দেশের স্বনামধন্য একজন চিকিৎসকের কাছে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের নামে ঈদ উপলক্ষে চাঁদা দাবি করা হয়। যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যার অন্যতম আসামি সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চলের নাম করে চাঁদা দাবি করা হয়েছে পাঁচতারকা একটি হোটেলের পদস্থ কর্মকর্তার কাছে। ভীতসন্ত্রস্ত ওই চিকিৎসক এবং হোটেল কর্মকর্তা র্যাব-১ এ অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া ক'দিন আগে মিরপুরে চাঁদার দাবিতে সন্ত্রাসীরা বাসায় ঢুকে গুলি করে হত্যা করে একজন আবাসন ব্যবসায়ীকে। এ ছাড়া বাড্ডা এলাকায় অস্ত্রধারীরা চাঁদা না পেয়ে আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে জবাই করে হত্যা করে।
রাজধানীতে ঈদকে কেন্দ্র করে টেলিফোনে অথবা সশরীরে চাঁদাবাজির ধুম পড়েছে। সড়ক থেকে ফুটপাত, মার্কেট থেকে বাসাবাড়ি, কাঁচাবাজার, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল সর্বত্রই চলছে চাঁদাবাজি। র্যাব-পুলিশের পাহারা সত্ত্বেও চাঁদাবাজরা ঈদ বকশিশের নামে দুই হাতে চাঁদা তুলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে যেমন চাঁদাবাজি হচ্ছে, তেমনি হচ্ছে রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের নামেও। কোনো স্থানে আবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্যাডাররা জোট হয়ে চাঁদাবাজি করছে।
ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, চাঁদাবাজদের দৌরাত্দ্যও ততই বাড়ছে। চাঁদা না পেয়ে তারা খুনখারাবির ঘটনাও ঘটাচ্ছে। তবে অধিকাংশ ঘটনায় চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ। এ অবস্থায় চাঁদাবাজরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এক মাসে দুই শতাধিক ব্যক্তি চাঁদা দাবি ও হুমকির আশঙ্কা করে র্যাব ও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ঈদের আগে চাঁদাবাজি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছে। প্রকৌশলী, চিকিৎসক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক নেতাদের চার্গেট করে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। এ ছাড়া খেটে খাওয়া মানুষও চাঁদাবাজদের হুমকি-ধমকিতে আতঙ্কিত। ডিএমপির কোনো না কোনো থানায় প্রায় প্রতিদিনই এ-সংক্রান্ত জিডি হচ্ছে।
ফলে চাঁদাবাজদের ভয়ে চরম অস্থিরতার মধ্যে রয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ এস এম শাহজাহান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে সামাজিক অপরাধ বাড়ে। চাঁদাবাজির ১০০টি ঘটনা ঘটলেও সব ঘটনায় মামলা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ঝামেলা এড়াতে কোনোটি জিডি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। আবার মামলা হলেও ভুক্তভোগীরা অনেক সময় ভয়ে সাক্ষ্য দিতে যান না।
এসব কারণে আসামিরা ছাড়া পেয়ে যায়। এসব দমনে দরকার দক্ষ বাহিনী। এ ছাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রশ্রয় বন্ধ না হলে এ অপরাধ কমবে না। পুলিশের আইজি খন্দকার হাসান মাহমুদ জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগ আগের চেয়ে কম আসছে। প্রায় প্রতিদিন পুলিশ চাঁদাবাজ গ্রেফতার করছে।
চাঁদাবাজ প্রতিরোধে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিভাগ খোলা হয়েছে। র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কিসমত হায়াত জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম, শাহাদাত, সুব্রত বাইন, বিকাশ, কালা জাহাঙ্গীরের নামে মোবাইল ফোনে বেপরোয়া চাঁদাবাজি হলেও এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যা মামলার পলাতক আসামি শাখাওয়াত হোসেন চঞ্চলের নাম। তাদের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। যা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঈদ মৌসুমে ২০ শতাংশ চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
চাঁদাবাজদের গ্রেফতারে র্যাবের টিম কাজ করছে। গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্যমতে, রাজধানীতে তিন শতাধিক চাঁদাবাজ গ্রেফতার এড়িয়ে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, চাঁদাবাজদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রমতে, মিরপুর, শাহআলী, দারুস সালাম, পল্লবী, কাফরুল, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, গুলশান, রমনা, উত্তরা, বাড্ডা, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, জুরাইনসহ অনেক এলাকায় চাঁদাবাজি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
ভুক্তভোগী কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, চাঁদাবাজদের ভয়ে তারা আতঙ্কিত। চাঁদাবাজরা এখন ল্যান্ডফোনে চাঁদা দাবি করছে। তারা ফোনে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। তারা জানায়, গেটের সামনেই অস্ত্র নিয়ে তাদের লোকজন অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া যে সময় তাদের সন্তানরা স্কুল-কলেজে যায়, সে সময়ও তাদের জানা রয়েছে।
এ কারণে প্রতিনিয়ত তারা ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন।
জানা যায়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি কর্মকর্তা ও নির্মাণাধীন বাড়ির মালিককে চিঠি দিয়ে বা ফোন করে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। চিরকুটে সন্ত্রাসীদের নাম ও ফোন নম্বর দেওয়া হচ্ছে। চিরকুট পৌঁছে দেওয়া হয় বাড়ির দারোয়ান, পিয়ন ও কর্মচারীদের হাতে। চিরকুট নিতে না চাইলে গুলি বা মারধর করা হয়।
আতঙ্ক ছড়াতে খামে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কাফনের কাপড়। এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে এক মাসের মধ্যে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অপরাধীরা আবারও প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। তারা চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে চাঁদাবাজি হচ্ছে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।