মহাজোটের দ্বিতীয় প্রধান শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে চরম বেকায়দায় রয়েছেন। প্রচণ্ড সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তিনি। শ্যাম রাখি না কুল রাখি- এ অবস্থার মধ্য দিয়ে এরশাদ নিজেও জানেন না তিনি কোন দিকে ধাবিত হচ্ছেন। একেক সমাবেশে একেক কথা বলছেন। একবার বলছেন, জাতীয় পার্টি আর মহাজোটে নেই।
আবার মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিচ্ছেন (গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন)। আবার বলছেন, এখনো মহাজোটে আছি তবে আগামীতে এককভাবে নির্বাচন করব। তিনি বলছেন, তার দল নির্বাচনমুখী দল, আগামীতে নির্বাচনে অংশ নেবে। আবার এ কথাও বলছেন, সব দল না এলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে না। এদিকে, একক নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও অনেকটা প্রকাশ্যেই পার্টির প্রেসিডিয়ামের একটি অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে লবিং করছে।
আরেকটি অংশ লবিং করছে বিএনপির সঙ্গে। আবার এরশাদের নেতৃত্বে একটি জোট করার কথাও বলছে। এ অবস্থায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এরশাদ আসলে কার। তিনি একক না নতুন জোট না মহাজোটের সঙ্গেই থাকবেন, নাকি ১৮ দলীয় জোটে যাবেন। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এরশাদ আগামীতে ক্ষমতার সঙ্গেই থাকতে চাইছেন।
এরশাদের নির্দেশেই পার্টির প্রেসিডিয়ামের দুটি অংশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা করে চলেছে। আগামীতে ক্ষমতায় কারা আসছে তা অনেকটা নিশ্চিত হওয়ার পরই ঘোষণা দেবেন এরশাদ কার। সূত্রটি জানায়, ২৪ অক্টোবরের পর আওয়ামী লীগ নির্বাচনের কথা বলছে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগ সম্পন্ন করতে পারবে এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে এমনটা বুঝতে পারলে মহাজোটে থেকেই নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। এ ক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে না এলে একক নির্বাচন করবে।
আর যদি বুঝতে পারে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৮ দলের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ টিকতে পারবে না, ক্ষমতায় আসতে পারবে না; তাহলে বিএনপির সঙ্গে লিয়াজোঁ করা অংশটিকে দিয়ে ১৮ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টি নতুন জোট বাঁধবে।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, এরশাদের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, নির্বাচন সামনে রেখে নানা মহল থেকে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, প্রস্তাব আসছে। তিনি বলেন, জনগণ যেদিকে চাইবে জাতীয় পার্টি সেদিকে যাবে। সব দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে আমরাও নেব। তিনি বলেন, নির্বাচন হবে কি না এ নিয়ে জাতি ধূম্রজালে আছে।
নির্বাচনের আলামত নেই। তিনি বলেন, ২৪ অক্টোবরের পর সরকার যেভাবে চাইছে সেভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে না।
কেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্তহীনতায় সে সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় পার্টি মহাজোটেই থাকবে না ১৮ দলীয় জোটে যাবে_ এ নিয়ে বিভক্ত হয়ে গেছেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে কাজী জাফরসহ প্রেসিডিয়ামের অধিকাংশ সদস্যই মহাজোটে না থাকার পক্ষে, অন্যদিকে এরশাদের ভাই বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন বাবলুসহ দলের ক্ষুদ্র একটি অংশ মহাজোটের সঙ্গেই থাকতে চান। ৪৭ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ৩৫ জনই মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির বেরিয়ে আসার পক্ষে।
একটি অংশ একক বা তৃতীয় জোট করতে চায়। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যরা বিভক্ত হওয়ায় কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি। কীভাবে জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণ করা যায়, পার্টির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যায়_ এ ভাবনায় তাড়িত হয়ে চরম সিদ্ধান্তহীনতায় এরশাদ। এদিকে, জাতীয় পার্টি কোন দিকে যাচ্ছে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পার্টির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা পড়েছেন বিপাকে। এরশাদের কাছের শীর্ষ নেতারা জানান, মহাজোটের সঙ্গে থাকলে একটি অংশ বিএনপিতে চলে যাবে।
আবার বিএনপির সঙ্গে গেলে একটি অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে চলে যাবে। সব মিলিয়ে চরম সিদ্ধান্তহীনতায় সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। তবে যাই হোক, ক্ষমতার সঙ্গেই থাকতে চান তিনি। নেতা-কর্মীরা জানান, দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী দেড় বছর ধরে মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। কিন্তু এরশাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা কারণে এখনই মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিচ্ছে না জাতীয় পার্টি।
নেতা-কর্মীরা পার্টির চেয়ারম্যানকে বলছেন, মহাজোটে থেকেও তারা স্থানীয় এমপি, সরকারের কাছ থেকে নূ্যনতম সুযোগ-সুবিধা পাননি। সর্বত্র তাদের উপেক্ষা, অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যানও নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করায় বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করছেন। কিন্তু গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায়, ভাই জি এম কাদের মন্ত্রিসভায় থাকায় এরশাদের এ সমালোচনা খোদ নেতা-কর্মীরাই বিশ্বাস করছেন না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।