আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিরবে সুব্রত যাবে অনুপ

ভারতের সঙ্গে বন্দীবিনিময় চুক্তি (বহিঃসমর্পণ) অনুসমর্থনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ফলে ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন বা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হলো। গত বছর স্বাক্ষরিত চুক্তিটি আগেই ভারতের মন্ত্রিসভা অনুসমর্থন করেছে। এখন বাংলাদেশে অনুমোদনের ফলে বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা থাকল না। ফলে বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও সাজ্জাদ হোসেনসহ অন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

একই সঙ্গে কারাগারে থাকা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা অনুপ চেটিয়ার ভারতে ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে হলো বিশেষ অগ্রগতি।

গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উত্থাপিত ভারতের সঙ্গে বন্দীবিনিময় চুক্তি (বহিঃসমর্পণ) অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। একই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও মাদক দমনে সহযোগিতার হাত বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, ভারতের মন্ত্রিসভা আগেই এ চুক্তিতে অনুসমর্থন দিয়েছে। বাকি ছিল আমাদের মন্ত্রিসভার অনুমোদন।

আজ সেটা হয়ে যাওয়ায় এখন এর অনুলিপি হস্তান্তর হলেই চুক্তি কার্যকর হবে। দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও সুশীল কুমার সিন্দে ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় এই বহিঃসমর্পণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সচিব জানান, এই চুক্তির ফলে দুই দেশ এক বছরের বেশি মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের বিনিময় করতে পারবে। তবে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী বা বন্দীদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না। তবে কোনো দেশ বন্দীবিনিময়ের আবেদন করলে কতো দিনের মধ্যে তা সুরাহা করতে হবে- চুক্তিতে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো সময়ের উল্লেখ নেই।

তাছাড়া যে কেউ ছয় মাসের নোটিশে এ চুক্তি বাতিল করতে পারবে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ভারতের কারাগারে বন্দি দুই বাংলাদেশি সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও সাজ্জাদ হোসেনকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে। লাইসেন্সবিহীন অস্ত্র, জাল নোট এবং অবৈধভাবে ভারতে থাকার অভিযোগে গত বছর কলকাতায় আটক হয় সুব্রত বাইন। বর্তমানে কলকাতার কারাগারে রয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশে একাধিক হত্যা মামলার আসামি সাজ্জাদ হোসেন দিল্লীর তিহার জেলে বন্দি আছেন।

সূত্র জানায়, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সুব্রত বাইন এবং সাজ্জাদ হোসেনকে ফিরিয়ে দিতে সব ধরনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষ করেছে। দেশটির আদালতও এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছেন। এখন চুক্তি বাস্তবায়ন করে তাদেরকে ফিরে আনা হবে। জানা যায়, বর্তমান সরকারের শীর্ষ নেতাদের হত্যার উদ্দেশে একাধিক হামলার সঙ্গেও জড়িত এ দুই সন্ত্রাসী। ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শান্তি মিছিলে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সুব্রত বাইনের নাম জড়িয়ে রয়েছে।

অপরদিকে, বাংলাদেশে সাজার মেয়াদ শেষে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতে ফেরানোর বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিকভাবে 'বিনিময়' বলতে চাচ্ছেন না কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এই দুটি ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি ভিন্ন। তবে এই বিনিময়ের 'চর্চা' শুরুর জন্য উভয় দেশের পক্ষ থেকেই এই বন্দীদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল বলে স্বীকার করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এদের বাইরে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামীসহ একটি তালিকা ভারতের কাছে দেয়া হয়েছে। দুই দেশের স্বরাষ্ট্র সচিবদের সর্বশেষ বৈঠকে ভারতও অনুরুপ একটি তালিকা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুই চুক্তির অনুমোদন: বৈঠক শেষে ব্রিফিং-এ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইয়া বলেন, সন্ত্রাস দমন ও মাদক নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও দুটি চুক্তি করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এর মধ্যে বাংলাদেশ-ইউনাইটেড স্টেটস কাউন্টার টেরোরিজম কোঅপারেশন ইনিশিয়েটিভ চুক্তি হলে সন্ত্রাস দমনে দুই দেশের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের পথ তৈরি হবে। এছাড়া জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধেও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। অন্য অনুমোদন পাওয়া চুক্তিটি হচ্ছে মেমোরেন্ডাম অব কো-অপারেশন বিটুইন মিনিষ্ট্রি অব হোম অ্যাফেয়ার্স অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ইউনাইটেড স্টেটস ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন ফর মিউচ্যুয়াল কো-অপারেশন ইন দ্য স্ফিয়ার অব ড্রাগ কন্ট্রোল চুক্তি। এ চুক্তির ফলে হলে মাদক নিয়ন্ত্রণে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির পথ তৈরি হবে।

সচিব জানান, পারস্পরিক সম্মতিক্রমে এই চুক্তি হবে। এতে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

এছাড়া মন্ত্রিসভা গতকাল পায়রাবন্দ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৩ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশের উন্নয়নে এটা গুরুত্ত্বপূর্ণ আইন। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে এ বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত অনুমোদনও দেয়া হয়েছে।

পটুয়াখালীর বারোনাবাদ নামক স্থানে এ বন্দর নির্মাণ করা হবে বলে জানান সচিব। এছাড়া মন্ত্রিসভা সিআইপি (রপ্তানি) নীতিমালা ২০১৩ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে। এতে কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। যারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিআইপি'র সংখ্যা বৃদ্ধি।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।