হা হা হা পায় যে হাসি!!!
খুব আবছা মনে পড়া এক মায়ের গল্প সবাইকে শোনাই।
এই মায়ের ছেলে ২৫শে মার্চের পর কোন একসময় কিছু বন্ধুবান্ধবের সাথে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। একসময় সব বন্ধুই ঘরে ফিরে এলেও এই ছেলেটি আর ফিরে আসছিল না। যুদ্ধ শেষ হবার পরও যারা নিখোঁজ ছিলেন, তাদের পরিবারের কেউ সহজে আশা ছেড়ে দিত না। তারা ভাবত, হয়ত ভারতের জেলে আটকে আছে বা কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতালে আহত অবস্থায় আছে, কিছুদিন পরই ফিরে আসবে।
তাদের এই ভাবনার পিছনে কতটা বাস্তবতা ছিল আর কতটা নিজের মনকে প্রবোধ দেয়া, সেটা নির্ণয় করা দুরুহ।
মায়ের আশাবাদী মন অপেক্ষাতেই বসে থাকে বেশ কয়েক বছর - খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে, কবে ফিরবে? নাকি ফিরবে না!
৭৩-৭৪ সালের কোন একসময় মা তাঁর ছেলের এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যান, এই বন্ধুও ছেলের সাথেই যুদ্ধে গিয়েছিল। বন্ধুর চেহারার মধ্যে নিজের ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতেই মায়ের নজরে পড়ে একটা পুরোনো ম্যাগাজিন পত্রিকা। তিনি সেটা নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে শুরু করেন। এসময় কেন যেন বন্ধুটা একটু অস্বাভাবিক আচরন করতে শুরু করে।
সে পত্রিকাটা তাঁকে পড়তেই দিবে না। নানাভাবে সেটা কেড়ে নিতে চাচ্ছে।
মা একটু বিরক্ত হন, 'কিরে! তুই এমন করছিস কেন? আমি একটু দেখি না পত্রিকাটা। '
বন্ধুটা আর কোন উপায় না দেখে পত্রিকাটা পড়তে দিতে বাধ্য হল। দেখতে গিয়ে হঠাৎ মায়ের চোখ আটকে যায়।
আরও কয়েকজন সহযোদ্ধার সাথে তার ছেলের একটা ছবিও সেখানে ছাপা হয়েছে। পত্রিকায় ছেলের ছবি ছাপা হবার প্রবল অহংকারে মা খবরটা পড়তে শুরু করেন।
সেখানে লেখা ছিল, ছবির এই মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই রণাঙ্গনে নিহত হয়েছিলেন।
*এই মায়ের নাম সেতারা বেগম। ছেলেটার নাম আমি জানি না, তবে উপরের এই আলোচিত ছবিটা তাঁর।
ভদ্রমহিলা বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে একটু বয়স্ক মহিলার ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় করতেন। সাধারনত নিম্নবিত্ত বা গ্রাম্য মহিলার চরিত্রই জুটত। মোটকথা, অভিনেত্রী হিসেবে তিনি এমন কোন উল্লেখযোগ্য কেউ নন। অনেক বছর আগে বিটিভির একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে তিনি এই স্মৃতিচারন করেছিলেন। এত আগে শোনা ঘটনা পুরো মনে রাখা অন্তত আমার স্মরনশক্তিতে সম্ভব না, তাছাড়া আমার বয়সও তখন খুব বেশি না।
তবে মূল কাহিনীটা এরকমই ছিল। কমবেশি যতটুকুই তথ্যবিভ্রান্তি আছে, তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।
ভদ্রমহিলার নাম এবং ছেলের উপরের ছবিটা খুঁজে বের করার কৃতিত্ব আমারব্লগের ব্লগার মলিকিউলের। এই পোস্টের সকল পাঠকের পক্ষ থেকে তাকে আমার অসংখ্য ধন্যবাদ।
বিঃদ্রঃ পোস্টের টাইটেল সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া এই কালজয়ী গান থেকে নেয়া।
গানের কথা মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান এবং সুর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। সবাই গানটা শুনে দেখুন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।