আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাসির রাজা আনিসের আজকাল

পঞ্চাশের দশকে অভিনয়ে আসা কৌতুক অভিনেতা আনিস বলেন, 'সৃষ্টিকর্তা আমাকে খুবই ভালো রেখেছেন। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে আজো অভিনয় করে যাচ্ছি। স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে সুন্দর সুখের সময় কাটছে আমার। ' তার কথায় 'কখনো ভাবিনি ঢাকায় নিজের একটি কুঁড়েঘর হবে; কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় এখন এই শহরে আমি একটি ফ্ল্যাটের মালিক। ' জলপাইগুড়ির আনিসুর রহমানের অভিনয়ে হাতেখড়ি ১৯৫০ সালে মঞ্চে।

তার বড় ভাই এ কে এম লুৎফুর রহমান এফডিসির স্পেশাল অ্যাফেক্টাস অ্যান্ড অ্যানিমেশন বিভাগে কাজ করতেন। আনিস ডানপিটে ছিলেন বলে ভাই চাইতেন না তিনি ফিল্মে কাজ করুক। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের স্টিল ফটোগ্রাফার সাইদুর রহমানের কাছে ফটোগ্রাফির ওপর কাজ শিখতে দেওয়া হয় আনিসকে। থাকতেন তেজকুনী পাড়ায় ভাইয়ের বাসায়। ওখানেই থাকতেন এফডিসির শব্দগ্রাহক মোজাম্মেল হক সিদ্দিকী।

তিনি আনিসকে নিয়ে গেলেন কলকাতার বিখ্যাত চলচ্চিত্র 'কাবুলীওয়ালার' এডিটর প্রণব মুখার্জির কাছে। প্রণব বাবুর কাছে এডিটিংয়ের কাজ শেখা শুরু হলো আনিসের। এক সময় প্রণব বাবু কলকাতা চলে গেলে প্রখ্যাত চিত্রসম্পাদক বশির হোসেনের কাছে কাজ শিখলেন আনিস। একদিন মোজাম্মেল হক আনিসকে বললেন, তোমাকে চলচ্চিত্রে কাজ করতে হবে। সেটা ১৯৬০ সালের কথা।

উদয়ন চৌধুরী 'বিষকন্যা' নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। এতে তাকে পালকপুত্রের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। তার মুখে প্রথম সংলাপ ছিল এমন- 'বুঝনা ক্যান, ওই মাইয়া আমাগো ঘরে আইলে কপাল খুইলা যাইব'। শুটিং চলছিল, হঠাৎ উদয়ন চৌধুরী কাট কাট বলে চেঁচিয়ে উঠলেন। মোজাম্মেল হককে তিনি বললেন, 'কোত্থেকে এই ছেলেকে ধরে আনলেন।

' আনিস পালিয়ে গেলেন। বেশ কিছু দিন পর কলকাতার 'কাবুলীওয়ালা' চলচ্চিত্রের সাউন্ড রেকডিস্ট মনি বোস আনিসকে বললেন, 'এই তো জীবন' নামে জিল্লুর রহমান একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। এতে তাকে ঘটকের চরিত্রে কাজ করতে হবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মনি বোসের পীড়াপীড়িতে রাজি হতে হলো তাকে। প্রথম শর্ট এক টেকে ওকে হলো।

ব্যস অভিনয়ে যাত্রা শুরু আনিসের। এরই মধ্যে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার এহতেশাম ও মুস্তাফিজের প্রযোজনা সংস্থা লিও ফিল্মসের সঙ্গে যুক্ত হলেন তিনি। সেখানে চিত্র সম্পাদক হিসেবে চাকরি শুরু হলো তার। পাশাপাশি চলল অভিনয়, ছয় মাসের মধ্যে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে গেলে চাকরি ছেড়ে পুরোদমে অভিনয় শুরু তার। থাকতেন সোনালী ব্যাংক কলোনিতে।

১৯৬৫ সালে খালাত বোন কুলসুম আরা বেগমকে বিয়ে করেন আনিস। আনিস বলেন, আমি একজন সফল মানুষ। দুঃখ বলে কিছু নেই আমার জীবনে। এহতেশাম, মুস্তাফিজ, কাজী জহির, ইবনে মিজান, কামাল আহমদ এবং আজিজুর রহমানের মতো বিখ্যাত চিত্র পরিচালকের চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। এ পর্যন্ত তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করা হয়েছে।

চলচ্চিত্রকার ও দর্শকের অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছি। সেই ভালোবাসার পথ ধরে এখনো বড় ও ছোট পর্দায় কাজ করে যাচ্ছি। অভিনয়ের স্বীকতি হিসেবে পেয়েছি অসংখ্য পুরস্কার। এর চেয়ে সফল জীবন আর কি হতে পারে। শীঘ্রই মুক্তি পাবে খালেদ মাহমুদ মিঠুর 'জোনাকীর আলো'সহ তার অভিনীত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র।

অন্যদিকে বিটিভি'তে ধারাবাহিক 'ললনা'সহ বেশ কটি নাটক ও খন্দকার ইসমাইলের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'স্মাইল শো'তে নিয়মিত কাজ করছেন তিনি। হাসির রাজা আনিস বলেন, অভিনয় আমার জীবন, তাই আমৃত্যু অভিনয়

করে যেতে চাই।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।