অর্থ নয়, কীর্তি নয়...আরো এক বিপন্ন বিস্ময়/আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে খেলা করে । । ১। ।
লুইপাদনাম্
রাগ- পটমঞ্জরী
কাআ তরুবর পাঞ্চ১ বি ডাল ।
চঞ্চল চীএ পইঠা২ কাল । । [ধ্রু] । ।
দিঢ়৩ করিঅ মহাসুহ পরিমাণ ।
লুই ভণই গুরু পূছিঅ৪ জাণ । । ধ্রু । ।
সঅল সমাহিঅ৫ কাহি করি অই ।
সুখ দুখেতে নিচিত মরিঅই৬ । । ধ্রু । ।
এড়িঅউ৭ ছান্দ৮ বান্ধ করণ৯ কপটের১০ আস ।
সূনু১১ পথে ভিড়ি১২ লাহু রে পাস । । ধ্রু । ।
ভণই লুই আম্হে ঝাণে১৩ দীঠা১৪ ।
ধমণ চবণ১৫ বেণি পিণ্ডী১৬ বইঠা১৭ । । ধ্রু । ।
পাঠান্তরঃ
১. পঞ্চ (ক) ২. পইঠো (ক) ৩. দিট (ক) ৪. পুচ্ছিঅ (ক, ঘ) ৫. সহিঅ (ক) ৬. মরিআই (ক, ঘ) ৭. এড়িএউ (ক) ৮. ছান্দক (ক) ৯. করণক (ক, ঘ) ১০. পাটের (ক, ঘ) ১১. সুনু (ক, ঘ) ১২. ভিতি (ক) ১৩. সাণে (ক, ঘ) ১৪. দিঠা (ক, ঘ) ১৫. চমণ (ক, ঘ) ১৬. পাণ্ডি (ক, গ) ১৭. বইণ (ক)
শব্দার্থ, টীকা, ব্যুৎপত্তিঃ
কাআ- কায়া।
পাঞ্চ বি- পাঁচটিই; বি- অপি-জাত। চীএ- চিত্ত + এ (সপ্তমীর চিহ্ন) > চীঅ + এ = চীএ। পইঠা- প্রবিষ্টঃ > পইট্ঠ > পইঠ + আ। দিঢ় < দৃঢ়। করিঅ < করিত* < ক্ত।
মহাসুহ < মহাসুখ। পরমাণ- প্রমাণয় > পরিমাণয় > পরিমাণ। ভণই < ভণতি। পূছিঅ < পুঁচ্ছিঅ < পুচ্ছিত*। জাণ- জানথ > জাণহ > জাণঅ > জাণ।
সঅল < সকল। সমাহিঅ < সমাধিভিঃ। কাহি- কসা > কা + হি। করিঅই < কর্যতে* < ক্রিয়তে – করা হয়। দুখেতে- দুঃখ > দুখ + ত (অন্ত-জাত) + এ (> এন)।
নিচিত < নিশ্চিত মরিঅই- ম্রিয়তে > মর্যতে* > মরিঅই। এড়িঅউ ছাড় (অনুজ্ঞা)। ছান্দ- ছন্দ, আদি হ্রস্বস্বর দীর্ঘ হয়েছে (চর্যাপদের স্বরের হ্রস্বদীর্ঘ উচ্চারণের কোন সুস্পষ্ট নিয়ম পাওয়া যায় না)। বান্ধ < বন্ধনম্। করণ- ইন্দ্রিয়।
আস < আশা। সূনুপাখ < শূন্যপক্ষ [ব্লগারের বক্তব্যঃ টীকার এই শব্দটি অনুসারে মূল চর্যাটিতে ‘সূনুপাখ’ শব্দটির ব্যবহারের কথা। কিন্তু আমার হাতে যে সংস্করণটি আছে, তাতে আছে ‘সূনু পথে’। সম্ভবত এটি মুদ্রণ প্রমাদ। ] ভিড়ি- অসমাপিকা ক্রিয়া, ভিড়িয়া।
লাহু- লও; লভ > লহ > লহ + উ (অনুজ্ঞায়)। পাস < পার্শ্ব। আম্হে < অস্মাভিঃ। ঝাণে- ধ্যানেন > ঝাণে। দিঠা < দিট্ঠ < দৃষ্ট।
ধমন < ধ্যান পূরক বায়ু। চবণ < চ্যবণ; রেচক বায়ু। বেণি- দ্বীণি > বেণ্নি > বেণি; দুই। পিণ্ডী- পিঁড়ি। বইঠা- উপবিষ্ট > বইঠ + আ।
আধুনিক বাংলায় রূপান্তরঃ
শ্রেষ্ঠ তরু (সদৃশ) এই শরীর, পাঁচটিই তার ডাল। চঞ্চল চিত্তে (ধ্বংস-রূপী) কাল প্রবেশ করে। (এই চিত্তকে) দৃঢ় ক’রে মহাসুখ পরিমাণ কর। লুই বলেন, গুরুকে শুধিয়ে জেনে নাও (কিভাবে তা করতে হয়)। কেন করা হয় সমস্ত সমাধি ? সুখে-দুঃখে সে নিশ্চিত মারা যায়।
(যোগাচারের) ছন্দ-বন্ধ (এবং) কপট ইন্দ্রিয়ের আশা পরিত্যাগ কর। শূন্যতা-পক্ষে ভিড়ে পার্শ্বে নাও (শূন্যতা-পক্ষের দিকে এগিয়ে যাও)। লুই বলেন- আমি ধমন চমন (নামক দুই পিঁড়িতে উপবিষ্ট হয়ে ধ্যানে শূন্যতাকে) দেখেছি।
অন্তর্নিহিত ভাবঃ
শরীরের পাঁচ ইন্দ্রিয় পাঁচটি ডালস্বরূপ। এই পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারা বাইরের বস্তুজগতের সঙ্গে মানুষের নিত্য জানাশোনার পালা চলেছে- জানাশোনা যতই বাড়ে ততই বেশী ক’রে প্রীতির সঞ্চার হয় এবং বস্তুজগৎকেই চরম ও পরম জ্ঞান ক’রে মানুষ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়।
কিন্তু বস্তুজগতের মায়ামোহ-বন্ধন মানুষের জন্য ধ্বংসের পথ। বাঁচার পথ দেখাতে পারেন গুরু। সেই গুরুর নির্দেশে ইন্দ্রিয়ের পথ পরিহার ক’রে যোগ-সাধনার পথ বেছে নিতে হবে। সিদ্ধাচার্য লুইপাদ সে কথা বুঝেছেন, এবং তাই যোগ সাধনায় উপবিষ্ট হয়েছেন।
উদ্ধৃতিঃ মুহম্মদ আব্দুল হাই ও আনোয়ার পাশা সম্পাদিত ‘চর্যাগীতিকা’
সুরঃ ডঃ কৃষ্ণপদ মণ্ডল রচিত ‘বাংলার রাগসংগীত’ এ নির্দেশিত স্বরলিপি অনুসারে
অডিও লিংক
https://soundcloud.com/user529002985/charya-1
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।