চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দুই হাজার ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস) প্রায় তিন গুণ।
আর কেবল গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে বিক্রি বেড়েছে পাঁচগুণ।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে হবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর সরকার বদলে গেলে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিবেচিত পাঁচ বছর মেয়াদী ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’ বন্ধ হয়ে যেতে পারে- এমন আশংকায় এ সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারে সময়ে পরিবার সঞ্চয়পত্র চালু হয়।
এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে সেটি বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এসে আবার সেটি চালু করে।
“অনেকেই ভাবছেন, সামনে সরকার পরিবর্তন হলে আবার এই সঞ্চয়পত্র বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। এমন চিন্তা থেকেই শেষ সময়ের সুবিধা নিতে যাদের হাতে সঞ্চয় আছে তারা এটি কিনছেন। ”
তাছাড়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মানুষ এখন ‘নিরাপদ’ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে।
সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ার পেছনে এটাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন জায়েদ বখত।
“পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকগুলোর আমানতে সুদের হার কমানোয় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়েছে। এটা একটা ভালো দিক। প্রয়োজন হলে সরকার এই খাত থেকে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালু রাখতে পারবে। গত দুই-তিন বছরের মতো ব্যাংক ঋণের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর করতে হবে না।
”
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৯৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
গত বছরের এই তিন মাসে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৫৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা, পুরো অর্থবছরে ছিল ৭৭২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
এর আগের অর্থবছরে (২০১১-১২) ৪৭৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে যেসব সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে তার ৮০ শতাংশই পরিবার সঞ্চয়পত্র। ১৫ শতাংশ পেনশনার সঞ্চয়পত্র।
বাকি ৫ শতাংশ অন্যান্য সঞ্চয়পত্র।
জায়েদ বখত জানান, একটি সঞ্চয়পত্র বন্ধ করে দেয়া মানে হলো- নতুন করে ওই সঞ্চয়পত্র আর বিক্রি করা হবে না। তবে যারা আগেই কিনে রেখেছেন, তারা নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত নির্ধারিত হারে সুদ পাবেন।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হারেই সবচেয়ে বেশি, সাড়ে ১৩ শতাংশের মতো। নারীদের জন্য ‘বিশেষ’ সুবিধার অংশ হিসেবে সরকার এই সঞ্চয়পত্রটি চালু করে।
সঞ্চয় পরিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক পরিবারের পুরুষ সদস্যরাও তাদের সঞ্চিত টাকা দিয়ে মহিলাদের নামে এই সঞ্চয়পত্র কিনে রাখছেন। ”
জায়েদ বখত বলেন, “বিপুল অঙ্কের অলস অর্থ (বিনিয়োগ হচ্ছে না এমন টাকা) পড়ে থাকায় ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার কমিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া শেয়ারবাজারে ধস এবং হল-মার্কসহ নানা কেলেঙ্কারির কারণে মানুষ আর ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। এ কারণেই সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ছে। ”
বাজেট ঘাটতি মেটাতে গত অর্থবছর সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল।
বিক্রি কম হওয়ায় পরে সেই লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
তবে সে লক্ষ্যও পূরণ হযনি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৭২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের মাধ্যমে বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্র, প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ছয় মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।