আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাতুলের স্কুল - একটা মনগড়া বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী !

কুয়াশার মত জীবন আমার... এই আছি তো এই নাই !!

এক নিজেকে বড় নিঃসঙ্গ মনেহয় রাতুলের । বন্ধুহীন সময়গুলোর প্রত্যেকটা মুহূর্ত ওকে নিঃসঙ্গতার শৃঙ্খলে বেঁধে রাখছে যেন । দূর-দূরান্তের লাল, কমলা, ধূসর কিংবা কালো গ্রহগুলোকে পাশ কাটিয়ে এই অন্ধকার মহাকাশে ভেসে বেড়ানোর ব্যাপারটা একসময় রাতুলকে উদ্বেলিত করত । ইচ্ছে হলেই স্পেসশিপের মাঝে এক টুকরো সবুজ মাঠ তৈরি করে সেখানে হেঁটে বেড়াতে পারত । ইচ্ছে হলেই যোগাযোগ মডিউলে সব বন্ধুদের ডেকে এনে হলোগ্রাফিক মডিউলে স্কুল মাঠ এনে মনের সুখে আড্ডা দিতে পারত ।

মন চাইলে খালি গায়ে একটা ফুটবল নিয়ে লাফ দিয়ে নেমে যেতে পারত মাঠে । তারপর সেকি উত্তেজনা, ছোটাছুটি ! ঠিক যেন সবাই মিলে আবার স্কুল জীবনে ফিরে যাওয়া । দুই সবকিছু ঠিকভাবে চলছিল । মহাকাশের নিস্তরঙ্গ জীবনে উত্তেজনার কোন অভাব ছিলনা । কিন্তু পাঁচ বছর আগে ২১১৩ সালে হঠাৎ সামনে পরে যাওয়া হ্যালির ধুমকেতুকে ধাওয়া করতে যেয়ে বেধে গেল সব বিপত্তি ।

তিন হাতে উষ্ণ পানীয়র গ্লাসটা নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসে আজ থেকে ঠিক একশ বছর আগে স্কুল মাঠে করা একটা পুনর্মিলনি অনুষ্ঠানের ভিডিও দেখছিল রাতুল । অনুষ্ঠানটা রাতুলের বাবার যিনি দাদু তাদের ব্যাচের করা । এই অনুষ্ঠানের ভিডিওটা সে বারবার দেখে । একটা কারন অবশ্য আছে, তার বাবার দাদু লোকটা যেন একদম রাতুলের নিজের মতই দেখতে । এই ভিডিওটা দেখার সময় রাতুলের অদ্ভুত অনুভুতি হয়, মনেহয় সে নিজেই অনুষ্ঠানটার মাঝে ঢুকে পরেছে ।

কি উত্তেজনা আর উচ্ছাস ছিল মানুষগুলোর মাঝে ! সবচেয়ে যে ব্যাপারটায় রাতুল বেশি অবাক হয়, স্কুল মাঠ এখন যেমন দেখতে, আগে প্রায় একই রকম ছিল । সেই বড় বটগাছ, সবুজ খেলার মাঠ । শুধু বিল্ডিংগুলো একটু নতুন, আর অন্যপাশের বটগাছটা একশ বছর আগে অনেক ছোট ছিল, সেটা এখন আরও বড় আর ঝাঁকড়া হয়েছে । চার হঠাৎ সামনে আসা হ্যালির ধূমকেতু দেখে কৌতূহলী হয়ে প্রচণ্ড গতিতে স্পেসশিপ নিয়ে ধাওয়া করে যখন ধূমকেতুর প্রায় পাশাপাশি উপস্থিত হল রাতুল হঠাৎ করে যেন থেমে গেল স্পেসশিপ, অনেকটা ঝুলে পরার মত ব্যাপারটা । হ্যালির ধূমকেতু তার প্রচণ্ড গতির ফলে তৈরি হওয়া আকর্ষণ ও সমপর্যায়ের বিকর্ষণ দ্বারা স্পেসশিপের সব সিস্টেম উলটে পালটে দিয়ে গেল ।

সমপরিমাণ আকর্ষণ এবং বিকর্ষণের ফলে তৈরি হওয়া প্রচণ্ড শক্তিশালী চৌম্বক তরঙ্গ স্পেসশিপের ডাটা সেন্টারে আঘাত হানল সবার আগে, ভারসাম্য হারিয়ে, তথ্য খুইয়ে মহাকাশের অসীম অন্ধকারে তলিয়ে গেল প্রকাণ্ড মহাকাশযান 'হোপ ৭১' । পাঁচ এরপর পাঁচ বছর ধরে সে চেষ্টা করেছে ডাটা সেন্টার সারিয়ে তোলার, যোগাযোগ মডিউল ঠিক করার । প্রতিটা মুহূর্ত নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি পাবার চেষ্টায় ছটফট করেছে রাতুল, অন্তত হলোগ্রাফিক আর যোগাযোগ মডিউলগুলো ঠিক করে সব বন্ধুদের নিয়ে শুধু একবার স্কুল মাঠে ঘুরে আসার আকাঙ্ক্ষায় অস্থির হয়েছে বারবার । তার সেই অস্থিরতা, আকাঙ্ক্ষার অবসান হবে আজ । ছয় কাঁপা কাঁপা হাতে হলোগ্রাফিক মডিউলের সুইচ স্পর্শ করে রাতুল ।

কিছুই হলনা, অন্ধকার মহাকাশে অন্ধকার স্পেসশিপের অন্ধকার ঘর আরও অনেক বেশিই অন্ধকার হয়ে রইল । তারপরেই হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাধিয়ে গেল । এক মুহূর্তেই চোখে সয়ে গেল । আহ ! রাতুলের জীবনের সবথেকে প্রিয় জায়গা । ঐতো সেই সবুজ বৃদ্ধ গাছ ।

যোগাযোগ মডিউলের সুইচ অন করে আস্তে আস্তে নেমে জায় সবুজ ঘাসে, নরম ঘাসে দেবে যায় পায়ের পাতা । চারদিকে কত চোখ ধাঁধান রঙ, কোনার কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে তাকালে মনেহয় যেন আগুন লেগেছে । উপর-নিচ শুধু লাল আর লাল ! আহ কত লাল, কত সবুজ ! গা জ্বলান রোদটাও যেন চামড়ায় আরামের স্পর্শ দিয়ে যায় । পেছন থেকে কারা যেন "এ-এ-এ রাতুউউউল" বলে হুড়মুড় করে দৌড়ে এসে জাপটে ধরে, তাল সামলাতে না পেরে সবাই সহ পড়ে যায় রাতুল । আহ ! কত আনন্দ, কত ভালবাসা !রাতুলের শুধু একটা কথাই মনে গুনগুন করে যায়, "আমার স্কুল, আমার বন্ধু, আমার জীবন ।

" রংপুর জিলা স্কুল মাঠের একটা ছোট্ট ঘাসে রাতুলের এক বিন্দু চোখের জল ঘাসফুল হয়ে ফোটে । পাদটীকা - রংপুর জিলা স্কুল-০০৭ ব্যাচের পুনর্মিলনি ছিল ঈদ-উল-আজহা'র তৃতীয় দিন, অর্থাৎ ১৮ই অক্টোবর । পুনর্মিলনির ম্যাগাজিনে লেখাটি দিয়েছিলাম, প্রকাশও হয়েছে । "পুনর্মিলনির লেখাতে সায়েন্স ফিকশন ক্যান আবার !", এরকম কিছু ভাবছেন ? আসলে একটু ব্যাতিক্রম লেখনির মাধ্যমে যেতে চেয়েছিলাম সবার কাছে, জানিনা পেরেছি কিনা ।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।