-ভুলিনি!তোমার ঐ নিষ্কলুষ বুকে আমাকে জড়িয়ে ধরে শীতল করে দাও। যান্ত্রিক জীবনের যত আবর্জনা-ধুলা ময়লা আমার দেহে লেগে আছে,গ্রামের পবিত্র মাটির স্পর্শে ধুয়ে মুছে আমার অপবিত্র শরীরটাকে পবিত্র করে দাও।
সভ্যতার দাবিদার শহর। আধুনিক জীবনে অভ্যস্ত আমরা।
আমাদের উন্ন্যয়ন,বিলাসী জীবনমান যা কিছু তার সবটাই তো শুরু ঐ গ্রাম থেকে। নগর জীবনে আছে প্রত্যক্ষ প্রতিযোগীতা অর্থ বিত্ত ক্ষমতা আর দম্ভের। স্বার্থের কাছে সম্পর্ক অনেকটাই গৌন এখানে। নাগরিক জীবনে কোথায় পাব সেই অকৃত্রিম বন্ধু-যে বন্ধুকে আম জাম খাওয়াবার জন্য ভরা চৈত্রের দুপুরে গাছের ডালে চড়ে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তার একটা হাত ভাঙ্গার পরও পরিতৃপ্তির হাসি হাসতে পারে? এখানে কি মেলে সেই প্রতিবেশী-যে পাশের বাড়ীর অসুস্থ ছেলেটির জন্য আঁধার রাতে হারিকেন জ্বালিয়ে কয়েক মাইল পথ হেঁটে গিয়ে ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসে? কোথায় পাব সেই অঁজ পাঁড়া গাঁয়ের সাধারন গৃহবধুকে-যে স্নেহ আদরে গরমের দিনে পরের ছেলেকে তালপাখার বাতাসে তৃপ্ত করবে?? সেই আন্তরিকতা কোথায়-যা আছে সাধারন নিরিহ অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত সাধারন কৃষক গ্রামবাসীর মধ্যে? এখনো গ্রামের মানুষের, মানুষের প্রতি যে মায়া মমতা-সম্মান আছে তার একটি কনাও যদি আমাদের এই শিক্ষিত নগর জীবনে থাকত,তাহলে আমাদের সমাজটা অনেকটাই বদলে যেত। রাস্তায় বেরিয়ে ভাবতে হত না-সুস্থ্যভাবে ঘরে ফিরতে পারব কি না!
তাইতো গ্রাম আমকে সবসময় হাতছানি দেয়।
ফেলে আসা সে দিন আমাকে বার বার আকর্ষন করে। অনেকগুলো বছর শহরে কাটানোর পরও আমি ছুটে যাই-ফিরে ফিরে যেতে চায় আমার গ্রাম আমার মা আর আমার মাটি ও মাটির মানুষের কাছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।