নুরুলের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রাজা চাপিতলা গ্রামে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বছর পাঁচেক আগে জীবিকার তাগিদে ২০ বছর বয়সে ঢাকা এসেছিলেন নুরুল, যিনি আজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রায় ঘোষণার পরপরই বঙ্গবাজারে নুরুলের কভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
আগুনে গুরুতর আহত নুরুলকে তাৎক্ষণিক ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের পঞ্চম তলায় স্থান হয়েছে তার।
বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল ছেলের বিছানার পাশেই বসে আছেন মা আমেনা খাতুন (৫৫)। তখনো শরীরের ক্ষতস্থানে ড্রেসিং চলছিল। ডান হাত, ডান পায়ে ব্যান্ডেজ। বা পা-ও ব্যান্ডেজে মোড়ানো।
কথা প্রসঙ্গে জানা গেল এই পরিবারের সংগ্রামের নানা কথা।
আমেনা বলেন, “ছোটবেলায় নুরুলের বাপ মারা যাওয়ার পর ওরে অনেক কষ্ট কইরা বড় করছি। সংসার চালাইতে রিকশা চালাইতো নুরুল। তবুও মুখে কোনো কষ্টের কথা কখনোই কইতো না। ”
কথার ফাঁকেই ছেলের দিকে তাকাচ্ছিলেন তিনি।
শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে আবারো বলতে শুরু করলেন।
“আগে এলাকায় রিকশা চালাইয়া সংসার চালাইলেও পরে গাড়ি চালানো শিখে। এরপর পরই শহরে চইল্লা যায়। প্রতিমাসে বেতন পাইলেই কম কইরা হইলেও পাঁচ হাজার টাকা দিত। ”
আমেনা জানান, মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তির পর নুরুলই তাকে ফোনে পুড়ে যাওয়ার কথা জানায়।
“ফোন কইরা অয় কয়- মা, আমার গাড়িতে আগুন দিছে। শরীর পুড়ছে, চিন্তা কইরো না। আমি বাইচ্চা আছি। ”
এরপরই কুমিল্লা থেকে বিকেলের বাসে ঢাকায় রওনা হয়ে রাতে হাসপাতালে পৌঁছান আমেনা।
তিনি বলেন, “সারা রাত পোলাটা যন্ত্রণা ছটফট করছে।
আমি মাটিতে শুইয়ে কানছি। পোলা দেইখা কয়- মা কাইন্দা লাভ নাই, গরীবগো কপালে কষ্ট লাইগা থাকে। ”
আমেনা বলেন, “প্রথমদিন কাভার্ড ভ্যান মালিক আখতার হোসেন চিকিৎসার জন্য টাকা দিছিল। উনি ভালোই সাহায্য সহযোগিতা করছেন। আমরাও সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।
কিন্তু সরকারি সহযোগিতা না পাইলে ওর চিকিৎসা হইবো না। ”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদককে দেখে নুরুল বলেন, “ভাই অল্পের জন্য জীবনটা রক্ষা পাইছে। ভ্যান থেকে বের হতে কয়েক মিনিট দেরি হলেই মারা যাইতাম। ”
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি জানতে চাইলেন, তার কী দোষ, কী অপরাধ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জন ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, নুরুলের আবস্থা আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো বলা যায়।
তবে সাত দিন না যাওয়া পর্যন্ত আগুনে পোড়া রোগীকে আশঙ্কামুক্ত বলা যায় না। আগুনে পোড়া রোগীর সুস্থ হতে সময় লাগে।
এদিকে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এই পরিণতিতে আয়-রোজগারহীন হয়ে পড়েছে নুরুলদের পরিবার।
বড় ভাই তাজুল ইসলাম গ্রামে অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করে। একমাত্র বোন চাপিতলা ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
আর ছোট দুই ভাইয়ের কেউই এখনো উপার্জনে আসেনি। মূলত নুরুলের পাঠানো টাকাতেই চলতো এই পরিবারটি।
নুরুলের মা আমেনা জানান, “এখন নিজেরা ভীষণ অসহায় হইয়া পরছি। কেমনে সংসার চালামু কিচ্ছু বুজতে পারতাছি না। অর চিকিৎসার টাকাও জোগাড় করতে অইবো।
”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।