১০ম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবারে মতো ‘ঢাকা ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস ২০০৮’ নামে ১২ থেকে ১৭ জুন পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার হলে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অনুর্ধ্ব তিরিশ বছর বয়সী সম্ভাবনাময় বাংলাদেশী এবং দক্ষিণ এশীয় তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা, সমালোচক, সাংবাদিকদের নিয়ে ছিল ৬ দিনব্যাপী এই আয়োজন। এই কর্মশালার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা উৎসবে আগত বিদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পায়। চলচ্চিত্র নির্মাতা বাদল রহমান ছিলেন ‘ঢাকা ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস ২০০৮’-র পরিচালক।
ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস প্রথম শুরু হয় ২০০৩ সালে ইউক্রেনে, মলোডিয়েস্ট কিয়েম চলচ্চিত্র উৎসবে।
এর পর থেকেই ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সহজ কথায়, একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চলচ্চিত্র ব্যাক্তিত্বরা এসে জড়ো হন। এইসব খ্যাতিমান ব্যাক্তিত্বদের কাছ থেকে আগামী দিনে যেসব তরুণরা চলচ্চিত্রের সাথে নিজেকে জড়াতে চায় তারা যাতে কিছু শিখতে পারেÑ সেই ধারণা থেকেই ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসের উৎপত্তি।
আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে চলচ্চিত্র উৎসবে ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় ফিপরেসির অধীনে (ঋওচজঊঝঈও--ঞযব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঋবফবৎধঃরড়হ ড়ভ ঋরষস ঈৎরঃরপং)। এই কর্মশালায় যেসব তরুণরা অংশগ্রহণ করে তারা আন্তর্জাতিক ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসের সদস্য হয়ে যায়।
পরবর্তী কালে অন্য দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে যখন ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস কর্মশালা হয় তখন পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করা সদস্যরা তাতে যোগ দেয়ার সুযোগ পায়। এবং তাদের যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়ার খরচ উৎসব কমিটিই বহন করে। ধরা যাক আসন্ন বার্লিন ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসের কথা। আগামী ৯ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব। চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে এবারের বার্লিন ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসে অংশ নিতে পৃথিবীর ১২০টি দেশের ৩৩০৪ জন আবেদন করেছিল। অবশেষে কর্মশালা কমিটি যাচাই-বাছাই করে ৩৫০ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
এবার ঢাকা ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসের কথায় আসা যাক। কর্মশালায় অংশ নিয়েছিল ১৯ জন তরুণ। সবারই সুপ্ত বাসনাÑ একসময় চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ।
যেসব বিদেশি চলচ্চিত্র ব্যাক্তিত্বরা এখানে এসেছিলেন এই সম্ভাবনাময় তরুণদের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে, তারা হলেনÑ অ্যালেক্সিস ক্র্যাসিলভস্কি (যুক্তরাষ্ট্র), পিটার ভ্রান বেরেন (নেদারল্যান্ডস), নেনাদ দুকিচ (সার্বিয়া), সালোমি কিকালেইশভিলি (জর্জিয়া), সমারতœ দিসানায়েক (শ্রীলঙ্কা), রিক ওয়াসারম্যান (সুইডেন), কার্ল বাইকার (যুক্তরাষ্ট্র), ডগলাস চ্যাঙ (যুক্তরাষ্ট্র) এবং ববিতা শর্মা, মলয় গোস্বামী, নাজরিন আহমেদ (আসাম, ভারত)। আর বাংলাদেশ থেকে হায়দার রিজভি, তৌকির আহমেদমদ, আলী যাকের, মানজারে হাসিন মুরাদ, সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ, মিরাজুল কায়েস কর্মশালায় চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
কর্মশালা সাজানো হয়েছিল প্রতিটি ৯০ মিনিটের চারটি সেশনে। যেখানে ছিল চিত্রনাট্য, সিনেমাটোগ্রাফি, ডিজিটাল ফটোগ্রাফি, এডিটিং, পরিচালনা, শব্দসজ্জা ইত্যাদি বিষয়ে দেশি-বিদেশি বক্তাদের বক্তব্যসহ অন্যান্য উপস্থাপনা। যেমন ধরা যাক, পিটার ভ্যান বেরেন আলোচনা করেন ‘অ্যাসথেটিক অব সিনেমা : ক্রিটিক অ্যান্ড রিভিইয়ার’ নিয়ে, অ্যালেক্সিস আলোচনা করেন ‘চ্যালেঞ্জেস ইন ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম মেকিং : ফ্রিডম টু ফিল্ম’ বিষয়ে, জর্জিয়া থেকে আসা সালোমির আলোচনার শিরোনাম ছিল ‘জর্জিয়ান ফিল্ম : সোভিয়েত ইরা’।
তাদের সবারই বক্তব্য, অভিজ্ঞতা কর্মশালায় অংশগ্রহনকারী সদস্যরা মুগ্ধ হয়ে শুনেছে। এছাড়া নানা ধরনের চলচ্চিত্র প্রদর্শণীও ছিল আরেক আকর্ষণ।
‘ঢাকা ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস ২০০৮’-র পরিচালক বাদল রহমান জানালেন, ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসে বিভিন্ন চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের সংস্পর্শে এসে শিক্ষার্থীদের চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়বে, তৈরি হবে ভাল মানসিকতার চিত্র সমালোচক। সর্বোপরি এদেশে তৈরি হবে একটি ভাল চলচ্চিত্রে আবহ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।