Not for sale
একধিক রাশির মধ্যে গড় নির্ণয়ের সবচেয়ে সহজ এবং বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতিটি হলো মোট রাশির যোগফলকে মোট রাশির সংখ্যা দিয়ে ভাগ দেয়া। যেমন: পাঁচ জন ছাত্র যদি গণিতের একটি পরিক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে যথাক্রমে ৬৮, ৮২, ৭৫, ৯৩ এবং ৭৮ পেয়ে থাকে, তাহলে তাদের গণিতে প্রাপ্ত গড় নম্বর হবে ৭৯.২। ছাত্রদের মোট নম্বর ৩৯৬ কে মোট ছাত্র সংখ্যা ৫ দিয়ে ভাগ করে এই গড় পাওয়া গেলো।
এবার আরেকটি উদাহরনে আসি। মনে করি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দুরত্ব ৩০০ কি.মি.।
এক ব্যাক্তি ঢাকা থেকে ঘন্টায় ৩০ কিমি বেগে গাড়ি চালিয়ে চট্টগ্রামে গেলেন এবং ফিরে এলেন ঘন্টায় ৬০ কিমি বেগে। তাহলে তার গড় গতিবেগ কত হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী কোনো কিছু না ভেবেই বলে বসবে ৪৫ কিমি/ঘন্টা। আসলেই কি তাই? এখানে মোট রাশির সংখ্যা ২, এবং রাশিগুলো হচ্ছে ৩০ ও ৬০। তাহলে ৩০ ও ৬০ এর যোগফল ৯০ কে রাশির পরিমান ২ দিয়ে ভাগ করে তো সহজেই বলে দেওয়া যায় গড় হচ্ছে ৪৫!
এবার তাহলে বিস্তারিত দেখা যাক, সত্যিই কি এই দুই গতিবেগের গড় ৪৫ হয় কিনা। আমরা্ এরই মধ্যে বলেছি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩০০ কিমি।
ব্যাক্তিটি যেহেতু ঘন্টায় ৩০ কিমি হারে গিয়েছেন তাহলে ৩০০ কিমি যেতে তার মোট সময় লেগেছে ১০ ঘন্টা (যেহেতু তিনি ঘন্টায় ৩০ কিমি বেগে গাড়ি চালিয়ে গিয়েছেন তাহলে ৩০০ কিমি পথ পাড়ি দিতে মোটসময় লাগবে ৩০০/৩০ = ১০ ঘন্টা)। একইভাবে তিনি ফিরে আসার সময় মোট সময় লেগেছে ৫ ঘন্টা (৩০০/৬০ = ৫ ঘন্টা)। অর্থাৎ তিনি মোট ৩০০ + ৩০০ = ৬০০ কিমি দুরত্ব পাড়ি দিয়েছেন ১০+৫ = ১৫ ঘন্টায়। তাহলে যাওয়া আসায় তিনি ঘন্টায় গড়ে অতিক্রম করেছেন ৬০০/১৫ = ৪০ কিমি! অর্থাৎ তার গড় গতিবেগ ঘন্টায় ৪০ কিমি। তার মানে হচ্ছে আমরা যে আগে ৪৫ কিমি/ঘন্টা গতিবেগ বের করেছিলাম সেটি ভুল!
কেন এমন হলো? স্বাভাবিক গড়ের চেয়ে পার্থক্য তৈরি হলো কেন? এর একটি ব্যাখ্যা হচ্ছে এই রকম, আমরা আসলে এখানে যদি সময়ের সাপেক্ষে অতিক্রান্ত দুরত্ব হিসেব করি তাহলে তার মোট অতিক্রান্ত দুরত্বকে তিনটি রাশিতে ভাগ করতে পারি।
যেমন: তিনি প্রথম ১৫০ কিমি যান ৫ ঘন্টায় (গতিবেগ ৩০ কিমি/ঘন্টা), দ্বিতীয় ১৫০ কিমি যান ৫ ঘন্টায় (গতিবেগ ৩০ কিমি/ঘন্টা) এবং পরবর্তী ৩০০ কিমি যান ৫ ঘন্টায় (গতিবেগ ৬০ কিমি/ঘন্টা)। এখন এই তিনটি রাশির যদি গড় নির্ণয় করি তাহলে পাই,
অর্থাৎ, দুইটি রাশি না ধরে আমরা যদি তিনটি রাশি ধরে নিই তাহলে প্রকৃত গড় মানটি পাওয়া যাচ্ছে।
কিন্তু কেন আমাদের তিনটি রাশি ধরতে হবে? এর কারন হচ্ছে “weight”। গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় ফেরত আসার চেয়ে দ্বিগুন সময় লাগে তাই এই ক্ষেত্রে ‘weight’ হচ্ছে ২। আর ফেরত আসার সময় ‘weight’ হচ্ছে ১।
একটা খুব সরল উদাহরণ দিয়ে এটা ব্যাখ্যা করা যাক। ধরি একজন ছাত্র দশটি বিষয়ের মধ্যে ৯ টিতে ১০০ তে ১০০ পেয়েছে আর অপরটিতে ৫০ নম্বর পেয়েছে। অর্থাৎ এখানে দু’ধরনের নম্বর আছে। একটি হলো ১০০ আর অপরটি হলো ৫০। তাহলে কি আমরা এখানে রাশির সংখ্যা দু’টি ধরে গড় বের করে ফেলব ৭৫? নিশ্চয়ই তা করব না।
আমরা মোট বিষয় ধরব ১০ টি। ১০০ কে ৯ বার যোগ করব বা ১০০ কে ৯ দিয়ে গুণ করব এর পর এর সাথে আরো ৫০ যোগ করে মোট দশ দিয়ে ভাগ করব। তাহলে এই পদ্ধতিতে তার গড় নম্বর পাওয়া যাবে ৯৫ যা নম্বর সমূহের সঠিক গড়। অর্থাৎ এখানে ১০০ এর weight হচ্ছে ৯ আর ৫০ এর weight হচ্ছে ১।
এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক রাশিগুলোর গড় সবচেয়ে অনায়াসে যেভাবে বের করা যায় সেটি হচ্ছে ‘ছন্দিত গড়’ পদ্ধতি (ছন্দিত গড় নামটি সম্ভবত ১/২, ১/৩, ১/৪, ১/৫, ১/৬, ১/৭, ১/৮ এই ধারা থেকে এসেছে।
এই ধারার অনুপাত অনুযায়ী যদি আমরা একটি গীটারের বিভিন্ন তারে একসাথে বাজাই তাহলে একটি ছন্দিত সুরেলা শব্দ পাওয়া যাবে। দুটি রাশি a এবং b হলে তাদের ছন্দিত গড় ১/a + ১/b থেকে পাওয়া যায়)। তাহলে যদি দুই গতিবেগ a এবং b থাকে এদের ছন্দিত গড় হবে ,
যদি তিনটি রাশি দেওয়া থাকে a,b এবং c তাহলে তাদের ছন্দিত গড়ের মান হবে ,
এই ভাবে এগিয়ে গেলে চারটি রাশির ছন্দিত গড় আমরা পাই,
ছন্দিত গড় নির্ণয়ের সূত্রটি যদি আমরা আমদের গতিবেগ সংক্রান্ত সমস্যাটিতে প্রয়োগ করি তাহলে পাই,
যা আমাদের প্রকৃত গড় মানের সমান।
এখন আমাদের এই সমস্যাটিকে আরেকটু বিবর্ধিত করা যাক। আমরা ধরি লোকটি শনিবারে আমাদের প্রদত্ত গতিবেগে চট্টগ্রামে গিয়ে (৩০ কিমি/ঘন্টা) আবার ফিরে (৬০ কিমি) আসলো।
একই ভাবে রবিবারে সে পুনরায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিল এবং ফিরে আসলো। কিন্তু রবিবার আবহাওয়া কিঞ্চিৎ ঝড়ো থাকায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে একটা বাতাসের প্রবাহ তৈরি হল। অর্থাৎ যাওয়ার সময় লোকটি বাতাসের অনুকূলে একটা অতিরিক্ত গতিবেগ পেল এবং ফিরে আসার সময় এই অতিরিক্ত বাধা অতিক্রম করে ফিরে আসতে হলো। তাহলেকি এই দুই প্রতিকূল ও অনুকূল গতিবেগ কাটাকাটি গিয়ে তার গড় গতিবেগ একই থাকবে? নাকি আগের চেয়ে কম হবে অথবা আগের চেয়ে বেশী হবে? ছন্দিত স্পন্দন এই ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে দেখা যাক। যেহেতু চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় বাতাসের অনুকূলে যাচ্ছেন সেহেতু অতিরিক্ত ১০ কিমি/ঘন্টা তার গতিবেগের সাথে যোগ হয়ে মোট গতিবেগ হবে ৩০ + ১০ = ৪০ কিমি/ঘন্টা।
আসার সময় বাতাসের প্রতিকূলে থাকায় গতিবেগ হয়ে যাবে ৬০ – ১০ = ৫০ কিমি/ঘন্টা।
অতএব গড় গতিবেগ =
কিমি/ঘন্টা।
অর্থাৎ গড় গতিবেগ বেড়ে যাচ্ছে! এটা অবশ্য অনুমান করা যায়, কেননা তিনি বাতাসের অনুকূলে অনেক বেশী সময় গাড়ি চালানোর সুযোগ পেয়েছেন। আর ফিরে আসার সময় গাড়ী চালাতে হয়েছে কম সময়ের জন্য, যার ফলে বাতাসের বাধা বেশী সময়ের জন্য অনুভূত হয় নি। কিন্তু যদি এমন হয় যে তিনি যেই গতিতে গাড়ি চালিয়ে গিয়েছেন এবং একই গতিতে ফিরে এসেছেন এবং বাতাস একই ভাবে বহমান, তাহলে গড় গতির পরিণতি কেমন হবে? ঘন্টায় নির্দিষ্ট পরিমান গতিবেগ ধরে নিয়ে ছন্দিত গড়ের সূত্র থেকে হিসেব করেই ফেলুন না!
[লেখাটি ইতিপূর্বে বিজ্ঞানব্লগে ] প্রকাশিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।