আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকারি নির্দেশে ‘গণশ্রাদ্ধ’ বন্ধ

স্বাধীনতার ৪২ বছর পর প্রথমবারের মতো মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য গণশ্রাদ্ধ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আগামীকাল শুক্রবার রমনা কালীমন্দিরে তা হওয়ার কথা। কিন্তু একদিন আগে সরকারী হস্তক্ষেপে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হলো। এর আগে আওয়ামী লীগের আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশ অনুষ্ঠানটি বন্ধে আদালতে যায়।
আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশ ও গণশ্রাদ্ধ ৭১-এর আয়োজকদের পক্ষ থেকে আজ সকালে জানানো হয়েছে, শাহবাগ থানা পুলিশ মৌখিকভাবে আয়োজনটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

তবে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, অনুষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন এ সিদ্ধান্ত সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুব উল আলম হানিফ এ বিষয়ে প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না।
এর আগে আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশের প্রতিষ্ঠাতা মুজিবুর রহমান চিশতী গণশ্রাদ্ধ ৭১-এর আয়োজকদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে। মামলায় অভিযুক্ত ছয়জন হলেন জয়ন্ত সেন, সঞ্জীব চৌধুরী, গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, অরুণ মজুমদার, রিপণ দে ও দয়াময় বিশ্বাস।

ফলে হয়রানির আশঙ্কায় এ আয়োজন থেকে কেউ কেউ পিছিয়ে যেতে থাকেন।
মুজিবুর রহমান চিশতী মামলার আর্জিতে বলেছেন, ‘শহীদ’ শব্দটি শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য ব্যবহার হতে পারে। এ ছাড়া সব ধর্মের শহীদদের জন্য ‘গণপ্রার্থনা’ কর্মসূচিরও বিরোধিতা করেছেন তিনি।
গণশ্রাদ্ধ ৭১-এর আয়োজক কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার সেন বলেন, ‘একাত্তরে তো বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের শহীদ না বললে কী বলব? ভগত্ সিং, ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন কি শহীদ নন? বাংলা অভিধানে শহীদ শব্দটি আছে।

আরবি-ফারসি-হিন্দি-বাংলা সব ভাষার সম্পদ “শহীদ” শব্দটি। গণশ্রাদ্ধের পর সব ধর্মের শহীদদের জন্য রমনা কালীমন্দিরে প্রার্থনা করার কথা। আমরা অনুষ্ঠান করব। আপনারা আসবেন। ’
আওয়ামী ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠাতা মুজিবুর রহমান চিশতীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

তবে সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল হাসান শেখ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আয়োজকেরা সবাই বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। স্বাধীনতার চার দশক পর আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে এই শ্রাদ্ধ করার উদ্দেশ্য কী? এই আয়োজনকে ঘিরে মৌলবাদী বিভিন্ন শক্তি সরকার সম্পর্কে মানুষকে ভুল বোঝাবে। দাঙ্গা-হাঙ্গামার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কোনো মুসলমান রমনা কালীমন্দিরে প্রার্থনায় অংশ নিতে পারে না। ’ জানা গেছে, আয়োজক জয়ন্ত কুমার সেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

খুব অল্প বয়সে তিনি ৪ নম্বর সেক্টর থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

আওয়ামী ওলামা লীগের অপর অংশের সভাপতি ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী বলেন, তাঁরা গণশ্রাদ্ধ আয়োজনের বিরোধী নন। তিনি বলেছেন, ধর্মে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে আল্লাহ ‘রাব্বুল আল আমীন’ অর্থাত্ আল্লাহ সবার। যে কেউ যেকোনো উপায়ে আল্লাহকে ডাকতে পারে। এতে অসুবিধার কিছু তিনি দেখেন না।

গণশ্রাদ্ধ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন: গত ১ সেপ্টেম্বর গণশ্রাদ্ধ ৭১ আয়োজক কমিটি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকেরা বলেছিলেন, অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও নিখোঁজ হিন্দুদের আত্মার শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির লক্ষ্যে হিন্দু শাস্ত্রমতে গণশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় পর্বে, ১৯৭১ সালে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের শহীদদের জন্য সর্বধর্ম গণপ্রার্থনা ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। রমনা কালীমন্দিরে এ অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।

প্রায় এক মাস পর গণশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান চিশতী ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সংবাদ সম্মেলন: গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় হিন্দু মহাজোট দাবি করেছে, গণশ্রাদ্ধ ৭১ অনুষ্ঠানের সঙ্গে তারা জড়িত নয়। মহাজোটের মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় এ কথা ‘চরমভাবে’ সত্য। শুধু খুলনার চুকনগরেই নিহত হয় ১০ থেকে ১২ হাজার হিন্দু। নিকটাত্মীয় না থাকলে বা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান না করলে যেকোনো ব্রাহ্মণ বা গ্রামবাসী বা যেকোনো স্বজাতীয় করতে পারে। শ্রাদ্ধ মানে শ্রদ্ধার সঙ্গে অর্পণ।

এটি একটি মহান কাজ। কিন্তু ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় গণশ্রাদ্ধের সঙ্গে তাঁরা নেই।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট দাবি করেছে, এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত আছেন জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কানুতোষ মজুমদার। কিন্তু প্রথম আলো ডটকমকে কানুতোষ মুঠোফোনে বলেন, তাঁর বাড়িতে গণশ্রাদ্ধ ৭১-এর আয়োজন নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এ কর্মসূচির সঙ্গে তিনিও যুক্ত নন।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.