মহাকালের পথ যাত্রায় ক্ষণিকের যাত্রি, এই পথে হাঁসি কান্না আনন্দ বেদনা.... !
বৃষ্টি সবে শেষ হয়েছে । বৃষ্টি হতে বাঁচতে যারা ছাউনি হিসেবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঠাই নিছে তারা খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে পথে যাচ্ছে । আকাশের অবস্থা ভালো না ,মেঘের গর্জন আর কালো মেঘের গতি বেগ আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামার উপক্রম করছে । সবাই ছুটছে যেন একটি ট্রেন মিস করে ফেলছে পরবর্তী ট্রেনে বাড়ি যেতে হবে । সবার দৃষ্টি নিজ নিজ গন্তব্য স্থলে ।
রুদ্র সেরকম তাড়া নেই, নীলিমার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। যেতে আর ভাল লাগছে না । সে দাড়িয়ে ব্যস্ত মানুষ গুলো দেখছে । মানুষের ব্যস্তটা দেখতে ভালো লাগছে তার । হাতের সিগারেট শেষ পর্যায়ে ।
শেষ সিগারেট দিয়ে আর একটি ধরাল রুদ্র । নিকোটিনের স্বাদ ও মাঝে মাঝে বিস্বাদ হয়ে যায় , কয়েকটা সিগারেট জ্বালালেও স্বাদ পাওয়া যায় না । রুদ্র বুঝতেছে না বাসায় ফিরবে নাকি অনন্ত কাল দাড়ায় থাকবে । স্ট্যাচুর ন্যায় অনন্ত কাল দাড়ায় থাকা গেলে মন্দ হতোনা , মানুষ গুলোর উদ্দেশ্য হীন ব্যস্ততা দেখা যেত । পাশে থাকবে নীলিমার স্ট্যাচু ।
হয়ত তার এসব ভালো লাগবে না । মেয়েরা অনেক গোছালো হয় , অগোছালো মানুষ গুলরে ধরে ধরে সাজয় দিবে হয়তো । মেঘের গর্জন বেড়েয় চলছে , কেও যেন তাড়া করছে । প্রকৃতির নিয়ম গুলো অদ্ভুত ।
রুদ্র ইকোনমিক্স এ অনার্স শেষ করে চাকরির আশায় স্বপ্ন দেখে ।
চায়ের দোকানে সিগারেট খেয়ে ধুয়া উড়িয়ে আর আড্ডাতে মেতে থাকা তার প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে । বন্ধু সুলভ হওয়ায় তার উপর সবাই মুগ্ধ । নীলিমার সাথে প্রথম পরিচয় তাদের ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে । প্রথম দেখায় প্রেম । অনেক দৌড়া দৌড়ীর পর তাদের রিলেশন আশার মুখ দেখে ।
নীলিমা বৃষ্টি দেখছে । বৃষ্টির শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও বৃষ্টির কিছু টা রেশ থেকে যায় । নীলিমার গান গাইতে ইচ্ছে করছে । গুন গুন করে গান গাওয়া শুরু করে দিল । ইদানীং বাসায় অনেক লোক আসছে নীলিমা কে দেখতে ।
নীলিমা একা একা থাকতে ভালোবাসে । লোক গুলোর কারনে সস্থি পাচ্ছে না সে। ডাক্তার বলে দিছে নীলিমা হয়তো আর পাঁচ ছয় মাস বাঁচবে । তাকে আক্রমণ করেছে মরণ ব্যাধি ক্যানসার । সবাই অনেক আদর করছে ।
মৃত পথ যাত্রিকে আগলায় রাখার চেষ্টা । এ সংসারে সবসময় জোড়া শালিক বসে থাকতো । হয়তো কিছু দিনের মাঝে একটি উড়ে যাবে । নীলিমা অপেক্ষা করে আছে । রুদ্র কখন আসবে এ ভেবে ভেবে কয়েক মিনিট পর ঘড়ি দেখছে ।
রুদ্র কথা দিছে প্রতিদিন একটি বার হলেও দেখতে আসবে । আজ এখনো আসে নি ।
অপেক্ষা আর অস্থিরতা নীলিমাকে গ্রাস করছে । মোবাইল অফ । কল হিস্ট্রি জুড়ে রুদ্র ।
রুদ্র নীলিমার জগতে রংধনু , ভালোবাসা দিয়ে আঁকড়িয়ে রেখেছে নীলিমাকে । ছেলেটি প্রতিনিয়ত আসে । এক সময় দুই পরিবারে সমস্যা থাকলেও এখন তাদের আর কেউ কিছু বলে না । অনেক সময় অনেক কিছুই মেনে নিতে হয় । রুদ্র ভীষণ ভাবে ভেঙে পরেছে ।
রাতে ঠিক মত ঘুমায় না । নীলিমার চোখে তাকাতেয় রুদ্রর চোখ লাল হয়ে আসে । এই বুঝি কেঁদে দিবে । কিন্তু তাকে ভেঙে পড়লে চলবে না । অভিনয়ে কাঁচা হওয়া সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যেতে হয় ।
হয়ত রাতের আধারে নীরবে কেঁদে যাবে । নীলিমা তার অভিনয় বুঝে যায় , কত আর আড়াল করবে চোখের জল । রুদ্র দিকে তাকিয়ে থাকে । মৃত্যুর আগে কিছু সুখ খোজা । সে তার শেষ সৃতির ক্যানভাসে গাড় রঙগুলো দিয়ে আঁকতে চায় রুদ্র কে ।
কিছু অপেক্ষার শেষ হয়না কখনো , নীলিমার অপেক্ষা শেষ হয়ে যাবে একদিন , নীলিমার জায়গায় অন্য কেউ এসে দখল করবে কিন্তু রুদ্রর নীলিমাকে ঘিরে অপেক্ষা শেষ হবে কি !!
সব গোধূলির আকাশ লালচে হয় না , কিছু কিছু গোধূলির আকাশ হয় নীলচে । গাড় মেঘে ঢাকা থাকে এ আকাশ । এ নীলচে অংশ টুকু জুড়ে থাকে কিছু বেদনা । প্রকৃতি হয়তো সবার বেদনা গুলি দিয়ে সাজাতে চায় এ আকাশ । গোধূলির নীলচে আকাশ ..।
। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।