এরশাদ বিরুধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নন্। ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় তখন উত্তপ্ত আর উত্তপ্ত রাজপথ। জনতা ফেটে পড়ার অপেক্ষায়। বদরুল চাচা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কি সব সচিত্র পত্রিকা নিয়ে আসেন।
সেখানে এরশাদকে নিয়ে লেখা অনেক কবিতা। সেগুলো চাচা পড়ে শুনান
..................
....................
এরশাদের চেলা মোয়াজ্জেম
আরও আছে মতিন ইমাম
দেখে না তো ডান বাম
পুলিশেরে বলে গুলি চালা
আসে দেখি কোন শালা
..........................
স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটাতেই হবে। তাকে সবাই অপছন্দ করে। অথচ টিভি তে প্রায়ই তাকে বন্যা কবলিতমানুষের সাহায্যে হাটু পানি ভেঙ্গে
হাটতে দেখা যায়। তিনি কবিতা লিখেন।
তবে তিনি মিডিয়ার অনেক মেয়ের ঘনিষ্ঠ মানুষ!এতেও সবাই তার উপর ক্ষিপ্ত্ ।
শেখ হাসিনা ছিয়াশির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এরশাদের সাথে হেরে গেছে। তাই এরশাদের ক্ষমতার মেয়াদ বেড়ে গেছে। তিনি নির্বাচন না করলে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হত। খালেদা জিয়া নির্বাচন বয়কট করেছেন।
পত্রিকায় অনেক ছবি। এরশাদের গলায় জুতার মালা। মাথায় ঘুল ঢালার ছবি। ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট। সেটার জন্য দায়ী এরশাদ।
তা নিয়ে মজার কার্টুন । ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষে ঢুকে ভাব নিচ্ছেন ছাত্র "মুই কি হনুরে?"আবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে বুড়ো দাদা হয়ে গিয়েছেন। নাতিকে সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দিতে চলছেন। সেখানে লেখা "ভার্সিটির শেষ পরীক্ষাটা দিয়েই যাই"।
বদরুল চাচা অনেক বই আনেন।
মোটা মোটা। বইয়ে লেখা সেল্ফ এসেসমেন্ট। বাংলাদেশের ডায়রী। আমিও পড়ি। বৃত্তি পরীক্ষার পড়া ভালো লাগে না আমার।
আমি বদরুল চাচার মত ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার স্বপ্নের বিদ্যাপিঠ। বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যা্ওয়া যাবে। বড়শিতে মাছ ধরব।
হাটে যাব। টানা,বিন্নি ,বাতাসা কিনব। পুকুরের পানিতে গোল্লা ছোট খেলব। কাচা পাক্কা খেলব। স্কুলে ছুটি নাই।
শুধু পড়ালেখা।
মিথিলা আপার নাকি বিয়ে হয়েছে। মিথিলা আপাকে যিনি পড়াতেন তার সাখে আপার বিয়ে হয়েছে। প্রেমের বিয়ে। বিয়েতে মিশ্র অনুভূতি।
প্রেম করা খুব খারাপ। তারপরও মানুষ তা করে । আর বিয়ে হয়েছে সিলেটে। সিলেট অনেক দূর্। ট্রেনে যাওয়া যায়।
রাস্তায় নাকি চাবাগান আর বন পরে। দারুন সুন্দর দেখতে। সমস্যা হলো ঢিল ছুড়া। খারাপ মানুষ ট্রেন লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়ে তা ট্রেনের গ্লাস ভেঙ্গে ট্রেনের ভিতর ঢুকে। ঢিলে অনেক দূর্ঘটনা ঘটে।
এছাড়া ডাকাতির আশঙ্কা আছে। বড় চাচার ডায়বেটিস ধরা পড়েছে। ইয়া মোটা ভুড়িওয়ালা মানুষ তিনি নাকি শুকিয়ে যাচ্ছেন। দুলাভাই নাকি অনেক সুন্দর দেখতে। ইন্জিনিয়ার।
সিলেটে অনেক মাজার সেখানে পুকুরে গজার মাছ আছে। ওগুলো মারা পাপ। অনেক বড় গজার মাছ। মানুষ সেগুলোকে ছোট মাছ খাওয়ায়।
মইনুল চাচা এরেস্ট হয়েছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে। তাকে জেলে রাখা হয়েছে। এই উপলক্ষ্যে বাড়িতে প্রচুর মানুষের সমাগম। চাচা মুক্ত হয়ে এলেন । উনার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বন্ধ হলো।
তাকে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হলো। সিলভিয়িা খালা তাকে সকরুন বিদায় জানালো। তাদের প্রণয় হবার নয়। তাদের প্রেমের সমাধি হলো।
হাইস্কুলে ভর্তি হলাম।
ভর্তি হয়ে সিলেট গেলাম বেড়াতে। কুলসুম চাচীর সাথে দেখা হলো। সবা্র সাথেই দেখা হলো । একদিন ভোর বেলায় ভূমিকম্প হলো। কুলসুম চাচি রনিকে নিয়ে নিচে নেমে গেলেন।
কোন মেয়ে নিয়ে তার ভাবার সময় নাই। আমরাও দৌড়ে নিচে নামলাম। বিল্ডিংটা কাঁপছিল। সিলেটে নাকি প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। জীবনে প্রথম ভূমিকম্প দেখলাম।
মানুষের হুরোহুরি চিৎকার। একমুহূর্তে মানুষ সব খোলামাঠে। রাস্তায় । সোহেল দুলাভাই এর ভাগ্নে। কুলসুম চাচীকে বউ বলে ডাকে।
চাচীও তাকে স্বামী বলে সম্বোধন করেন। সোহেল মামা দশম শ্রেণীতে পড়ে। রোগা পতলা। একজন স্বাস্থবতী দীর্ঘাঙ্গী মহীলা আর রোগাপাতলা বালক। রহিম-রূপবান জুটি!কুলসুম চাচীর সাথে তার মাখামাখি আমার ভাল লাগে নাই।
কুলসুম চাচি, তার শ্যমলা গাঁয়ের বরণ। লম্বা। চোখ দুটো কালো । ছোট ছোট। পান খেয়ে ঠোট লাল।
হাসলে তার চোখ হাসে। অদ্ভু্ত সুন্দর দেখায়। সারাদিন পান খান। চাচীকি সত্যিই সোহেল মামার সাথে প্রেম করে?শুনলাম চাচা নাকি হার্টের রোগী। চাচীর পরকিয়ায় তার এই অবস্থা হলো নাকি?সোহেল মামা আমার কয়েক বছরের বড়।
ঢাকায় ফিরে এলাম। দেড় কিলোমিটার হেটে স্কুলে যাই প্রখর রৌদ্রে। সেফটি মানি ২০ টাকা। সারা বছর সেটি নিরাপদ থাকে। তাতে হাত পরে না।
আমার অনেক সহপাঠীর আম্মু সাথে আসে দারুণ সাজে সেজে। তারা টিফিনে চকবার খা্য়,স্যান্ডুইচ খায়,বার্গার খায়। আরও কত কি?মনে হবে পড়ালেখা নয় স্কুল হলো খাওয়াদাওয়ার জায়গা। মানুষ ক্ষুধার্ত হলে খাওয়া কর্মসূচী সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্যই স্কুলে আসে। তারা দামী শাড়ী গহণা পড়ে দামী মেক আপ নিয়ে স্কুলে আসেন্।
এসে গল্প জুড়ে দেন। তাদের উপস্থিতিতে স্কুলের আভিজাত্য বাড়লেও যানজট লাগে,ভীড় জমে যায়। আমাদের চলাফেরায় খুব সমস্যা হয়।
এদিকে ঢাকা উত্তাল। নূর হুসেন খালি গায়ে গণতন্ত্র মুক্তিপাক লিখে মিছিলে যোগদান করলে,,এরশাদের নির্দেশে প্রাণ ঘাতী বুলেটে তাকে হত্যা করা হয়।
তার বুক ঝাঝরা করে দেয়া হয়। এ নিয়ে ঢাকা উত্তাল গণবিপ্লব। লাগাতার হরতাল। এক দফা এক দাবী এরশাদ তুই কবে যাবি। এই শ্লোগান সবার মুখে।
গণ অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার এরশাদের পতন হয়। শাহাবুদ্দিন আহমেদ নতুন রাষ্ট্রপতি। হিটলারের মতন গোফ। খুব সাদামাটা চেহারা। ছোট খাট গড়নের।
আসলে চেহারা কোন ফ্যাক্টর নয়। মানুষের আসল পরিচয় তার সততা আর কর্ম। এই দিক দিয়ে তিনি নাকি অসাধারণ। আর সুদর্শন এরশাদ?তিনি একজন স্বৈরাচার। তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শাহাবুদ্দিন আহমেদই ভালো ।
ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী। ক্ষমতাশালী ক্ষমতাহীন হয়ে যান। চোখের পলকে। উত্থান পতন রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।