এসইও শেখাটা কি আসলেই জরুরী?
মার্কেটপ্লেসে এর চাহিদা এবং সম্ভাবনা কতটুকু?
এসইও সম্পর্কে শুনেছেন নিশ্চয়ই! বড় ভাই কিংবা কাছের কোন আত্মীয়ের এসইও ক্যারিয়ারে সফলতার গল্প শুনে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। কিন্তু বেশিভাগ মানুষই জানেন না কেন তিনি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনে ক্যারিয়ার গড়বেন কিংবা টুকটাক কাজ জানলেও জানেন না এই মেধা কাজে লাগিয়ে যে এই বিশাল ওয়েব জগতে কি কি করতে পারেন। তাদের জন্যেই আজকের এই পোস্ট।
ওয়েব জগতে এসইও শব্দটি আলোচনার কেন্দ্রে আসার অন্যতম কারণ হল যোগাযোগ এবং ওয়েব মার্কেটিং এ এর শক্তিশালী ভূমিকা। চলুন দেখে নিই মার্কেটিং এ এর ভূমিকা কতটুকু,
মনে করুন আপনার কোন তথ্যের দরকার, কি করবেন? খোঁজাখুঁজির প্রয়োজনে নিশ্চয়ই গুগলের শরণাপন্ন হবেন।
আর এভাবেই সরাসরি ক্রেতার সামনে হাজির হওয়ার সুযোগ বাড়ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠাগুলোর, – পণ্য কিংবা সেবার বিক্রি বাড়ানোর। কারণ কোন ক্রেতা যখন একটি পণ্য বা সেবা অনলাইনেই খুজে পাচ্ছেন, সেটি অনলাইন থেকে কেনার সুযোগ থাকে তখন কেনাকাটার কাজটি অনলাইনেই সেরে ফেলেন।
বহুল পরিচিত সার্চ ইঞ্জিনগুলো (যেমন গুগল, ইয়াহু, বিং) নির্দিষ্ট সার্চ টার্মের জন্যে জটিল সব অ্যালগরিদম ব্যবহার করে অসংখ্য ওয়েবসাইট থেকে প্রাসঙ্গিক ওয়েবসাইট গুলোকে প্রথমে প্রদর্শন করে। তাই নির্দিষ্ট সার্চ টার্মে সাইটটিকে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সাথে পরিচিত করে তুলতে পারলে সেগুলো প্রথমে চলে আসবে। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী দেখা যায় প্রথম পেজ থেকে পাওয়া রেজাল্ট থেকেই সিলেক্ট করে নেন কোন সাইটে যাবেন, তার মানে কোন সাইট নির্দিষ্ট টার্মের জন্যে যদি প্রথমে থাকে থাকে তবে সেটির ট্রাফিকও বাড়ে অনায়াসে।
তাই এসইও করার মাধ্যমেই সবচেয়ে কোয়ালিটি লিড পাওয়া সম্ভব এবং তুলনামূলক খরচও অনেক কম। তাই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠাগুলোতে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনকে ইনভেস্টমেন্ট হিসেবেই বিবেচনা করা হয় এখন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কোন ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনে প্রথমে চলে আসাটা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু প্রশ্ন হল কিভাবে এটি করা যায়?
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন(এসইও) এমন একটি ফিল্ড যা দিন দিন পরিবর্তন এবং জটিল হচ্ছে। তাই যে কারো পক্ষে এসইও করা সম্ভব নয়।
কেউ যদি সেটা নিজে নিজে করতেও যায় তবে প্রতিযোগীতার ভিড়ে কিছুদিন পরই ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ সার্চ ইঞ্জিনে যেসব অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয় সেগুলোর পেছনে প্রায় দুইশতরও বেশী ফ্যাক্টর কাজ করে। এর মাঝে কিছু কমন ফ্যাক্টর হল কিওয়ার্ড ডেনসিটি, মেটা ট্যাগ, টাইটেল, ইনবাউন্ড লিঙ্ক, ওয়াবসাইট ট্রাফিক, কনটেন্ট ইত্যাদি। একজন বিজনেসম্যান বা সাইট ওনারের জন্যে এই সবকিছু নিয়ে কাজ করার সময় কিংবা সুযোগ থাকে না, তাই সবচেয়ে সোজা পদ্ধতি হল নিজের ওয়েবসাইটের জন্যে একজন এসইও স্পেশালিস্ট খুজে নেয়া। আর এজন্যেই মার্কেটপ্লেসে দক্ষ এসইও স্পেশালিস্টের কদর এত বেশি।
কাজের চাহিদা কেমন, কোথায় কাজ করবো?
কোন সাইটের ব্র্যান্ড বিল্ডিং থেকে শুরু করে টার্গেটেড ট্রাফিক, ইকমার্স সাইট, অ্যাডভারটাইজিং, সোসিয়াল মার্কেটিং, ট্রাস্ট বিল্ডিং, অফলাইন সেলস ইমপ্যাক্ট, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোথায় নেই এসইও'র প্রয়োজন! একটি সাইটের মার্কেটিং করতে চাইলে অবশ্যই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এসইও করার প্রয়োজন হয়।
ইল্যান্স মার্কেটপ্লেসের জব ট্রেন্ড থেকে দেখা যায়, গতবছরে এই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সম্পর্কিত কাজ ছিল ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশী, কাজপ্রতি ঘন্টায় রেট ছিল ১৮-২০ডলার এবং বাজেট ছিল গড়ে ১৮ হাজার ডলার, প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ। ফ্রিল্যান্সার ডট কম, ওডেস্ক সহ অন্যান্য মার্কেটপ্লেসেও রয়েছে অসংখ্য কাজ।
এ তো গেল মার্কেটপ্লেসের কথা, এবার আসি স্ব-উদ্যোগী হয়ে কাজ করার বিষয় নিয়ে। অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার আরেকটি উপায় হচ্ছে ব্লগিং করা, পাশাপাশি নিজের পণ্য বিক্রয় করাতো থাকছেই।
নিজের ব্লগ সাইট তৈরী করে সেটাতে অ্যাডসেন্স কিংবা অন্য অ্যাডমিডিয়ার অ্যাড বসিয়ে আয় করার ধারণা আজ নতুন নয়। সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকেই এখন প্রচুর তরুণ-তরুণী ব্লগিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের স্মার্ট ক্যারিয়ার নিশ্চিত করেছেন। সেই সাথে অ্যাডসেন্স এবং অ্যাফিলিয়েশনের মাধ্যমেও গড়ে তুলছেন আয়ের নিজস্ব ক্ষেত্র।
রিসার্চ এবং অ্যানালাইসিস ভিত্তিক আইটি কোম্পানী ফরেস্টারের মতে ২০১৪ সালে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর বাজার দাঁড়াবে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি ১৬শতাংশ। তাছাড়া ইন্টারনেটে যত পণ্য বিক্রয় হয়েছে তার ৫৭ শতাংশই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের দ্বারা।
অন্যদিকে অ্যাফস্ট্যাট এর তথ্য অনুযায়ী, এই বিশাল সম্ভাবনাময় মার্কেটে গতবছর যারা কাজ করেছেন তাদের ১১.৪ শতাংশই ব্লগ কিংবা নিজস্ব কোম্পানী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। কারণ,
• ৭৭ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নিয়মিত বিভিন্ন ব্লগ পড়েন।
• ইন্টারনেট ব্যবহারের মোট সময়ের ২৩ শতাংশ কাটে বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটে।
• যেসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্লগ রয়েছে, তাদের ব্লগ থেকে ৫৭ শতাংশ ক্রেতা পেয়ে থাকেন।
• প্রায় ৮১ শতাংশ অনলাইন ক্রেতা বিভিন্ন ব্লগে দেওয়া তথ্য ও উপদেশকে বিশ্বাস করে।
এই অ্যাফস্ট্যাট সামিটে উপস্থিত মার্কেটারদের ৮০ শতাংশ মার্কেটার বলেছেন তাদের সাইটে ট্রাফিকের অন্যতম উৎস হল সার্চ ইঞ্জিন, অর্থাৎ তাদের সফলতার অন্যতম কারণ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
মজার ব্যাপার কি জানেন, মার্কেটপ্লেসে আপনার প্রোফাইলটিকে ক্লায়েন্টের কাছে যদি খুজে পাওয়াতে চান তবে এই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের ব্যবহারিক জ্ঞানগুলো কাজে লাগে। ফলে কাজ পাবার সম্ভাবনাও বাড়ে অনেকখানি।
তাই এক্সপার্টের চাহিদা কেমন সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে কি?
তবে আমিও কি এসইও স্পেশালিস্ট হতে পারবো?
কেন পারবেন না? অনলাইনে করা কাজের মাঝে তুলনামূলক সোজা একটি কাজ এটি। তাছাড়া প্রতিনিয়ত বাড়ছে কাজের চাহিদা।
হয়তো বলতে পারেন, সেই সাথে বাড়ছে প্রতিযোগীতা। পরিবর্তন হচ্ছে ট্রেন্ড এবং অ্যালগরিদম। তবে টিকবো কিভাবে!
অন্য দৃষ্টিভঙ্গীতে বিবেচনা করুন, যদি ট্রেন্ড এবং অ্যালগরিদম পরিবর্তনের জন্যে কোন সাইট পেনাল্টি খায় তবে সাইট ওনার অবশ্যই চাইবেন সেটা কাটিয়ে উঠতে। আর আপনি যদি সেই নতুন পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন তবে কি সেই সাইটের ওনার কাজটি আপনাকে বুঝিয়ে দিতে চাইবেন না? তবে আপনিই বলুন আপনার কাজের চাহিদা বাড়ছে নাকি কমছে?
কথা হল এই একটা সেক্টরে যদি আপডেটেড থাকতে পারেন তবে আপনার সফলতা কেউ চাইলেই থামিয়ে দিতে পারবে না। পুরুটাই চেষ্টা এবং স্বদিচ্ছার ব্যাপার মাত্র।
শেষে বলবো, পুরোটা লিখাটি যদি মনযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তবে ধরে নিচ্ছি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনে আপনার আগ্রহ আছে বেশ। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, একে ধরে রাখুন এবং চেষ্টা করতে থাকুন। যা শিখতে চান সেটি খুজে বের করুন। কারণ বেশীরভাগ মানুষই সফলতার কাছাকাছি এসেও চেষ্টার অভাবেই ঝড়ে পড়ে।
আপনি যদি ইংরেজিটা মোটামুটি জানেন তবে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন শেখা শুরু করে দিতে পারেন।
এসইও-র এমন কিছু কাজ আছে যেগুলো খুব কঠিন কিছু নয়। দু’তিন মাসের ট্রেনিং নিয়েই এ ধরণের কাজ করা যায়।
খুব কঠিন একটা কাজ নয় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, কিন্তু সম্ভাবনা রয়েছে অনেক। তাছাড়া অনলাইনে যে কোন কাজ করতেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রয়োজন আছে এর, তাই চেষ্টা চালিয়ে যান।
কোথায় পাবেন প্রশিক্ষণ? চাইলে নেট ঘেটে নিজে নিজেই শিখতে পারবেন।
ইন্টারনেট থেকেই শিখতে পারেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের খুঁটিনাটি। তবে যদি হাতে কলমে শিখতে চান তবে ডেভসটিম ইনস্টিটিউটের অ্যাডভান্স এসইও বিষয়ক প্রশিক্ষণেও অংশ নিতে পারেন, এখানে হাতে কলমে এসইও-র সবকিছু শেখানো হয়ে থাকে। তাহলে আর দেরি কেন, আজ থেকেই শুরু করুন। আমরা আপনার সফলতার গল্প শোনার অপেক্ষায় থাকলাম। এসইও'র সম্ভাবনাময় জগতে আপনাকে অভিনন্দন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।