আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন



বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন কিভাবে নিশ্চিত করা যায় ঃ বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া সম্ভব একমাত্র এবং কেবলমাত্র কেয়ার টেকার সরকারের মাধ্যমে । তবে বিভিন্ন সময়ে কেয়ার টেকার সরকারের নির্বাচনী ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, এতে মোট প্রাপ্ত সিট আর ভোট প্রাপ্তির “আনুপাতিক হারে যে সিট পাওয়া উচিত” এই দুয়ের মধ্যে যে বিরাট পার্থক্য এবং অসামঞ্জস্য থাকে তা রীতিমত সন্দেহজনক । এর ফলে প্রায় সকল ক্ষেত্রে পরাজিত দল কারচুপির অভিযোগ করে তা গ্রহন করতে রাজী হয় না ( যেমন, বর্তমানে আওয়ামী লীগ মাত্র ৫৭% ভোট পেয়ে তারা ৮৭% সিটের সুবিধা ভোগ করছে) । এতে ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অসন্তোষ লেগেই থাগে । আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশন মনে করে যে নির্বাচন হয়ে গেলেই তাদের দায়ীত্ব শেষ ।

এটা না করে তাদের উচিত হবে, ভোটের সব হিসাব সকল পক্ষকে বুঝিয়ে তারপর ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা । তাই তারা পুনঃ নীরিক্ষার ব্যপারে আগ্রহী হয় না । এর বাইরে বর্তমানে প্রধানতঃ দুইটি ( বা তিনটি) দলকে বারে বারে ক্ষমতায় আসতে দেখা যায় । এই প্রবনটি দূর করারও একটি ব্যবস্থা রাখা দরকার। বর্তমান অবস্থায় নির্বাচন নিরপেক্ষ করা, নির্বাচনের ফল সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য করা এবং নির্বাচনের উপর কারো অনাস্থা হতে পারে এমন কারনগুলি দূর করার একমাত্র উপায় হচ্ছে বিভিন্ন দল, মোর্চা বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারের উপর নির্ভর করে বিজয়ী নির্ধারন করা।

কিভাবে এটি করা যায় তা এখানে আলোচনা করা হচ্ছে । (১) গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচন হবে দল বা মোর্চা ভিত্তিক । দল বা মোর্চার পরিচয় হবে তারা নির্বাচনে একটি সাধারন মেনিফেস্টো বাস্তুবায়নের অঙ্গীকার করবেন । যারা মোর্চা গঠন করবেন তারা নিজেরা এর পরিচালক থাকবেন এবং নিজেরা নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবেন না । তবে দলের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয় ।

দল বা মোর্চা তাদের মেনিফেস্টোতে বিশ্বাসী এমন উপযুক্ত প্রার্থীকে তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করবেন । কোন দল বা মোর্চা থেকে নির্বাচিত কোন প্রার্থী সংসদের মেয়াদ কালে দল বা মোর্চা ত্যাগ করলে তার সদস্যপদ হারাবে । সাধারন ভাবে নির্বাচন কমিশন দল বা মোর্চার উল্লেখ বিহীন ভাবে বিভিন্ন প্রার্থীকে উপযুক্ত ঘোষনা করার পর, বিভিন্ন দল বা মোর্চা তাদের মধ্যে যারা তাদের মেনিফেস্টোতে বিশ্বাসী তাদেরকে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করবেন । কোন দল বা মোর্চা হিসেবে নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি পেতে হলে তাদেরকে মোট সিটের (আমাদের দেশে ৩০০) এক পঞ্চমাংশ সিটে প্রার্থী দিতে হবে । (২) কোন প্রার্থী দল বা মোর্চার সমর্থন না পাওয়া বা অন্য কোন কারনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারবেন ।

(৩) জাতীয় নির্বাচনে দল বা মোর্চার সর্বোচ্চ সংখ্যা হবে পাঁচ, আর কোন সিটে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন সর্বোচ্চ দশ জন । এর ফলে সর্বোচ্চ ১৫টি মার্কা সহ কেন্দ্রীয় ভাবে সব রকম নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ব্যালট পেপার মুদ্রন করা সম্ভব হবে । দল ও মোর্চার মার্কা নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় ভাবে নির্ধারন করে দেবেন । আর স্বতন্ত্রদের মার্কা স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত হবে । (৪) ভিড় এড়ানোর জন্য প্রয়োজনে পর পর দুইদিন ভোট গ্রহন করা হবে এবং সম্পুর্ন ভোট ভিডিও ক্যামেরায় রেকর্ড করা হবে ।

কোন কেন্দ্রে বিন্দুমাত্র সন্দেহজনক কিছু দেখা গেলে সেই কেন্দ্রের ফল বাতিল করে নতুন করে ভোট গ্রহন করা হবে । (৫) ভোট গননার সময় বিভিন্ন মার্কার ভোট আলাদা আলাদা বাক্সে রাখা হবে এবং ক্রমিক নম্বর ও স্বাক্ষর দিয়ে প্রতি ১০০ এর বান্ডিল করে রাখা হবে, যাতে পরে তা নীরিক্ষা করা যায় । (৬) নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন দল, মোর্চা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর (সকল স্বতন্ত্র প্রার্থীকে এক সাথে ধরে) প্রাপ্ত মোট ভোট, শতকরা হার এবং এই হার অনুযায়ী আনুপাতিক নিয়মে প্রাপ্ত তাদের সিটের সংখ্যা ঘোষনা করবেন । একই সঙ্গে তারা প্রার্থীর ভোটের শতকরা হার প্রকাশ করবেন । এর পর তারা প্রতিটি গ্রুপ (দল, মোর্চা এবইং স্বতন্ত্র) থেকে সর্বোচ্চ শতকরা হারে পাওয়া ভোটের ভিত্তিতে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষনা করবেন ।

এই পদ্ধতির দুটি প্রধান সুবিধা হল, (ক) ভোট একেবারে শেষ না হবার আগে কেউ ফলাফল জানতে পারবে না । তাই কোন বিশেষ কেন্দ্রে কাউকে দুটি বাক্স ভলে দিলেই যে সে নির্বাচিত হবে এমন কোন গ্যারান্টী থাকবে না । যেসব কারনে আমাদের দেশে ভোটের সময় স্বাভাবিক উত্তেজনা এবং তা থেকে নানা অপরাধ হয় (যেমন, আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত হলেই আমি ঠিকাদারী কাজটা পাব, অনেক টাকা ঢেলেছি- উনি না জিতলে তো সব গেল, ইত্যাদি) এইগুলির কোনটিই এই পদ্ধতিতে থাকবে না । (খ) এই পদ্ধতিতে প্রার্থীকে শুধু নিজের জন্য কাজ করলে চলবে না, বরং দল বা মোর্চাকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করতে হবে । আসলে এই দল বা মোর্চাকে জনপ্রিয় করার মধ্যেই রয়েছে গনতন্ত্রের সফলতার মূল কথা ।

বাংলাদেশের মানুষ বড় দুঃখী । পাকিস্তানীদের হাতে তারা শোষিত হয়েছে দীর্ঘ ২৪ (১৯৪৭-১৯৭১) বৎসর । বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে যারা পেরেছে তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে, পঙ্গু হয়ে বেঁচে রয়েছে । যারা সে সুযোগ পায় নি তারা পাকিস্তানীদের হাতে চরম ভাবে নিগৃহীত হয়ে প্রান দিয়েছে । দেশ স্বাধীন হবার পর আজ তারা দেখে, দেশের সার্বিক প্রশাসন পরিচালনার কল কাঠি যাদের হাতে সেই সব রাজনীতিকরা সর্ব ক্ষেত্র ব্যর্থ ।

দেশের একটি শাসনতন্ত্র আছে, এই শাসনতন্ত্রে তাদের অধিকার দেয়া হয়েছে অযোগ্য লোকদের সরিয়ে তাদের পছন্দের লোকদের ক্ষমতায় বসানোর । কিন্তু নির্বাচক প্রকৃয়ায় কিছু ত্রুটি থাকায় নির্বাচন বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে । এ অবস্থায় এ পদ্ধতি সংশোধন করার তাদের অধিকার আছে । আমরা দেখেছি, কেয়ার টেকার সরকার পদ্ধতি এদেশের জন্য উপযুক্ত । তবে কিছু সঙ্গত কারনে এই পদ্ধতিটিও কিছু বিতর্ক সৃষ্টি করে ।

এই বিতর্ক দূর করার একটি উপায় এখানে বর্ননা করা হয়েছে । বর্তমানে যে ক্ষমতাসীন সরকার আছে তারাও কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে নির্বাচিত হয়ে এসেছে । তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে কোথাও এই নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের কথা ছিল না । এক কথায় বলা যায়, এদেশের মানুষ তাদেরকে এই পদ্ধতি বদলের অধিকার দেয় নাই । তা স্বত্তেও তারা যদি চিরস্থায়ী বা বংশানুক্রমিক ভাবে ক্ষমতা দখল করার জন্য কোন পরিবর্তন এনে থাকে সেটা তাদের নিজের দায়িত্ব ।

তাদের নিজেদেরকেই আবার তা সংশোধন করে দিয়ে যেতে হবে । তাদের ভুলের জন্য সাধারণ মানুষের যদি প্রাণ যায়, তারা যদি কষ্ট ভোগ করে থাকে সে জন্য দেশের মানুষ অবশ্যই তাদেরকে দায়ী করবে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.