প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে শুরু হয় সন্ত্রাস, দুর্নীতি আর লুটপাট। আর আওয়ামী লীগ এলে মানুষ শাস্তিতে ও নিরাপদে থাকে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে মানুষ অশান্তিতে থাকে। তারা আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতায় ছেয়ে যাবে। দেশ পিছিয়ে যাবে।
নেমে আসবে অন্ধকার। দুর্নীতি-লুটপাট, মানুষ খুন ও এতিমের টাকা মেরে খাওয়াই বিএনপির চরিত্র। গতকাল কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে এক বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ বিশাল সমুদ্রে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচারের রায় হয়েছে ইনশাল্লাহ সবার রায় বাংলার মাটিতে কার্যকর করা হবে। যতই চেষ্টা করুক বিএনপির নেতা তাদের রক্ষা করতে পারবেন না।
জাতির জনকের হত্যাকারীদের রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। রায় কার্যকর করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজা হচ্ছে। পাওয়া গেলে ফিরিয়ে এনে বাকি রায়ও কার্যকর করা হবে।
একযুগ পর কুষ্টিয়ার এ জনসভাকে কেন্দ্র করে জেলা শহর ছিল উৎসবমুখর। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপুর থেকেই হাজার হাজার নর-নারী সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। বেলা ২টার মধ্যেই কলেজ মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পরে নেতা-কর্মীরা মাঠের বিভিন্ন রাস্তা, অলিগলিতে অবস্থান নেন। 'বার বার দরকার শেখ হাসিনার সরকার' ইত্যাদি স্লোগান-সংবলিত পোস্টার ও দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে মাঠে হাজির হন কর্মী-সমর্থকরা।
শতাধিক তোরণ, ফেস্টুন, প্লাকার্ড আর ব্যানারে ছেয়েছিল সারা শহর। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল গোটা শহর। বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বক্তব্য শুরুর সময় সমাবেশস্থল পরিণত হয় জনসমুদ্রে। তরুণ ও নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা হলেও ১৪ দলের অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে জনসভাস্থলে প্রধানমন্ত্রী প্রবেশ করার পর "ধন্য ধন্য বলি
তারে, বেঁধেছে এমনি ঘর সুন্দরের ওপর পোস্তা করে" লালন সংগীতের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বরণ করে নেওয়া হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রায় যেভাবে কার্যকর করা হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ও কার্যকর করা হবে। খালেদা জিয়ার মনে ব্যথা কীভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবেন। বিএনপির মিথ্যাচারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা বলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদে উলু ধ্বনি হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।
মসজিদে নামাজ হয়, তারাবিহ হয়, ঈদের নামাজ হয়। মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় জনগণের কাছে ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের মতো আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে জেলা-উপজেলায় উন্নততর মসজিদ নির্মাণ করে দেব। তিনি বলেন, প্রতি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণ করা হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে বাংলাদেশ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিতে
পর্যবসিত হবে।
এদেশে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পারবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার, বিনামূল্যে বই বিতরণ, বৃত্তি দেওয়া বন্ধ করে দেবে। তাই
২০০৮ সালে যেভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন আবারও জয়যুক্ত
করবেন হাত তুলে আপনারা ওয়াদা করেন যে, নৌকায় ভোট দেবেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে কুষ্টিয়ার প্রতিটি আসনে নৌকার প্রার্থীকে জয়লাভ করিয়ে মহাজোটকে ক্ষমতায় নিয়ে আসায় তিনি কুষ্টিয়াবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সন্ত্রাস-কবলিত কুষ্টিয়ার চেহারা বদলে
গেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ এলাকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে।
এই
কুষ্টিয়ায় ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন আর ১৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। ভারত থেকে আমদানিকৃত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করলাম। আরও ৩৬০ মেগাওয়াটের নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি।
কুষ্টিয়ার ইতিহাসে এত উন্নয়ন আর কোনোদিন হয়নি, যা আওয়ামী লীগ সরকার আপনাদের জন্য করেছে। আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা দিয়েছি, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার সেন্টার করে দিয়েছি, ঘরের কাছে বসে চিকিৎসা পাবেন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলেই দুর্নীতি,
লুটপাট সন্ত্রাস, দুঃশাসন, মানুষ খুন করা- এটাই তাদের চরিত্র। আর এটাই তারা করে
গেছে। বিএনপি নেত্রীকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি টাকা নিয়েছিলেন ছেলেদের লেখাপড়া শেখাবেন বলে। তাদের কি লেখাপড়া শিখিয়েছেন? লুটপাট, হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতি করা, মানি লন্ডারিং করা শিখিয়েছেন। ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য আমরা কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি, মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা ভাতা বৃদ্ধি করে দিয়েছি।
দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা সাহায্য করে যাচ্ছি। লেখাপড়ার ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য দেশের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখবে। আওয়ামী লীগ আপনাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছে। মাধ্যমিক পর্যন্ত আমরা বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি।
জানুয়ারির পহেলা তারিখ আমাদের ছাত্রছাত্রীরা বই পেয়ে যাচ্ছে। বই কেনার জন্য বাবা-মাকে চিন্তা করতে হয় না। আমরা এক কোটি ১৯ লাখ ছাত্রছাত্রীকে প্রাথমিক-মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি। আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। আপনাদের প্রত্যেকের ছেলেমেয়েকে লেখাপড়ার সুযোগ আমরা করে দিতে চাই।
২৬ হাজার ২০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছি। ১ লাখ ৪ হাজার শিক্ষককে সরকারি চাকরির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন তৈরি করে দিচ্ছি। আগামীতে যে নির্বাচন হবে আপনারা যদি নৌকায় ভোট দেন, আমরা যদি সরকারে আসতে পারি তাহলে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে কলেজ এবং স্কুল সরকারি করা হবে। প্রত্যেক জেলায় এবং উপজেলায় আমরা একটি উন্নত মানের মসজিদ তৈরি করে দেব।
আমাদের লক্ষ্য এই বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে। আমরা শিক্ষানীতি দিয়েছি, সেই নীতিতে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছি। ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে খাদ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অন্যরা যা বললেন : আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ
বলেন, বিএনপি নেত্রী অহর্নিশ মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন।
কুষ্টিয়ার এ বিশাল জনসমুদ্র এই মিথ্যাচারের জবাব। আজকের জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপদানের মাধ্যমে এখানকার জনগণ প্রমাণ করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই তারা অবিচল রয়েছেন। জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, সামনে নির্বাচন। বিরোধীদলীয় নেত্রী নানা রকম কথাবার্তা বলছেন। মহাজোট একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে প্রস্তুত।
সংলাপেও রাজি। কিন্তু শুধু নির্বাচন নিয়ে সংলাপ করলে চলবে না।
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, জামায়াত, তেঁতুল হুজুরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার জুলফিকার আলী আরজুর সভাপতিত্বে এবং জেলা সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীর পরিচালনায় জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, হাবিবুর রহমান সিরাজ, এস এম কামাল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।