কিছু দিন আগে (21-9-13) কেনিয়ার নাইরোবি শহরের একটি অভিজাত জনবহুল সপিংমল ওয়েষ্টগেইট এ একটি ভয়াবহ সন্ত্রসি হামলা হয়। বিকেলে পিক টাইমে ১০-১৫ জন সন্ত্রাসি ভারি অস্রসস্ত্র নিয়ে ভবনটিতে ঢুকে পরে। এরপর নির্বিচারে লোকজনদের উপর গুলি চালাতে থাকে। তারা আগেই ৪ তালা সপিং সেন্টারের সবগুলো বহির্গমন পথ বন্ধ করে দেয়। অল্প কিছু লোক অবস্য তার আগেই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল।
৪-৫ দিন অবরুদ্ধ থেকে শতাধিক নিহত হওয়ার পরও আমাদের মিডিয়াতে অতি সামান্যই প্রাধান্য পেয়েছিল।
যেভাবে শুরু
মুখোশধারি ১০-১২ জনের একদল সন্ত্রসি গুলি ছুড়তে ছুড়তে ভবনটির প্রধান গেট দিয়ে ঢুকে পরে। ভেতরে দোকানে ও লবিতে এলোপাথারি গুলি ও গ্রেনেড ছুড়তে থাকে
যেভাবে খুনে সন্ত্রাসিরা শপিংমলে তান্ডোব চালিয়েছিল, নৃশংস ভাবে শতাধিক হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল।
তারা নির্বিচারে যাকেই সামনে পেয়েছে তাকেই গুলি করেছে। এজাবৎ প্রাপ্ত তথ্যে সন্ত্রাসিরা পার্শবর্তি সোমালিয়ার আলকায়দার সহযোগি আল-সাবাব মৌলবাদি, তারা ভাঙ্গা ইরেজিতে কথা বলছিল।
তাদের সাথে থাকা স্মার্টফোনে কিছুক্ষন পরপর টুইট করছিল। প্রথম দিন কিছু মুসলিমকে ডেকে প্রধান গেট দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল।
এই আত্নঘাতি জঙ্গিদের মুলত কোন দাবি ছিল না। কাউকে জিম্মি করার ইচ্ছেও ছিলনা। কোন নিগোসিয়েশনের চেষ্টা করেনি।
কাজ ছিল সুধু খুজে খুজে খুন করা, মহিলা কেন .. শিশু বাচ্চারাও রেহাই পায় নি।
নৃশংস! ফুড কোর্টের দোকানি, পরিবার সহ খেতে আসা লোকজন আসবাবের নীচে ঢুকেও বাচতে পারেনি
মৃত্যুর আগে সংঙ্গিকে নিজের পিঠ দিয়ে গুলি ঠেকানোর চেষ্টায় জড়িয়ে ধরেছিল সপিং এ আসা এক যুগল
জিম্মি মুক্ত করতে পরে সেনাবাহিনী তলব করা হয়। সেনাবাহিনীর দেখা পেয়ে বেপরোয়া ভাবে জিম্মিদের দিকে গুলি ও গ্রেনেড ছুড়তে থাকে, বোমা বিষ্ফোরন ঘটায়। কিছু জিম্মি পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকে.
অকুতভয় কয়েকজন সাদা পোষাকে পুলিশ বিপদজনক অভিযান চালিয়ে প্রথমেই অনেককে বেরকরে আনতে সক্ষম হয়। এই চেক শার্ট পরা লোকটির নাম আবদুল হাজি।
নায়রোবি সিটি পুলিশ আফিসার। সেনা বাহিনীর কমান্ডোরা যখন হিমসিম খাচ্ছিল, ভেতরে ঢুকতে সাহস পাচ্ছিলনা, তখন এই আবদুল হাজি একাই ভেতরে ঢুকতে রাজি হয়। তার সাহসি ইচ্ছা তার সহকর্মিদেরও অনুপ্রানিত করে তার দুই সহকর্মিও তার সাথে মৃত্যুপুরিতে ঢুকতে ইচ্ছা প্রকাশ করে। আবদুল হাজিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ভেতরে ঢুকতে বলেছিল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা, কিন্তু সে রাজি হয় নি। হাজি বলেছিল এতে মুভমেন্ট, ক্ষিপ্রতা কমে যাবে।
হাজি খুব সন্তর্পনে ভেতরে ঢুকে এক অস্ত্রধারি সন্ত্রাসিকে পিস্তলের গুলিতে হত্যা করে টেবিলের নীচে লুকিয়ে থাকা একটি পরিবারকে নিরাপদ পথ দেখিয়ে বের করে আনে। এভাবে আরো অনেককে বের করে আনা হয়।
গো ...গো .. কিপ ইয়োর হেড ডাউন ..
মৃত্যুপুরি থেকে ফিরে আসার আনন্দাশ্রু
দুঃসাহসি আবদুল হাজি কেনিয় গনমাধ্যমের কাছে রিতিমত সুপার হিরো তে পরিনত হয়েছিল। যদিও আমাদের দেশে কেউ সুপার হিরো হতে পারে না। কিছু একটা ঘটলে সেটাকে 'সাজানো ঘটনা' বলার প্রতিযোগিতা সুরু হয়ে যায়।
চান মিয়া ১০০ ফিট পানির নীচে নিজের লাইফলাইন খুজে পাওয়া বাসে বেধে নিজের জীবনের গুরুতর ঝুকি নিয়েছিলেন, রানাপ্লাজায় কায়কোবাদ, খায়েররা নিজেদের জীবনের ঝুকি নিয়ে শাহিনাকে উদ্ধার করতে ড্রিল মেশিন নিয়ে ৪০ ফুট নীচের পাতালে নেমেছিল। নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল অকুতভয় কায়কোবাদ।
আমারা তাকে সেই পরিমান সম্মান দেইনি, বরং রানা প্লাজার লাশ লুকানো হচ্ছে বলেছি, রেশমা ঘটনাও সাজানো বলেছি। পিলখানায় নানক একাই ঢুকেছিল একটি সাদা পতাকা হাতে নিয়ে, কেনিয়ায় আবদুল হাজির কাছে অস্ত্র ছিল, সাথে ছিল দুই-তিনজন সসস্ত্র সহকারি। নানকের সাথে কেউই ছিলনা এরপরও নানককে সুধু 'সাজানো'ই বলা হয় নি, খুনিদের সহযোগী বলে অপবাদ দেয়া হয়েছিল।
কেনিয়াতে হাজি সুপার হিরো বলে সম্মান পেয়েছে, কারন সে দেশটি আমাদের মত মুক্তিযুদ্ধ পন্থি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধি বলে বিভক্ত না, সে দেশে আমাদের দেশের মত রাজাকার পালা হয় না। তাই সে দেশে আবদুল হাজিরা বিনা বিতর্কে সুপার হিরো।
পরাজিত হওয়ার আগে সন্ত্রাসিরা বিল্ডিংটি উড়িয়ে দেয়ার জন্য বিষ্ফোরন ঘটায়, এতে ভবনটির একটি অংশ ধসে পরে।
৫ দিন পরেও নিরাপদ হয়নি ওয়েষ্টগেট সপিংমল, লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের খোজে সৈনরা।
কেনিয় সামরিক বাহিনী কয়েক বার সপিংমলটি জঙ্গি মুক্ত নিরাপদ ঘোষনা করার পরও ভেতর থেকে জংগিদের চোরাগুপ্তা গুলির শব্দ পাওয়া যায়।
ওয়েষ্টগেট সপিংমলটিতে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ছিলনা বললেই চলে, অপর্যাপ্ত CC Tv তাও বেশির ভাগ ছিল বিকল। cctvর নিয়ন্ত্রন ভবনটির ভেতরে হওয়ায় কোন কাজে আসে নি। নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালানোর সময় জংগিদের অবস্থানের ব্যাপারে অন্ধকারেই ছিল পুলিশ।
আমাদেরও সতর্ক হতে হবে
মুম্বাই গ্রান্ডতাজ হোটেল হামলা, রাশিয়াতে স্কুলে চেচেন হামলা ও সম্প্রতি নায়রোবি ওয়েষ্টগেট সপিং মলে হামলা থেকে আমাদেরও শিক্ষা গ্রহন করা উচিত।
বসুন্ধরা সহ দেশের বড় বড় সপিংসেন্টার, সংসদভবন, বাইতুলমকারম মসজিদ ও বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন ভবনের cctv নিয়ন্ত্রন ভবনের বাহিরে একটি গোপন যায়গায় করতে হবে।
ভেতরে সাদা পোষাকে দোকানির ছদ্দবেশে নিরাপত্তা কর্মি থাকা বাধ্যতামুলক করতে হবে, তাতে পুরনো পদ্ধতির তার যুক্ত যোগাযোগ থাকবে যাতে ভবনে জ্যামার দিয়ে সন্ত্রসিদের মোবাইল বা বেতার যন্ত্র অকেজো করা হলেও নিরাপত্তা স্টাফদের যোগাযোগ অটুট থাকে। প্রতিটি ফ্লোরের অন্তত একটি দেয়াল গোপনে চিহ্নিত করে রাখতে হবে, যে দেয়ালটি রিয়েল অপারেশনের সময় বিষ্ফোরনে উড়িয়ে দিয়ে কমান্ডো প্রবেশ করবে ফায়ারব্রীগেডের লিফটার দিয়ে।
আমাদের অবস্য একটি প্রশিক্ষিত এন্টি টেরোরিষ্ট স্কোয়ার্ড আছে, 'সোয়াট' মার্কিন সহযোগিতায়। আরো দরকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।