আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামপাল ও সুন্দরবনঃ লংমার্চ তাহলে ঐ দিকে যায় কেন?



রামপাল ও সুন্দরবন নিয়ে ব্যাপক হৈ চৈ দেখে ভাবলাম আমিও একটা পক্ষ নেই, লিখি দু-চার লাইন। যে কথা ভাবা, সেই কাজ। কয়েকটা পোষ্ট পড়ে মনে হল আমার একটা নিজস্ব মত আছে। সো, লিখে ফেললাম পটাস করে, দিলাম পোষ্ট, কোন ভাবনা চিন্তা না করে। পোষ্ট দিয়েই পড়লাম বিপদে! দেখি আমাকে গালি দেওয়ার একটা প্রতিযোগিতা চলছে।

প্রথমেই শক্টড হলাম! আমি আসলে ব্যক্তিগত জীবনে এত গালাগালি কখনো করিনি শুনিনিও। বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডাবাজিতে কিছুটা গালাগালি করার ও শোনার অভ্যাস ছিল এবং তা এখনোও আছে। তবে এখানকার ব্যাপারটা একেবারেই ভিন্ন! যদিও শুনেছিলাম আগেই এই বিষয়ে। তবে বুঝলাম শোনাকথা ও বাস্তবে এর প্রয়োগের মধ্যে বিস্তর ফারাক। যাকগে ... “যে গালি দিবে, সেটা তার মুখেই থাকবে” ছোটবেলায় বাবা-মা’র মুখে শোনা এই বানীটাকে মূলমন্ত্র হিসেবে নিয়ে, ব্লগিং করতে থাকলাম, উত্তর দিতে চেষ্টা করলাম সবার প্রশ্নের।

সাধ্যমত! এবার আসি মুল প্রসঙ্গে... অনেকের আচরণে মনে হচ্ছে, পৃথিবীতে একমাত্র আমরাই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বানাচ্ছি! কিন্তু ঘটনাটা তা নয়, আসুন দেখি নিচের তথ্যভিত্তিক ছবিটা কি বলে? উপরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে চীন ২০১০ সালে পৃথিবীর মোট কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩৭.৬০% (৩২ লক্ষ ৭৩ হাজার গিগাওয়াট) উৎপাদন করেছে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আর তারপর আছে আমেরিকা, তারা করেছে ২২.৯০%, আর ভারত করেছে ৭.৫%! এখানে আমাদের কোন অবস্থানই নেই। এবার আমি গুগলকে প্রশ্ন করলাম, পৃথিবীতে কতগুলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে? উত্তর পেলাম নিচের চিত্র আর লিঙ্কটা ! আসুন দেখি এটা কি বলে ... পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ২,৩০০টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে যা আবার ৭,০০০ ইউনিটে বিভক্ত। এরমধ্যে এক চীনেরই ৬২০টা কেন্দ্র অর্থাৎ ২৬%! আর রামপাল যদি আমরা বানাতে পারি তাহলে এটা হবে আমাদের দ্বিতীয় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এবার দেখা যাক, পৃথিবীর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির উৎস কি? কি? উপরের চিত্রে পাই, পৃথিবীর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে জ্বালানি হিসেবে কয়লার অবদান ৪১%, তারপরে আছে গ্যাস ২১%, জল ১৬%, আণবিক ১৩%, তেল ৫% (২০০৮ সালের তথ্য অনুযায়ী)। এবার দেখা যাক পৃথিবীর কোন কোন দেশ সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) বায়ুমণ্ডলে ছাড়ে? চিত্রে দেখা যাচ্ছে, চীন এই গ্যাস ছাড়ছে ২৮.৬০%, আমেরিকা ছাড়ছে ১৬.৬০%, ভারত ৫.৬০% তারপর আর সবাই ... আর বাংলাদেশ ছাড়ছে মাত্র ০.৩৬% এবার দেখা যাক, পৃথিবীর কোন কোন দেশ সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপাদন করছে? এখানেও দেখা যাচ্ছে চীন সেরা।

চীন এই গ্যাস ছাড়ছে ১৬.৪০%, আমেরিকা ছাড়ছে ১৫.৭০%, ভারত ৪.২০% তারপর আর সবাই ... আর বাংলাদেশ কতটুকু এই গ্যাস ছাড়ছে তা লিঙ্কে পাইনি, তবে সেটা হলে হবে খুবই নগণ্য। আমরা জানি, বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বার্ননিং ইস্যু হলো বৈশ্বিক উষ্ণতা। আর এই উষ্ণতার জন্য সবচেয়ে দায়ী হল কার্বন ডাই অক্সাইড ও গ্রিনহাউজ গ্যাস। যা আসে মেইনলি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে। আর এর কারনে পৃথিবীর আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে।

আসুন দেখা যাক, এই বদলে কার কি ক্ষতি? পৃথিবীর আবহাওয়া বদলের কারনে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়বে ৪৫ সেঃমিঃ থেকে ১ মিটার পর্যন্ত। যার কারণে সমুদ্রের নিকটবর্তী দেশগুলো সবচেয়ে বেশী খতিগ্রস্থ হবে। এবার ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকা দেখা যাক সাথে: ১) বাংলাদেশ ২) সুদান ৩) সাইবেরিয়া ৪) অস্ট্রেলিয়া ৫) মায়ানমার তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভুগবে বাংলাদেশ কারণ ছোট ভূমি এবং অধিক জনসংখ্যা। এই বৈশ্বিক উষ্ণতার কারনে বাংলাদেশের ১০% ভূমি সাগরে তলিয়ে যাবে যদি সমুদ্র জলের উচ্চতা ৪৫ সেঃমিঃ বৃদ্ধি পায়। আর যদি সেটা ১ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, তাহলে তলিয়ে যাবে ২১% ভূমি, অর্থাৎ বাংলাদেশের ৫ ভাগের একভাগ।

সাথে বোনাস হিসেবে থাকছে মহা সাইক্লোন, বন্যা, খরা আরও কত কি! একদম ফ্রি ! উপরের তথ্য উপাত্ত থেকে আমরা দেখতে পাই- বিদ্যুৎ উৎপাদনে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয় কয়লা, যা বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪১%! আর পৃথিবীর মোট কয়লা বিদ্যুতের মধ্যে চিন একাই উৎপাদন করছে ৩৭.৬০%! পৃথিবীর ২,৩০০টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে চীনের একারই হলো ৬২০টা, যা মোটের উপর ২৬%। অপরদিকে, বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী কার্বন ডাই অক্সাইড সবচেয়ে বেশি ছাড়ছে চীন যা ২৮.২৬%, গ্রিন হাউজ গ্যাস ছাড়ছে ১৬.৬০% এখানেও চীন এক নম্বর। অর্থাৎ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে চীন আর সবচেয়ে কম ক্ষতি করছে বাংলাদেশ। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতার কারনে সবার আগে ডুববে কে? এক কথায় উত্তর হলো, বাংলাদেশ! তাহলে বাংলাদেশ ডোবার জন্য কোন দেশ সবচেয়ে বেশী দায়ী? কেন? সেটা হল চীন। আর বাংলাদেশের কোন এলাকাটা সবচেয়ে আগে ডুববে? কেন দক্ষিণাঞ্চল! কারণ এই অঞ্চলই হল সমুদ্রের সবচেয়ে কাছে।

এবার বলুনতো, সেই অঞ্চলে কি আছে? কেন, সেখানে আছে আমাদের সকলের নয়নমণি আর বেঙ্গল টাইগারের খনি- সুন্দরবন? তাহলে সবার আগে ডুববে কে? কেন সুন্দরবন! তাহলে সুন্দরবনকে সমুদ্রে ডোবাচ্ছে কে? কেন চীন? তাহলে বলুনতো, লংমার্চ রামপালের দিকে যায় কেন? সুন্দরবনকে বাঁচাতে চাইলে তো সেটা হওয়ার কথা ছিল উলটা দিকে? মাথা চুল্কায়েন না? উত্তর দেন? তাহলে এই লংমার্চের মানে কি? কেন রাজনীতি আর পেটনীতি! তাহলে সুন্দরবন? ও হো! সেটা একটা উপলক্ষমাত্র! জয়তু রাজনীতি! আমি এর মধ্যে নেই! ১০/০৪/২০১৩, রাতঃ ৯.০০

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।