কতটা স্বাধীনভাবে ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন তা নিয়ে সম্প্রতি ‘ফ্রিডম হাউস’ নামের একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান বিশ্বের ৬০ দেশ নিয়ে এক গবেষণা করেছে। গবেষণার ফল অনুযায়ী, ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বাধীনতার দিক থেকে বাংলাদেশ ১০০-এর মধ্যে ৪৯ নম্বর পেয়েছে। এই ফল অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা ‘আংশিক স্বাধীন’।
প্রযুক্তি ও ব্যবসাবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডারের এক খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ২০১৩ সাল এক কঠিন বছর। এ বছর পাকিস্তানে হাজার হাজার সাইট বন্ধ হয়েছে, ভেনেজুয়েলায় ইন্টারনেটে সেন্সরশিপ বাড়ার মতো নানা ঘটনা ঘটেছে।
এ বছর অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেনের হাতে মার্কিন গোয়েন্দাদের ইন্টারনেটে নজরদারি ফাঁস হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে সরকারি নজরদারির বিষয়গুলো মানুষ জানতে পেরেছে।
ফ্রিডম হাউসের গবেষণা অনুযায়ী, তিন বছর ধরে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট স্বাধীনতা ক্রমশ কমেছে। বর্তমানে বিশ্বে ব্যক্তিগত ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতার দিক থেকে শীর্ষ দেশ আইসল্যান্ড। এরপর রয়েছে এস্তোনিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি এর পরের অবস্থানে।
ইন্টারনেট স্বাধীনতার দিক থেকে সবার নিচে চীন, কিউবা ও ইরান।
ফ্রিডম হাউস ইন্টারনেট স্বাধীনতার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করার সময় বিভিন্ন দেশের অনলাইনে বাক-স্বাধীনতা আইন, অনলাইনে কিছু বলার জন্য গ্রেপ্তারের সংখ্যা, সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ, নজরদারি প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূলত ১০টি উপায়ে ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ রাখে বিভিন্ন দেশের সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারনেট বন্ধ বা ফিল্টার করা, সমালোচকদের বিরুদ্ধে সাইবার হামলা চালানো, অনলাইনে ধর্মবিষয়ক রাজনীতি বা সামাজিক বিষয় নিয়ে লেখা রুখতে আইন বা গ্রেপ্তার, অর্থ খরচ করে বিভিন্ন ফোরামে সরকারি প্রচার, শারীরিক আক্রমণ বা খুন, নজরদারি, অনলাইনে বিভিন্ন পোস্ট মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা, সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে নজরদারি, মধ্যপন্থী হিসেবে কাজ করা এবং মোবাইল সেবা বন্ধ রাখা।
ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে. ফিল্টারিং ও সেবা বন্ধ করার পাশাপাশি অনলাইনে রাজনৈতিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে কটূক্তিকারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
অনলাইনে কটূক্তি করলে গ্র্রেপ্তার ও বিভিন্ন সাজার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি ইন্টারনেটে বিভিন্ন বিষয় নজরদারির উদ্যোগ নেওয়ায় ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে। এ তালিকায় বাংলাদেশ, তুরস্ক ও আজারবাইজানের মতো দেশগুলো পড়েছে।
গবেষণায় বাংলাদেশের ইন্টারনেট স্বাধীনতার বিষয়টিকে ‘আংশিক স্বাধীন’ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যাতে নয়টির মধ্যে বর্তমানে ছয়টি বিষয় স্বাধীন নয়। এতে বাংলাদেশের মোট পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ৪৯।
এর মধ্যে কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশের বাধার ক্ষেত্রে ১৩, কোনো লেখায় বাধার ক্ষেত্রে ১২ ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর অধিকার আটকানোর ক্ষেত্রে ২৪ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। ১০০ এর মধ্যে পয়েন্ট যত কম হবে সেই দেশটি ইন্টারনেট স্বাধীনতার দিক থেকে তত উদার। পয়েন্টের দিক থেকে শূন্য থেকে ৩০ হলে, সে দেশটি ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে স্বাধীন হিসেবে ধরা হয়েছে। পয়েন্ট ৩১ থেকে ৬০ হলে, সে দেশটিকে আংশিক স্বাধীন বলে উল্লেখ করেছে ফ্রিডম হাউস।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার লিংক-
http://www.freedomhouse.org/sites/default/files/resources/FOTN%202013%20Summary%20of%20Findings.pdf
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।