আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্যালেন্ট পুল

যারা বলে প্রতিভাবানদের কোন দেশ নেই, জাতি নেই তারা ভুল বলে। কিছু প্রতিভা আছে নির্দিষ্ট দেশ, নির্দিষ্ট জাতির জন্য। মাছ ধরার যে সহজাত প্রতিভা জাপানি বা নরওয়েজিয়ানদের তা স্বভাবতই পাওয়া যাবে না আফগান বা নেপালিদের। যেমন ধর্ম প্রতিভার কথা বললেই মনে পড়ে মধ্য প্রাচ্য, প্রযুক্তি প্রতিভায় জাপান-জার্মানি কিংবা শিল্পপ্রতিভায় ফ্রান্সের কথা। যুদ্ধ করার প্রতিভার কথা বললে আমাদের প্রথমেই মাথায় আসে আমেরিকার কথা।

তার মানে এই নয় যে অন্য কোন দেশের যুদ্ধ প্রতিভা নেই কিংবা আমেরিকার অন্য কোন প্রতিভা নেই। আমাদেরও অনেক প্রতিভা আছে। এরই মাঝে কিছূ প্রতিভা আছে যাতে আমরা বিশেষায়িত। টানা চারবার (?) প্রথম হয়ে একটা প্রতিভাতো আমরা একান্ত আপন করেই নিয়েছিলাম। একেবারে প্রথম হতে না পারলেও এখনও কিন্তু আমরা খুব একটা খারাপ করি না।

কেন আমরা এই প্রতিভায় অদ্বিতীয় দুএকটা উদাহরণ তা ভালো বোঝাতে পারে। সাভারে ভবনধ্বসে আহত নিহত মানুষের সাহায্যে অনেকেই যে যেভাবে পারছে এগিয়ে আসছে। এর মাঝেও প্রতিভাবানরা বসে নেই। বিজিএমইএ-এর প্যাড-সিল ও রশিদ নিয়ে একদল প্রতিভাবান মাঠে নেমে গেছে। তারা বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা এবং অফিস-আদালত থেকে বিজিএমইএ’র নামে অর্থ সাহায্য তুলছে।

ধরা খাওয়ার আগ পর্যন্ত গত তিন-চার দিনে নিশ্চই একটা ভালো কালেকশনই হয়েছে। অমুক বাঁচতে চায়, তমুকের দুইটা কিডনিই নষ্ট এইসব বলতে বলতে শাহবাগ, মগবাজার, গুলিস্তান এরকম চৌদ্দটা পয়েন্টে লোক দাড় করিয়ে দিয়েই নাকি মাসে অর্ধকোটি টাকা আয় করা যায়। কত মাথা যে আছে এত সুন্দর বুদ্ধির! আমাদের দেশে প্রতিভাবানদের অনেক সুযোগ। যুবক, ডেসটিনি, নামে বেনামে কো-অপারেটিভ, ডুলেন্সার, ইউনিপে টু ইউ, সোনা কেনা, গাছ কেনা এরকম হাজারো হায় হায় কোম্পানীর কোন অভাব নেই। বা অত আয়োজনেরই বা কী প্রয়োজন? ফোন করে জ্বীনের বাদশা বলে ঠিকমতো পরিচয় দিতে পারলেও চলে।

একটু প্রতিভার ছোয়া থাকলে তরতর করে এগিয়ে যেতে কোন বাধা নেই। প্রতিভাবানরা তো আমাদের দেশে নতুন পদ্ধতিতে বিল্ডিং বানানো শুরু করেছিল। তারা নাকি সিমেন্টের বদলে ময়দার ব্যবহার শুরু করেছিল। গবেষণা শেষ হবার আগেই রানা প্লাজার মতো একটা ঘটনা ঘটে গেল। তবে আমদের দেশ তোমাদের দেশ বলে কোন কথা নয়।

প্রতিভা যার আছে সে সফল হবেই। সাধারণত সফলতার আলটিমেট উদ্দেশ্যতোই কিছু টাকা বানানো। আর যে কিছু টাকা বানিয়ে ফেলেছে আমাদের দেশের মতো এত সুখ সে পৃথিবীতে কোথাও পাবে না। আপনার গার্মেন্টস ধ্বসে পড়ে চার-পাঁচশত শ্রমিক মরেছে তো কী হয়েছে? হোক না আপনি তাদের বেতন আটকে দেবার ভয় দেখিয়ে ডেকে এনেছেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সাথে আপনার সংগঠনের নেতাদের বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে গ্রেফ্তার করার জন্য খুজে বের করা যাবে না। আর বৈঠক যেহেতু একটা হয়েছে, টাকাওয়ালাদের সংগঠনের নেতারা তো আর খালি হাতে ফিরবে না।

অতীত তা বলে না, আপনারা নিশ্চিন্তে আত্মসমর্পণ করতে পারেন। অতীতে দু-একজন যাও বা সাজা ভোগ করেছে, তারা বিজিএমইএ-এর সদস্য ছিল না। আপনার টাকা থাকবে, তবু আপনাকে সাজা ভোগ করতে হবে এত বড় পাষন্ড আমার দেশ নয়। দিনে দুপুরে খুন করলেও তদন্তে আপনার নাম পাওয়া যাবে না। একটা এক সদস্য, দুই সদস্য, তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হবে।

কমিটি রিপোর্ট দেবে না। কমিটি রিপোর্ট দেবে, জনগণ তার কিছু জানতে পারবে না। জানতে পারবে কী করে, এরই মাঝে ঘটে যাবে আরও ঘটনা। আরও চাঞ্চল্যকর। তাজরিনের মালিক ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঘুরে বেড়াবে নিউওয়েভ-ফ্যানটমের মালিকরাও।

দিব্যি সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকবে তানভীর-রানা এবং তাদের অগ্রজ-অনুজ এবং সহযোগী, সহকারী এবং সতীর্থরা। এটাতো আমি ফাইনাল সুবিধার কথা বললাম। এছাড়াও আছে হাজারো সেমিফাইনাল, কোয়ার্টার ফাইনার সুবিধা। আপানি টাকা কামাচ্ছেন, ট্যাক্স দিতে হবে না। যারা গোণা টাকার চাকরি করছেন তারা ট্যাক্স দেবে।

যাদের অনেক টাকা তাদের ট্যাক্স ফ্রী। অনেক টাকা জমতে জমতে একটু কালচে হয়ে যাবে, তখন সরকার একটা প্যাকেজ দেবে, আর আপনারা নামমাত্র মূল্যে সেই কালচে টাকাগুলোকে ঝকঝকে পরিস্কার করে ফেলবেন। সেই টাকা দিয়ে গ্রামে একটা স্কুল করবেন। গ্রামবাসী আজীবন কৃতজ্ঞচিত্তে আপনার নাম স্বরণ করবে। একটা মসজিদ-মাদ্রাসা করে দিলেন, আপনার নামে বিশেষ মোনাজাত হবে, আপনি হজ্ব, যাকাতে খরচ করলেন।

আপনার ইহকাল-পরকাল দুইটাই নিশ্চিত। প্রতিভা টাকা আনে, আর টাকা আনে নিশ্চয়তা। তবে সবচেয়ে বড় প্রতিভা বোধ হয় রাজনৈতিক দলে ভিরে যাবার প্রতিভা। এই একটা প্রতিভাই বাকি সকল প্রতিভার উদ্ভাবক, ধারক ও বাহক। আমরা যারা প্রতিভাহীন তাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে একজন দুজন দৃ®কৃতিকারীকে কোন সংগঠনের আশ্রয় না দিলে সংগঠনের ভাবমূর্তি বাড়ে না কমে? কিন্তু যারা প্রতিভাবান তারা ভাবেন কোন একজনকেও যদি অপরাধী হিসেবে তাহলে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে।

আমরা বাঙ্গালীরা প্রয়োজনে জীবন দেব, কিন্তু মান দিতে পারব না। আমাদের সংগঠনগুলোও তেমনি, জীবনের চেয়ে ভাবমূর্তি তাদের কাছে বড়। এখানে অবশ্য জীবনটা তাদের নিজের না, অন্যের। আশার কথা একটাই, তা হল, প্রতিভা গতিশীল। সবসময় একজায়গায় থাকে না।

সাম্রাজ্যবাদের যে প্রতিভা একসময় ব্রিটেনের ছিল তা এখন ভিন্ন রূপে চলে গেছে আমেরিকার কাছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার যে প্রতিভা একসময় মুসলমানদেও ছিল তাও একসময় চলে গেল। বাংলাদেশের যতসব অনাকাঙ্খিত প্রতিভা আছে তাও একসময় চলে যাবে। আসবে নতুন দিন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.