এসইও (seo)কি ?
Search engine optimization হচ্ছে এসইও । মূলত এসইও করা হয় কোনো ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়ানোর জন্য বা ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের টপে আনার জন্য। ওয়েবসাইটকে গুগল সার্চ এর প্রথম পেইজে আনার জন্য বা পর্যাপ্ত পরিমাণে টার্গেটেড ভিজিটর পাওয়ার জন্য এসইও করা খুব জরুরি । এসইও করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে ভিজিটরদের কাছে অনেক আকর্ষণীয় এবং জনপ্রিয় করা যায়। উদাহারণ দিয়ে যদি বলি-
ধরে নিন আপনি একটি নতুন পণ্য সেবা চালু করেছেন ।
এখন সফলভাবে ব্যাবসা করার জন্য আপনার প্রচুর পরিমাণে ক্রেতা দরকার । কিন্তু যদি এমন হয় ক্রেতাদের আপনার পণ্য সম্পর্কে ভাল ধারণা নেই, আপনার পণ্য কি কাজে বা কেন ব্যাবহৃত হয় সেটা তারা জানেনা সেক্ষেত্রে আপনার ব্যাবসায়ীক ভাবে সফল হবার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। অথবা যদি এমন ও হয় সম্ভাব্য ক্রেতারা আপনার পণ্য সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখে কিন্তু কোথায় বা কিভাবে সেটা পাওয়া যাবে তারা জানেনা। এক্ষেত্রেও আপনি সফল হতে পারবেননা। কাজেই সম্ভাব্য ক্রেতাদের টর্গেট করে আপনাকে পণ্যের প্রচার কাজ সঠিকভাবে চালাতে হবে এবং পণ্যের লোকেশান সম্পর্কে ও সঠিক ধারণা দিতে হবে।
অর্থাৎ এমনভাবে পণ্যের বিজ্ঞাপণ করতে হবে যাতে অনেক লোক পণ্যটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পায় এবং তাদের মধ্যে আপনার সম্ভাব্য আগ্রহী ক্রেতারা ও থাকে। অনলাইনের ক্ষেত্রে চিন্তা করলে ওয়েবসাইটের প্রতি ভিজিটরদের আকৃষ্ট করে প্রচুর পরিমাণে ভিজিটর পাওয়ার জন্য বা গুগল সার্চ রেজাল্ট পেইজের প্রথমে আনার জন্য কিছুটা কৌশল খাতিয়ে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় সেটাই হচ্ছে এসইও।
সার্চ ইঞ্জিন কি ?
ইন্টারনেট ব্যাবহার কারীরা বিভিন্ন ভাবে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য অনুসন্ধান করে থাকে। কেউ সরাসরি তাদের জানা এমন ওয়েবসাইটে গিয়ে ভিজিট করে তাদের তথ্য পেয়ে থাকে। আর যাদের নির্দিষ্ট সাইটের ঠিকানা জানা থাকেনা তারা সাধারণত সার্চ ইঞ্জিনে লিখে সার্চ দেয় ।
Google, yahoo, Bing ইত্যাদি হল বর্তমানে টপ সার্চ ইঞ্জিন। বেশিরভাগ ইন্টারনেট ব্যাবহার কারীরা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য খোঁজার জন্য সার্চ ইঞ্জিনের উপর নির্ভরশীল। সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে অনেক সহজে প্রয়োজনীয় তথ্য খুজে পাওয়া যায়। তাই ইন্টারনেট ইউজারদের কাছে সার্চ ইঞ্জিনের গুরুত্ত অনেক বেশি।
কেন করবেন এসইও
এসইও করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন এবং ভিজিটরদের কাছে অনেক গুরুত্তপূর্ণ করে তোলা যায়।
সার্চ ইঞ্জিনগুলো তৈরি করা হয়েছে মূলত গুরুত্তপূর্ণ তথ্য ইউজারদের কাছে পোঁছে দেয়ার জন্য। অনুসন্ধানকারীদের সঠিক ইনফরমেশান দেওয়ায় হচ্ছে এদের কাজ । সেজন্য কোন কিছু লিখে সার্চ দিলে অনুসন্ধানকারী যাতে তার প্রয়োজনীয় সঠিক তথ্য পায় সেদিকে সার্চ ইঞ্জিন সবসময় খেয়াল রাখে। আমরা যখন সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ বক্সে লিখে সার্চ দেই তখন অনেকগুলো পেইজের মাধ্যমে ওয়েবসাইটগুলোর ফলাফল দেখায় । ওয়েবসাইটগুলোর মান বিবেচনা, জনপ্রিয়তা বা ওয়েবসাইটের তথ্যগুলো ইউজারদের কাছে কতটুকু প্রয়োজনীয় ইত্যাদির ভিত্তিতে সাইটগুলো ক্রমানুযায়ী সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেইজে স্থান পায়।
এসইও সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য প্রথমে একটি পণ্য সেবার উদাহরণ দিয়েছিলাম। ঠিক তেমনটি চিন্তা করুন আপনার ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে। অনেক সুন্দর ডিজাইন করে আপনার ওয়েবসাইটটি তৈরি করলেন এবং বিভিন্ন পোস্টারে, খবরের কাগজে, মেগাজিনে, টেলিভিশনে সাইটের বিজ্ঞাপন করলেন। কিন্তু আপনার ওয়েবসাইটের সাথে অতিপরিচিত বা হঠাৎ কোনো কিছু খুঁজতে সাইটে ঢুকে পড়া কয়েকজন ছাড়া সম্ভাব্য ভিজিটর পাচ্ছেন না। তাহলে আপনার ওয়েবসাইটটি এত কষ্ট করে সুন্দর ডিজাইন করে তৈরি করার উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হল? ইউজাররা যখন কোনো তথ্য খোজার জন্য গুগলে সার্চ দেয় তখন তারা সাধারণত প্রথম পেইজের সাইটগুলো থেকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করে বা খুব বেশি হলে পরের দু একটি পেইজের সাইটগুলোতে গিয়ে একবার ঘুরে আসে।
কাংখিত তথ্য না পেলে তারা অন্য কী ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ দেয়। সঠিকভাবে এসইও না করার কারণে আপনার সাইটটি যদি গুগলের কয়েকটি পেইজের মধ্যেও না থাকে তাহলে টার্গেটেড ভিজিটরদের আপনার সাইট খুজে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। আর সে কারণে আপনার সাইটে ভিজিটর না পাওয়ার কারণে ওয়েবসাইট থেকে খুব বেশি বেনিফিটেড হওয়া সম্ভব না। অন্যদিকে যদি এমন হত সঠিক তথ্য বা ভাল সার্ভিস পাওয়ার কারণে অনেক ভিজিটর নিয়মিত আপনার ওয়েবসাইটে থাকে, আপনার ওয়েবসাইট টি ভিজিটরদের কাছে অনেক জনপ্রিয়, গুগলের টপ র্যাংকিংয়ে তাহলে সাইটটি থেকে আপনি যথেষ্ট লাভবান হতে পারতেন। একমাত্র এসইও করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটে উপরোক্ত সুবিধাগুলো পাওয়া যায়।
সঠিক নিয়মে এস ই ও করুন
সুন্দরভাবে আপনার ওয়েবসাইটের এসইও করা মানে সাইটের প্রতি টার্গেটেড ভিজিটরদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দেওয়া। সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে সাইটে অনেক ভিজিটর পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে প্রথমে আমরা গুগলের কথা চিন্তা করি। আগে অনেকে শুধুমাত্র লিংক বিল্ডিং করে এসইও করত। অর্থাৎ ভিজিটরদের চাহিদাকে প্রাধান্য না দিয়ে মূলত গুগলকে আকৃষ্ট করার জন্যই তখন এসইও করা হত। যার কারণে অনেক ফেইক ব্লক লিংকের সাথে লিংক বিল্ডিং করেই অনেক খারাপ ওয়েবসাইট গুগলের সার্চ রেজাল্টের প্রথমে চলে আসত আর অনেক ভালো ওয়েবসাইট রেজাল্ট পেইজের অনেক পিছনে চলে যেত।
তাই ইন্টারনেট ইউজাররা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সহজে খুজে পেতনা বা তথ্য পেতে অনেকক্ষণ লেগে যেত। গুগল বুঝতে পারল তার ওয়েবসাইট নির্ধারণের প্রোগ্রামিংয়ে মোডিফিকেশান দরকার। তাই তারা সার্চ অপটিমাইজেশনে কিছুটা পরিবর্তন আনল। এগুলো হচ্ছে গুগলের পান্ডা এবং পেংগুইন আপডেট। এই আপডেটের পরে এখন আর আগের মত শুধু লিংক বিল্ডিং করেই এস ই ও করা যায় না।
অনপেইজ এবং অফপেইজের কাজগুলো সঠিকভাবে করার মাধ্যমে এখন ওয়েবসাইটের এসইও করতে হয়।
প্রথমে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি ভাল মানের কী ওয়ার্ড বাছাই করতে হবে। কী ওয়ার্ড রিসার্চটা কিছুটা জটিল কিন্তু অতি গুরুত্তপূর্ণ একটি বিষয়। এক্ষেত্রে আপনার সাইটের বিষয়বস্তু কি এবং টার্গেটেড ভিজিটররা সম্ভাব্য কি লিখে সার্চ দিলে ওয়েবসাইটটি খুজে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ইত্যাদি বিষয় মাথায় রাখতে হয়। এছাড়া বাছাইকৃত কী ওয়ার্ড টি দিয়ে কতটুকু প্রতিযোগীতার মধ্যে পড়তে হবে এসব বিষয় নিয়েও চিন্তা করতে হয়।
ওয়েবসাইটের ভিতরে h1, title tag, image tag ইত্যাদি ব্যাবহার করে সাইটটিকে অনেক সুন্দরভাবে সাজাতে পারেন যাতে ভিজিটররা প্রথম বারের মত আপনার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে পরে আবার আসার আগ্রহ বোধ করে । এগুলো হচ্ছে মূলত অনপেইজ এসইও এর কাজ। অফপেইজের মাধ্যমে সাইটে প্রচুর পরিমাণে ভিজিটর আনার জন্য কয়েকটি গুরুত্তপূর্ণ কাজ করতে পারেন। গেস্ট ব্লগিং করতে পারেন ভাল মানের হাইপেইজর্যাংকের গেস্ট ব্লগিং সাইটে। প্রচুর নিয়মিত ভিজিটর আছে এমন গেস্ট ব্লগিং সাইটগুলোতে যদি নিয়মিত ভাল মানের আর্টিকেল লিখতে পারেন তাহলে ভিজিটররা আপনার লেখা পড়ে সাইটে ঘুরে আসার আগ্রহবোধ করবে।
এভাবে গেস্ট ব্লগিং এর মাধ্যমে সাইটে প্রচুর পরিমাণে নিয়মিত ভিজিটর পাওয়া যায়। আপনার সাইটের রিলেটেড কয়েকটি ভাল ব্লগিং সাইটে নিয়মিত কমেন্ট করুন। কমেন্ট লিখে আপনার সাইটের লিংকটি দিতে পারেন যাতে কমেন্ট পড়ে ভাল লাগলে ভিজিটররা সাইটে গিয়ে অন্তত একবার হলেও ঘুরে আসে। এভাবে ওয়েবসাইটে অনেক ভাল ব্যাকলিংক এবং ভিজিটর পাওয়া যায়। সোশ্যাল বুকমার্কিং করতে পারেন, এটি ওয়েবসাইটকে গুগলের টপে আনতে সাহায্য করে।
এছাড়া ভাল মানের সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ফোরাম পোস্টিং, ডিরেক্টরী সাবমিশন করেও সাইটে টার্গেটেড ভিজিটর পাওয়া যায়।
ক্যারিয়ার হিসেবে এস ই
বর্তমানে আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে এসইও বিশাল একটি ক্যাটাগরী। freelancer.com, odesk.com, elance.com ইত্যাদি বিভিন্ন জনপ্রিয় সাইটগুলোতে অনেক ভাল কাজ পাওয়া যায়। এছাড়া এসইও এর সব কাজগুলো আলাদা ভাবে করা যায় যার কারণে আউটসোর্সিং জগতে এটি বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে এই কাজের মাধ্যমে ভাল ইনকাম করা যায় এবং এই সেক্টরে বিভিন্ন ধরণের কাজ পাওয়া যায় এই কারণে অনেকে এখন এসইও কাজের প্রতি আগ্রহী।
তাছাড়া এটি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ও বটে। অনেক স্টুডেন্ট এবং চাকুরিজীবিরাও তাদের কাজের পাশাপাশি এই কাজ করে থাকে। এসইও তে দক্ষতা অর্জনের জন্য খুব বেশি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জানার দরকার হয় না। কম্পিউটার সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকলে এবং ইংরেজী জ্ঞান থাকলেই এই কাজে খুব সহজে দক্ষ হওয়া যায়। তাই অনেকে এখন তাদের বেষ্ট ক্যারিয়ার হিসেবে এসইও কে বেছে নিচ্ছে।
আপনিও চাইলে ক্যারিয়ার হিসেবে এসইও কে বেছে নিতে পারেন।
এসইও সম্পর্কিত অনেক গুরুত্তপূর্ণ তথ্য বা সমস্যা সমাধানের জন্য এই গ্রুপে যোগ দিতে পারেন http://www.facebook.com/groups/creativeit/
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।