পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয় ,,,,,পথের পাশেই আছে মোর দেবালয়
মাতৃ-হারা
মাগো তুমি আমায় ছেড়ে কোথায় গেলে চলে,
ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেলে কিছু নাহি বলে।
আমায় ছেড়ে নিঠুর মাগো কেমন করে থাকো,
আমার কথা একটুও কি মনে পড়ে নাকো ?
সবাই বলে - গেছ তুমি মড়ন পারের দেশে,
সেথায় গেলে আবার কেহ ফিরে নাহি আসে।
কিসের মায়া সে দেশে মা, সে দেশটি কেমন?
মা বলে কি ডাকে কেহ আমি ডাকতাম যেমন !
কিসের টানে আমায় ছেড়ে সেথায় তুমি গেলে ?
দুষ্ট বলে আমায় কিগো গেছ তুমি ফেলে ?
মামার বাড়ী যেতে তুমি – আমি যেতাম সাথে,
কৈ বারণ তুমি একটুওত করোনিকো তাতে !
বাবার সাথে থাকবো বলে যদি ধরতেম আড়ি,
বলতে তুমি “খোকন” ছাড়া থাকতে কিগো পারি?
স্কুল থেকে আসতে যদি একটু দেরী হতো ,
পথের পানে থাকতে চেয়ে ভাবতে বসে কত?
একটু যদি অসুখ হতো, একটু সর্দি কাশি,
সারা রাতি কাটিয়ে দিতে আমার পাশে বসি।
আমায় ভুলে থাকতে তুমি পাওনা বুঝি ব্যাথা ?
অনেক খোকন আমার মতন আছে বুঝি সেথা !
শত মায়েরে ফাকি দিয়ে যারা সে দেশে গেছে চলি,
তাদের তুমি কোলে তুলে নিলে নিজের খোকাকে ভুলি !
আমি কিন্ত ভুলিনি তোমারে একটি দিনেরও তরে,
তোমার ছবিটি সদাই আমার থেকে থেকে মনে পড়ে।
আকাশের ঐ নীল তারাটি সে বুঝি মা তুমি,
তাইতো রাতে চুপিসারে এসে আমারে যাও চুমি।
মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে তোমায় স্বপ্নে দেখি,
জাগিয়া দেখি তুমি নাই পাশে –সবই মিথ্যা ফাঁকি।
“রুহুল আমীন”
২৮/১২/১৯৫৫
'মা' অত্যন্ত একটি গভীর আবেদনময় শব্দ আমার কাছে । সেই কোন কিশোরী বেলায় মাকে হারিয়েছিলাম যার স্ম্বৃতি আজও অমলিন । তাই যখন শুনি কেউ মা নিয়ে কিছু বলছে তখন এই বয়সে এসেও আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পরি।
সেদিন আমার অতি প্রিয় এক ভাবীর কাছে তার সদ্য প্রয়াত মায়ের স্ম্বৃতিগুলো দেখছিলাম।
অশ্রুসজল চোখে ভাবী তার মা এর কিছু চিঠি পত্র দেখাচ্ছিল। সেখানে এই কবিতাটি ছিল যেটা ভাবীর মামা তার মা অর্থাৎ ভাবীর নানীর মৃত্যুতে ব্যাথিত হয়ে লিখেছিল মা কে দাফন করে এসে। হয়তো অনেক পাঠকের কাছে মনে হবে তার লেখায় ভাষা, ছন্দ, কাব্য, উপমা ইত্যাদি ব্যকরনগত অনেক ভুল রয়েছে।
কিন্ত সেই কবিতায় আমি দেখেছি লেখকের আবেগ। শিশু অবস্থায় মা মারা গেলে পিতা দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
অত্যন্ত নামজাদা পরিবারের কিশোরী মেয়েটি বিয়ের আগেই শুনেছিল তার হবু স্বামীর এক শিশু সন্তানের কথা। শশুড় বাড়ী পা দিয়েই সেই কিশোরী ২ বছরের শিশু পুত্রকে কোলে তুলে নেন। ছেলেটিও কখনো মা দেখেনি। জ্ঞান হওয়ার পর জেনেছে সেটাই তার মা । সেই মাতা পুত্রের ভালোবাসার অবিচ্ছেদ্য বন্ধন ছিন্ন হয়েছিল মা এর পরিনত বয়সে যখন কবি নিজেও বিবাহিত তিন সন্তানের জনক।
স্বপ্নবাজ অভি আর বিদ্রোহী ভৃগুর মা এর মর্যাদার জন্য যে লড়াই শুরু করেছে তাতে শরিক হওয়ার জন্য আমি এই কবিতাটি আমি ব্লগে তাদের অনুমতি সাপেক্ষে তুলে দিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।