স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । তবে স্বপ্ন দেখা নিয়ে কিছুদিন যাবত একটা সমস্যা হয়ে গেছে । নতুন দেখা স্বপ্নগুলো কেন যেন পূরণ হচ্ছে না খুব শীঘ্রই এই সমস্যা কেটে যাবে এই আশাতেই আছি । দুই বন্ধু মিলিয়া তাহার নাম রাখিয়াছি মিঃ স্যামি । কিছুকাল পূর্বে Sammy's Adventure নামক একখানা চমকপ্রদ চলচ্চিত্র অবলোকন করিয়াছিলাম যাহা স্যামির-ই কোন এক জাতিগত আত্নীয়ের দুঃসাহসিক জীবন কাহিনীর উপর ভিত্তি করিয়া নির্মিত ।
ওখান হইতেই নামখানা ধার করা ।
স্যামির নিবাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ মাস্টারদা সূর্যসেন হলের বাগানের দক্ষিন পার্শ্বস্থ এক চৌবাচ্চায় । ঐ চৌবাচ্চার বেদীতে আমরা দুই বন্ধু প্রায়শই পরীক্ষা দিবসের প্রভাতে অধ্যয়ন করিবার ব্যর্থ ও সম্পূর্নরুপে অফলপ্রসূ প্রচেষ্টা করিয়া থাকি । ওমনই এক প্রভাতে তাহার সাথে পরিচয় । দুই বন্ধু যখন অধ্যয়ন নামক বিভীষিকার নিকট নাকাল , পর্যদুস্ত হইয়া পুস্তকাদি কুটিকুটি করতঃ হস্ত উত্তমরুপে ডেটল সাবান দিয়া ধৌত করিয়া ঝাড়া হাত পা হইয়া যাইবো কিনা গভীর মনোযোগের সহীত বিবেচনা করিতেছিলাম তখনই স্যামির উদয় ।
দেখি চৌবাচ্চার জল হইতে ঘাড় উচাঁইয়া সে ড্যাবড্যাব করিয়া এক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকাইয়া রহিয়াছে । কি ছিলো তাহার সেদিনের দৃষ্টিতে ? করুনা , সহমর্মিতা , তাচ্ছিল্য , জিঘাংসা নাকি শিক্ষকসুলভ বিরক্তি ? এই প্রশ্নের জবাব আজো মাথা খাটাইয়া বের করিতে পারি নাই । ঠিক একইভাবে রহস্যাবৃত রহিয়া গেছে ছাত্রনিবাসের মতো অজলজ জায়গায় স্যামির মতো জলজ প্রানীর আগমনের উপায় , রহস্য বা কারণ যাহাই বলি না কেন তাহার সবই । স্যামির জীবন বড়ই কঠিন , নিঃসঙ্গ । তাহার জন্ম হইয়াছিলো স্বাধীনভাবে বিপুল জলরাশির মাথায় চাপিয়া দূর দূরান্তে পাড়ি জমাইবার জন্য , অথচ নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে তাহার জীবন কাটিতেছে এক বদ্ধ আর্বজনাময় খুপড়ি চৌবাচ্চায় ! স্যামির বন্দীত্বে বিবেকবান মানুষমাত্রই কষ্ট পাইবে ।
তাহাকে যে মুক্ত করিয়া অন্য কোন বৃহৎ জলাশয়ে ছাড়িয়া দিয়া আসিব সেই চেষ্টায় সে কোনরূপ সহযোগিতা করিবে বলিয়া মনে হয় না । অন্য দিকে অন্য কোন সঙ্গিনী যে তাহার জন্য আনিয়া দিব সেই ক্ষেত্রেও বিধিবাম । স্যামির লিঙ্গ নির্ণয় করা সম্ভবপর হয় নাই । কাজেই তাহাকে কোন সঙ্গিনী আনিয়া দেওয়ার পর যদি দেখা যায় সেও তার সমলিঙ্গের তবে তো কেলেঙ্কারি !!
স্যামির সহিত দেখা হইতো অনেকটা নিয়মিত । আমরা তাহার আবাসস্থলের বেদীতে বসিয়া চুল ছিড়িতে আরম্ভ করিবার পায়তারা করিতাম আর সে মনের আনন্দে আমাদের পাশে সাঁতার কাটিয়া বেড়াইতো , না হয় সূর্যের উত্তাপে নিজের খোলস শুকাইতো নতুবা ঘাড় বাঁকাইয়া তাকাইয়া থাকিত ।
সাঁতার কাটিতে কাটিত হঠাত্ ডুব দিয়া চলিয়া যাইতো জলের গভীরে , দৃষ্টিসীমার বাইরে । তবে ফিরিয়া আসিতো কিয়ত্ক্ষন পরেই । যেন জল হইতে একটু পরপরই উঁকি দিয়া খবর লইয়া যাইতো তাহার এই দুই মূর্খ সুহৃদের পড়াশোনার কতটুকু অগ্রগতি হইলো বা আদৌ কোন অগ্রগতি হইলো কিনা ?
বার্ষিক পরীক্ষা চলিতেছে । প্রচন্ড শীত , ঘন কুয়াশার কারণে এখন আর বাগানে বসা সুস্থ মস্তিষ্কের উত্তম বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত হইতে পারে না । নাচার হইয়া ছাত্রাবাসের নীরস রিডিংরুমে দিগ্বিজয়ী পড়ুয়াদের মাঝেই আমসত্ব হইয়া বসি ।
মন পড়িয়া থাকে বেদীতে । স্যামির সাথেও সাক্ষাত নাই বহুদিন । কেমন আছে সে ? কেমন কাটিতেছে চৌবাচ্চার বদ্ধ জলে তাহার নিঃসঙ্গ দিবস-রজনী ? আমাদের কথা কি তাহার মনে আছে , নাকি কচ্ছপ প্রজাতিকেও সৃষ্টিকর্তা মানবজাতির মতোই স্বার্থপর , ক্ষীনস্মৃতি দিয়া সৃষ্টি করিয়াছেন যাতে তাহারাও আমাদের মতোই অতি সহজে ভুলিয়া যাইতে পারে তাহাদের কথা যাহারা জীবনের চলার বাঁকে কোন এক সময় আমাদের প্রিয়জন হইয়া পাশে ছিলো বা নিঃস্বার্থভাবে প্রিয়জন হইতে চাহিয়াছিলো ? নাকি সেও আজ কাল বিভোর থাকে কেবল মাত্র নিজেকে লইয়াই ?
জানা সম্ভব না জানি , তবু জানিতে ইচ্ছা হয় । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।