গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। আগামী ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান ও তল্লাশি বেড়ে যাওয়ায় এ আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ আতঙ্ক এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। শুধু তাই নয়, এ আতঙ্ক সংক্রমিত হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।
বিরোধী দলের অভিযোগ, ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপি সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ার আশঙ্কা করছে।
আর এ কারণেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়িতে। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এখন ঘরছাড়া। বহু নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল এক ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ বাহিনীতে সরকারের অনুগত একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি টর্চার স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে। জামায়াতের দাবি, জেলায় জেলায় জামায়াত-শিবির কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
কেউ বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না। পুলিশ বলছে, আগামী ২৫ অক্টোবরকে টার্গেট করে সারা দেশে বড় আকারের নাশকতার আশঙ্কা করছে সরকার। এ কারণে সব ধরনের সতর্কতা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। সতর্কতার অংশ হিসেবেই পুলিশ বিভিন্ন মামলার আসামি গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে হাসান মাহমুদ খন্দকার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৫ অক্টোবরকে আলাদা করে কিছু ভাবছি না।
বিধিবদ্ধ আইনের বাইরে কিছু করা হলে সেটি হবে অপরাধ। পুলিশ বিধিবদ্ধ আইনের মধ্যে থেকেই অপরাধী গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য প্রসঙ্গে পুলিশ প্রধান বলেন, এ ধরনের কোনো স্কোয়াড থাকার প্রশ্নই উঠে না। বিএনপির জেলা পর্যায়ের একজন নেতা জানান, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ রয়েছে, কোনোভাবেই গ্রেফতার হওয়া চলবে না। তাই নেতা-কর্মীরা এখন গা-ঢাকা দিয়ে আছেন।
জানা গেছে, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দফায় দফায় অভিযান চালাচ্ছে। তাদের খোঁজে ঘনিষ্ঠ আত্দীয়স্বজনদের বাসাবাড়িও অভিযানের বাইরে থাকছে না। এমন পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা কেউ বাসাবাড়িতে থাকছেন না। বাসার বাইরে অধিক নিরাপদ মনে করছেন তারা। আবার অনেক নেতা স্থানীয় পুলিশকে ম্যানেজ করে নিজে সেফজোনে রেখেছেন।
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ পেয়েছি। কোনোভাবেই যাতে নিজেদের এলাকায় কোনো বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড না ঘটে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত নেতাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় তালিকা ধরে তাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলেই গ্রেফতার করার নির্দেশ পেয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, আন্দোলনের মাঠে বিপজ্জনক নেতাদের চিহ্নত করে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তালিকা নিয়ে তাদের বাসাবাড়িতে পুলিশ ও গোয়েন্দারা দফায় দফায় হানা দিচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের অসংখ্য টিম এ বিশেষ অভিযানে অংশ নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন চিহ্নিত স্পট, আবাসিক হোটেল, বস্তি, মেস এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ ও র্যাব থেকে বলা হয়, জঙ্গি কানেকশনে জড়িত নেতা-কর্মীদের প্রতি নজরদারি রাখা হচ্ছে।
অনুসন্ধান ও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের। রাজধানীসহ দেশের যেসব এলাকায় নাশকতা কিংবা সহিংস ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, সেসব এলাকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।
মেলেনি ২৫ অক্টোবরের সমাবেশের অনুমতি : রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, পল্টন ময়দান ও নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক চিঠি দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে। গতকাল পর্যন্ত অনুমতি পায়নি দলটি।
এ প্রসঙ্গে আবদুস সালাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গতকাল পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি পাননি তারা। তবে ঈদের পর অনুমতি পাওয়ার আশা করছি আমরা।
গ্রেফতার এড়ানোর নির্দেশ খালেদা জিয়ার : আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে গ্রেফতার এড়াতে দলের নেতাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বেগম জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দফতর শাখা ইতোমধ্যেই দলের কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা ও মহানগর শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের এই নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
বাসায় তল্লাশি : আগামী ২৫ অক্টোবরের সমাবেশকে ঘিরে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান শুরু করে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
ওই রাতে ১৮ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মবিনসহ তার দলের ৭ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। একই দিনে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমানের চুয়াডাঙ্গার বাসায়, রাজধানীর সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল আজিজসহ ঢাকা মহানগর বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার বাসায় সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালায় এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে। গতকাল চাঁদপুরের কচুয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আবেদিন স্বপন, ছাত্রদল সভাপতি হাবিবুন নবী সুমন ও জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করা হয়। রাজধানী ছাড়াও রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল মহানগরের ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপির নেতারাও ইতোমধ্যেই বাসা ছাড়া হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব থেকে শুরু করে মধ্য সারির নেতা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা ইতোমধ্যেই বাসা ছাড়া হয়েছেন।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে বৈঠকের পর পুলিশকে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেন। ২৫ অক্টোবরের ব্যাপারে পুলিশের পরিকল্পনা কী তা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। সে হিসেবে বিরোধী শিবিরের নামের তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশ। বিগত দিনে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল আন্দোলনে গাড়ি ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি, সহযোগী এবং সন্দেহভাজনদের নামও তালিকায় রয়েছে।
একই সঙ্গে অতীতে কারা অপরাধ বা বিশৃঙ্খলা করেছে তাদের সম্ভাব্য স্থান বা বাসাবাড়িগুলোও এ অভিযানের আওতায় নেওয়া হয়েছে। হরতাল-আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার ছবি, ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের মুভমেন্ট পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।