মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সংসদ সদস্যপদ হারাচ্ছেন।
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিলেই তিনি আর সংসদ সদস্যপদে থাকতে পারবেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়ত হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত হওয়ায় (দুই বছরের বেশি হলেই) সংবিধান (অনুচ্ছেদ ৬৬) ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী (অনুচ্ছেদ ১২) সংসদ সদস্যপদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। রায়ের পর তার সদস্যপদ আর থাকার কথা নয়। এ বিষয়ে ইসির করার কিছুই নেই এখন; সংসদই ব্যবস্থা নেবে।সাখাওয়াত জানান, তবে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদটি (সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্যতা) ইসির জন্য প্রযোজ্য। এ অনুচ্ছেদের ২ (ঘ) উপধারা অনুযায়ী সদস্যপদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত চট্টগ্রাম-২ আসনের এমপি।
দফা (২)-এ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অনূ্যন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে; সংবিধানের ৬৭ অনুচ্ছেদের ১ (ঘ) অনুযায়ী এমন অযোগ্য ব্যক্তির আসন শূন্য করার সুযোগ রয়েছে। (১) কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হইবে, যদি (ঘ) তিনি এই সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন অযোগ্য হইয়া যান। এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধেও আমরা আসন শূন্য করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। স্পিকারকে তা জানিয়েছিও। কিন্তু আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে তা আর হয়নি।
সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার জানান, সাধারণত কোনো সংসদ সদস্য মারা গেলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে (নির্বাচনের জন্য) ইসিকে জানানো হয়। এবারও কার্যপ্রণালী বিধি অনুসরণ করা হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে হিন্দু ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক নিধন এবং নির্যাতন চালানোর দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মঙ্গলবার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অবশ্য সাকার পরিবার বলছে, উচ্চ আদালতে আপিল করবে তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য নবম সংসদ নিয়ে ছয়বারের এমপি হয়েছেন। এই প্রথম কোনো সংসদ সদস্য মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত হলেন। নবম সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৪ জানুয়ারি। ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে।
স্পিকার সংসদকে জানিয়ে গেজেট করবে
সংসদের কার্যপ্রণালী অনুযায়ী, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের (২) দফায় (সংসদ সদস্য থাকার) অযোগ্য হবে কিনা স্পিকার বিষয়টি ইসিতে পাঠাবে।
ইসি সিদ্ধান্তে অযোগ্য হলে আর সদস্য থাকতে পারবেন না ওই এমপি। পরে সংসদ সচিবালয় গেজেট বিজ্ঞপ্তি করে শূন্যপদ পূরণে ইসিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। কার্যপ্রণালী বিধির ১৭৮ (নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ এবং আসন শূন্য হওয়া) ধারায় বলা হয়েছে- (১) নির্বাচনের পর কোনো সদস্য সম্বন্ধে যদি এমন বিরোধ দেখা যায় যে, ৬৬ অনুচ্ছেদের (২) দফায় বর্ণিত অযোগ্যতাগুলোর কোনো একটির কারণে তিনি অযোগ্য বিবেচিত হইবেন কিনা, অথবা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাহার আসন শূন্য হইবে কিনা, তাহা হইলে স্পিকার উক্ত বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করিবেন। (২) যদি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত এই হয় যে, উক্ত সদস্য অযোগ্য হইয়াছেন, অথবা তাহার আসন শূন্য করা উচিত, তাহা হইলে তিনি আর সদস্য থাকিবেন না। সাকা চৌধুরীর রায়ের পর সংসদ সদস্যপদ হারানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বলেন, এখনো তো বিষয়টি শেষ হয়ে যায়নি।
চূড়ান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তখন দেখা যাবে। তারা সংসদের দিকে তাকিয়ে আছেন বলেও জানান তিনি। অবশ্য গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধের অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়ার আগেই দলটির নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে।
এর আগে নবম সংসদ নির্বাচনে হলফনামার শিক্ষাগত যোগ্যতায় অসত্য তথ্য দেওয়ায় সাকা চৌধুরীর সদস্যপদ খারিজে স্পিকারকে অনুরোধ জানিয়েও আইনি সীমাবদ্ধতায় তা আর এগোয়নি। তবে এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দণ্ডিত হওয়ায় সংসদ সদস্য হিসেবে থাকার অযোগ্য হতে হচ্ছে তাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।