এটা আমার জন্য অনেক সুখকর যে, আমি এখন ব্লগ ও ফেইসবুক থেকে নিজেকে আসক্তিমুক্ত রাখতে পারছি। পরিবার ও পেশাগত জীবনের কর্মব্যস্ততা অনেক আনন্দের। ... ব্লগে মনোযোগ দিতে পারছি না; লিখবার ধৈর্য্য নেই, পড়তে বিরক্ত লাগে।
আমার মায়ের আটপৌরে শাড়ির ভাঁজে সারাবেলা জড়িয়ে থাকতো নিটোল দুঃখেরা
মমতাময়ী কুক্কুটীর মতো পাখনায় ঢেকে রাখতেন এক দঙ্গল দুষ্টু অথচ নিঃস্ব ছানাদের-
দুর্মর দুঃখের ভেতরও ছানাগুলো অপরিমেয় সুখে হাবুডুবু খেত দিনভর
সুনিবিড় রহস্যে সন্তান-অন্ত জননী যুগপৎ স্বামী-অন্ত রমণী ছিলেন
এখনো চোখ বুজলেই ভেসে ওঠে আমার দুঃখময়ী মায়ের মুখ-
তাঁর লাল টুকটুকে ঠোঁটে ঝুলে আছে অমরাবতীর হাসি- সেখানে একটুও দুঃখ নেই,
ছিল না কোনোদিন, সতত-দুঃখের ভেতর থেকেই ঝরে পড়ে অবিরাম সুখ।
আমার মাকে যেমন দেখেছি, আজীবন স্ত্রীর ভেতর খুঁজেছি আমার জননীর ছায়া।
আমার স্ত্রীকে আমার সন্তানের মা হতে হবে, তাদের অন্তরঙ্গ বন্ধুনি হতে হবে
সে তাদের তিনবেলা খাবার বেড়ে দিবে, তাদের সার্বক্ষণিক গৃহশিক্ষিকা হবে, কীভাবে
সজ্জন হয়ে বেড়ে উঠতে হয় সেরূপে তাদের শিষ্টাচার শেখাবে।
আমার স্ত্রীর আঁচলে বাঁধা থাকবে সিন্দুকের চাবি, যার ঝনাৎ শব্দে মধুরতম সুখেরা
হয়ে উঠবে দীপ্ত বাঙ্ময়।
আমার স্ত্রীকে আমার প্রেমিকা হতে হবে, গলন্ত রোদে কিংবা নরম জোছনায়
হাত ধরে পায়ে পায়ে হাঁটবে, অনিচ্ছায় বাহুস্পর্শে বিদ্যুৎপৃষ্ট করে দেবে আমাকে;
চিকন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রিকশায় সারা শহর-
অকস্মাৎ তুলে দিয়ে হুড
বুকের মধ্যে আলগোছে আমার মাথা টেনে নিয়ে বলবে, ‘এই দেখ্, এখানে
কেঁপে কেঁপে কার নাম বাজে!’ আমরাও ডেটিঙে যাবো, ঘর ছেড়ে
অচেনা অরণ্যে যাবো হারিয়ে; বিপুল জনসমক্ষে পিঠের উপর সন্তর্পণে
ছুঁইয়ে দেবে ঠোঁট, অতঃপর আকর্ণ লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেবে।
আমার স্ত্রীকে ভালোবাসতে হবে নজরুল আর সম্রাট করিমের গান-
রাতের মাদকতায় গুনগুন করে গাইবে- ‘তুমি ঘুমঘোরে এলে মনোহর’, অথবা
‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু, ছেড়ে যাইবা যদি। ’
আমার স্ত্রীকে কবিতা ভালোবাসতে হবে।
সোনাবীজের কবিতা না পড়ুক, পড়ুক সে
শামসুর রাহমান, হেলাল হাফিজ কিংবা নীল লোহিতের হৃদয়ছেঁড়া কবিতাগুলো।
সে বিলকুল না পড়ুক কবিতা, কবিতার প্রেমিকারা যেরূপে সবটুকু বিলিয়ে দেয়
তেমনি সে আমাকে উজাড় করে সবটুকু দেবে, অথচ কিছুই দেবে না।
নতুন রূপে দেখা দিতে হঠাৎ হঠাৎ সে হারিয়ে যাবে
তারপর যতবার সামনে দাঁড়াবে, ততবার উন্মোচিত হবে নতুন বইয়ের মোড়ক।
আমার প্রেমিকাকেই আমার স্ত্রী হতে হবে।
আমার স্ত্রীকে হতে হবে আমার মায়ের মতো।
৫ অক্টোবর ২০১৩
***
এ লেখাটি আমি এক অনুজ কবির কবিতা থেকে প্রভাবিত হয়ে লিখেছি। তাঁর নাম মর্জিনা মতিন কবিতা। মর্জিন মতিন কবিতার কাব্যাণুগ্রন্থ আজ, কাল ও পরশুর কবিতার অন্তর্গত আমার প্রেমিককে হতে হবে-এর অনুরূপে একটা প্যারোডি লিখে বসি অলওয়েজ ড্রিমের বিয়ের বিজ্ঞাপনে (২৫ নম্বর কমেন্ট) পরে মনে হয়, প্যারোডি নয়, এটা তো জীবনের একটা সুগভীর অনুষঙ্গ, ব্যাপারটা সিরিয়াসলি ভাবাই ভালো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।