চিন্তার রাজ্যে ঘুরে বেড়াই তাই চিন্তা করতে ভালবাসি বর্তমান সময়ের একটি বার্নিং ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে যুদ্ধাপরাধ ওরফে মানবতাবিরোধী অপরাধ। আসলে যাদেরকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে তাদের অতিত-বর্তমান নিয়ে কিছু জেনে আসা যাক।
“গনহত্যার সহযোগী সংগঠন জামায়াত”, “যতদ্রুত বাংলাদেশের মানুষ জামায়াতকে আস্তাকূড়ে ফেলবে” জাতীয় লেখা থেকে সহজে অনুমান করা যায় আসলে কারা কি চায়... অর্থাৎ প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নাকি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জামায়াত এর নির্মূল। জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী বিষয় কিছু বলতে বা লিখতে গেলে কিছু প্রশ্ন চলেই আসে। যেমনঃ
প্রথমত, স্বাধীনতাবিরোধী কি তাহলে শুধুই জামায়াত? যদি হয়েই থাকে শুধু জামায়াত তাহলে ৩০ লক্ষ বাঙ্গালী হত্যা তাদের মাত্র কয়েক হাজার কর্মীই করেছে!!! তাও আবার সারা দেশে???
দ্বিতীয়ত, জামায়াত যদি স্বাধীনতা বিরোধী হয়েই থাকে তাহলে জনসমর্থন পেয়ে তারা তাদের স্বয়ং নিজের এলাকা থেকে বারবার সাংসদ নির্বাচিত হন, তাও আবার সেই এলাকারই গনমানুষ দ্বারা???
তৃতীয়ত, যুদ্ধাপরাধ যদি করেই থাকে তাহলে সেই যুদ্ধাপরাধিদের বিচার কে মানবতাবিরোধী বিচার বলে চালানোর কারন কি?
চতুর্থ, বাংলাদেশ এর এক নম্বর সমস্যা কি যুদ্ধাপরাধী? যুদ্ধাপরাধ বিচার করলেই বাংলাদেশ এর সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে!!!! প্রশ্নটা আসাটাই স্বাভাবিক।
কারন একজন মন্ত্রী বললেন সেইদিন যুদ্ধাপরাধ বিচার করলেই নাকি বাংলাদেশের সব সমস্যাই অনেকাংশে সমাধান হয়ে যাবে।
আসুন তাহলে একবার ইতিহাস সফর করে আসি। স্বাধীনতার ৪০ বছর হয়ে গেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তার কন্যা তথা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি কতবারই না ক্ষমতায় গেল তারাই বা বিচার না করে বরং তাদের সহায়তা নিয়েছে কেন? ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জয়লাভ করলে তৎকালীন জামায়াত আমীর মাওলানা মওদূদী পাকিস্তান সরকার কে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে শেখ মুজিব এর সাথে একত্রে ব্যপক চেষ্টাও করেছিলেন। এখানে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন বিশেষ করে তা হচ্ছে শেখ মুজিব কখনি স্বাধীনতা দাবী করেন নি। যদি তিনি সেই সময় স্বাধীনতার দাবীই করতেন তাহলে তিনি নির্বাচন করতে যেতেন না; ক্ষমতা হস্তান্তর এর জন্য বসে থাকতেন না।
বারবার পাক শাসকদের সাথে বৈঠকে বসার প্রস্তাব করতেন না। তিনি চেয়েছিলেন স্বায়ত্বশাসন। তার ৭ ই মার্চের আগে দেয়া বক্তব্যই তার ঊপযুক্ত প্রমান। বরং পশ্চিম পাকিস্তান কে অস্ত্রসস্ত্র, অতিরিক্ত সৈন্য এবং রসদ এদেশে এনে মজুদ করতে সহায়তা করা হয় সময় বিলম্বের মাধ্যমে।
স্বাধীনতাবিরোধী যে কেবল জামায়াত নয় তা মনে হয় বেমালুম ভুলে গেছেন রাজনৈতিক দল বিশেষের এবং ওপারের টাকায় চলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম সহ “জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী” বলে ধোয়া তোলা ব্যক্তিগন ।
বর্তমান সরকারের শিল্পমন্ত্রী দিলিপ বড়ুয়া সহ সকল বামপন্থী দলই যে ছিল স্বাধীনতাবিরোধী তা কি কারও অজানা? নাম সর্বস্ব দল সাম্যবাদী দল এর দিলীপ বড়ুয়া সহ পতিত বামপন্থি দল গুলো যে ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হলে দলের জরুরি বৈঠক ডেকে স্বাগত পর্যন্ত জানিয়েছিল তা হয়ত অনেকে ভুলেই গেছে। আজকে যখন তারা আওয়ামী লীগ সাথে সরকার গঠন করল তখন তারা দুধে ধোয়া তুলসি পাতা হয়ে গেল!!!সবাই বলে রাজাকাররা খারাপ,তাদের বিচার হওয়া উচিত। যেইনা মন্ত্রী মহাশয় বললেন রাজাকাররা সবাই খারাপ না, যারা 'মানবতাবিরোধী' কাজ করেছে তারা খারাপ, অমনি সব্বাই এমনকি পত্রিকাগুলা পর্যন্ত বোল পালটে ফেলল? এই কথাটা জামায়াত বলছে কত আগে থেকে, তখন এরাই বলসে 'হেঃ হেঃ আত্নপক্ষ সমর্থন'।
দ্বিতীয়ত, জামায়াত যদি লুটতরাজ, ধর্ষন, অগ্নিসংযোগ করে থাকে, তাহলে সেইসব নেতারা তাদের নিজ এলাকা থেকে বারবার (মাও মতিউর রহমান নিজামী ২বার, আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ৩ বার, মাও আব্দুস সুবহান ৩ বার) নির্বাচিত হলেন? তাও আবার নিজ নিজ এলাকা থেকে!!! আমরা জানি তাদের সমৃদ্ধ রাজনৈতিক ইতিহাস এর কথা। প্রথমবার এর মত নির্বাচন করে ১৯৮৬ সালে ১০ টি আসন তারা কিভাবে পায় যেখানে মাওলানা আব্দুস সুবহান ও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তাহলে কি যে মা হারিয়েছিল তার সন্তান কে, যে বোন হারিয়েছিলেন তার ইজ্জত, তারা তাদের সব কষ্ট ভুলে গিয়েছিলেন মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে!!! এছাড়া রাজাকার বাহিনীর যারা ছিল তারা সবাই স্বাধীনতার পরে পালিয়ে গিয়েছিল আবার কেউ মরে গিয়েছিল মুক্তিবাহিনীর হাতে। তাহলে সাঈদী, নিজামী, মুজাহিদ কারো বেচে থাকার কথা নয়। যদি পালিয়েই থাকতেন তবে ফিরে এসে আর যাই হোক নির্বাচন করতে পারতেন না। সেখানে তারা নির্বাচন করলেন, জয়লাভ করলেন, সংসদে গেলেন তাও আবার একক ভাবে (১৯৮৬ সালে ১০ টি, ১৯৯১ সালে ১৮ টি, ১৯৯৬ সালে ৩ টি) !!!!!!!!!! তারা যে জনপ্রতিষ্টিত একটি দল তা বোঝা যায় তাদের সাংসদীয় ইতিহাস থেকে। ১৯৮৬ থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে তাদের আসন সেই কথাই বলে।
যেখানে বামদের আসন বলতে আওয়ামীলীগ এর দান করা কয়টি (১৯৭৩-২০০৮) ছাড়া। যাদের এমন সাফল্য দেখে হিংসা হয় তারাই এমন জঘন্য মিথ্যাচার করতে পারে।
বিশ্বের এমন কোন ইতিহাস আছে কিনা যেখানে “যুদ্ধাপরাধের” বিচার করতে করতে সেটা “মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের বিচার” বলে চালানো হয়। এর মূল কারন হচ্ছে যুদ্ধাপরাধ এর নামে বিচার করতে গেলে সে আওতায় তাদের শাস্তি দিতে এমন কি মিথ্যা প্রমান ও দিতে পারবে না। তাই মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের অজুহাত।
কারন তাদের কে শাস্তি দিতেই হবে যে। তাও আবার ব্যক্তি নয় জামায়াত কে!!!
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ দাবিদার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেল কতবার। তখন প্রয়োজন পড়েনি যুদ্ধাপরাধের বিচার করার। কারন তখন তো তারা আওয়ামিলীগ এর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল না। তখন একসাথে বসে চা পান করেছেন, মতিঊর রহমান যখন আক্রান্ত হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন তারই আপ্ন ফুফাত ভাই শেখ সেলিম তখন তিনি যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না!! ১৯৯৬ এর সংসদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে গোলাম আযম এর বাড়ি প্রতিনিধি প্রেরন করেন হাতে পায়ে পড়ে ভোট ভিক্ষা চান তখন তিনি যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না ,যখন কেয়ারটেকার আন্দোলন চলছিল তখন জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল মতিঊর রহমান নিজামী র সাথে এক টেবিলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তখন মনে পড়েনি যুদ্ধাপরাধের কথা।
থাকবেই বা কেন তখন তো পেয়েছিল অন্যতম রাজনৈতিক মিত্র হিসাবে। এসবই হল রাজনৈতিক কার্যকারন। আসল যুদ্ধাপরাধী বিচার তাদের লক্ষ্য নয়। আসল লক্ষ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন করা।
সর্বশেষ, স্বাধীনতা যুদ্ধ করে আমাদের এই দেশ স্বাধীন করেছেন যে স্বপ্ন দেখে, আমরা তার বাস্তবায়ন করেতে পেরেছি কতটুকু তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
যুদ্ধাপরাধ আমাদের এক নম্বর সমস্যা নয়। আমরা সাধারন জনতা চাই সুন্দর বাসযোগ্য একটি পরিবেশ। যেখানে অন্তত তিন বেলা মানুষ খেয়ে বাচতে পারবে। যেখানে থাকবেনা শোষন, অধিকারহরন, লাঞ্ছনা, বঞ্ছনা। পরস্পর হানাহানি মুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম, স্বাধীন, স্বকীয় একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র।
আমাদের প্রধান সমস্যা বিদ্যুত, গ্যাস সংকট, কর্মসস্থান অভাব, অর্থনৈতিক অচলাবস্থা। অদূরদর্শি তল্পিবাহি পররাষ্ট্রনীতি আমাদের ভোগাচ্ছে বহু জনম ধরে আরো হয়ত ভোগাবে যুগযুগ ধরে। যার ভয়াবহ পরিনাম ফারাক্কার মরন বাধ এর চেয়েও ভয়াবহ। আমরা সেই বিষয় কে এড়িয়ে যাচ্ছি মনের অজান্তেই।
একজন ব্লগার এর খেদোক্তি দিয়েই শেষ করছিঃ
“গেরিলা' দেখলাম সেদিন।
এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যূদৃশ্যের পর মনে হইলো, ভালো হইসে মরে গেসে। বেঁচে থাকলে রক্ষীবাহীনির হাতে মরা লাগতো, তা-ও হয়ত রাজাকারের অপবাদ নিয়ে”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।