আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাতুলের আত্মা

ব্লগার না পাঠক হওয়ার চেষ্টায় আছি পড়ন্ত বিকেলে সূর্য হেলে পড়েছে। রাতুল একটা সিগারেট ধরিয়ে দুটা টান দিল। সিগারেট জ্বলতে লাগল। কিন্তু সে আর কোন টান দিল না! সিগারেট জ্বলতে জ্বলতে প্রায় শেষ হওয়ার পথে। আর সামান্য একটু বাকি আছে।

শেষ মুহূর্তে সে একটা টান দিল। মুখে আগুনের আঁচ এসে লাগল। সে আরেকটা টান দিয়ে সিগারেটটা ফেলে দিল। সিগারেটটা ফেলে দেওয়ার পর তার মনে হল প্রত্যেক মানুষের জীবনই এক একটা সিগারেট! জ্বলতে জ্বলতে শেষ হয়ে যায়। কেউ একজন সেই সিগারেট ধরে টান দেয়।

কিন্তু সেই একজনটা কে? রাতুল ভেবে পায় না। হতে পারে সে ঈশ্বর। অথবা অন্য কেউ। যেহেতু সে ঈশ্বরে কোন রকম বিশ্বাস করে না সে ভেবে নেয় টানটা হয়ত ভাগ্য বা অলৌকিক কেউ দেয়! সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। হঠাত রাতুলের ফোন বেজে উঠে।

অবন্তী ফোন দিয়েছে। ওরা রাতুলদের পাশের বাসায় থাকে। ভয়াভহ মাত্রার সুন্দরী। বলা যায় আগুন সুন্দরী। মোবাইলটা হাতে তুলে রাতুল স্ক্রীণে অবন্তীর নাম দেখে ফোনটা আর ধরল না।

মেয়েটা রাতুলকে অসম্ভবের চেয়েও বেশি পছন্দ করে। রাতুল তা জানে। তাও সে অবন্তীকে এড়িয়ে চলে। কেন চলে তা সে জানে না!! তাই অবন্তীর নাম দেখে আর কলই ধরল না!! উঠে দাঁড়ায় রাতুল। বাসার পথে রওনা দেয়।

বাসার কাছে এসে হঠাত সে খেয়াল করে হাতে একটা বিয়ের কার্ড! কার্ডটা দেখে মেজাজটা আরও খারাপ হয়ে যায়। নীরার বিয়ের কার্ড। মেয়েটাকে সে অসম্ভবের চেয়ে বেশি ভালবাসত। কিন্তু কখনও বলে নি! বললেও হয়ত মেয়েটা তাকে মায়ার শিকলে জড়াত না। এসব ভাবতে ভাবতে সে কার্ডটাকে কুচি কুচি করে ছিড়ে ড্রেনে ফেলে দেয়।

বাসার কাছে এসে পড়েছে। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। তাও রাস্তার পাশের দোকান থেকে সিগ্রেট ধরিয়ে টান দিতে দিতে রাস্তা ক্রস করছিল রাতুল। মাথার মধ্যে নীরার কথা চিন্তা হচ্ছিল দেখে হয়ত সে রাস্তার অপর পাশ দিয়ে ভয়াভহ গতিতে আসা বিশাল মাইক্রো দেখে নি! মুহূর্তের মধ্যে মাইক্রো তার দেহের উপর দিয়ে চলে গেল। রাস্তায় পড়ে রইল তার কিছু মাংস পিণ্ড আর দলিত মাথা।

ব্রেইন আলাদা হয়ে গেছে! এক পাশে সিগারেটটা জ্বলতে লাগল। ******* আমি রাতুলের আত্মা। ওর নিথর দেহ থেকে বের হয়ে গেছি। বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কি মজা! আমি সবাইকে দেখতে পাচ্ছি অথচ কেউ আমাকে দেখতে পাচ্ছে না।

উপর থেকে এখনও আমি জ্বলন্ত সিগারেট দেখতে পাচ্ছি!! রাস্তায় ছোটখাট জটলা। সবাই মিলে নিথর দেহটাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে এক পাশে রাখল। ভীড়ের মাঝে এক ফাঁকে কেউ একজন তার পকেট থেকে মোবাইলটা আস্তে করে সড়িয়ে দিল! আমি উপর থেকে সব দেখছি। মজা পাচ্ছি। রাতুলকে ঘিরে ছোটখাট জটলা তৈরি হয়েছে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে তাকে কেউ আর এখন রাতুল ডাকছে না! লাশ ডাকছে। কিছুক্ষণ আগেও তার নাম ছিল। মড়ার পর কোন নাম নেই। এইটাই নিয়ম। হঠাত করে ছুটে এল রাতুলের আব্বা।

সবাই মিলে উনাকে ধরে রেখেছে। উনাকে দেখে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। বেচারা মরা কান্না কাঁদছে। গুরু-গম্ভীর এই মানুষটির মরা কান্না সহ্য করা আমার পক্ষে আর সম্ভবপর হল না। আমি উড়ে চলে গেলাম রাতুলদের বাসায়।

ওখানে আরও জটিল পরিবেশ। রাতুলের মা কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছে। আমি আত্মা। আত্মাদের কোন আবেগ নেই। তাই আমি উড়ে চলে গেলাম অবন্তীদের বাসায়।

ভাবলাম হয়ত মেয়েটা তেমন একটা রিএ্যাক্ট করবে না। কিন্তু না!! দেখলাম সে দরজা লাগিয়ে রাতুলের একটা ছবি বুকে নিয়ে কাঁদছে! অদ্ভুত একটা শিহোরণ হল আমার। থাক, ও কাঁদতে থাক! এসব কান্নাকাটি আমাকে ছোঁয় না। আত্মাদের কোন আবেগ নেই। তাও একবার মনে হল রাতুল বেঁচে থাকলে হয়ত এগুলো সহ্য করতে পারত না! আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হতে তার অনেক লজ্জা লাগত।

অথচ সেই এখন সবার মধ্যমণি। ইশশ, একবার যদি বুঝতে পারতাম ও কতটা লজ্জা পাচ্ছে!! একবার মনে হল রাতুলের দেহের ভেতরে চলে যাই। পরক্ষণেই আবার মনে হল নীরাদের ওখান থেকে ঘুরে আসি। আত্মা হয়ে ঘুড়ে বেড়ানোর কত সুবিধা! যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাওয়া যায়। নীরাদের বাসায় গেলাম।

ওর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনেক সুন্দর সাজে সেজেছে নীরা। চারদিকে সুন্দরী মেয়েদের ভীড়। নীরাকে অনেক আনন্দিত আনন্দিত লাগছিল। আমি উড়ে উড়ে দেখতে লাগলাম।

আচ্ছা ও কি জানে রাতুল নামের একটা ছেলে ওর কথা ভাবতে ভাবতে মারা গেছে! কি জানি। হয়ত কোনদিনও জানবে না... আত্মারা কথা বলতে পারলে আমি নীরাকে সব বলে দিতাম। কিন্তু না! আত্মাদের কথা বলার কোন নিয়ম নেই... আবার ফিরে আসলাম রাতুলের লাশের কাছে। জানাজা হচ্ছে। বেচারা রাতুল।

আল্লাহ খোদায় বিশ্বাস নেই তাও তার জানাজা!! বড়ই অদ্ভুত নিয়ম জগতের। জানাজা শেষ হল। ওর লাশ কবরে নামানো হতে যাচ্ছে। আমিও ঢুকে গেলাম লাশের সাথে। কফিনের ভেতরে, কবরে!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।