আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার আর্কিটেকচার হিস্ট্রি পাঠঃ মানব সভ্যতার বিকাশ

You either die a hero......or you live long enough to see yourself become the villain

ছোটবেলায় “এইম ইন লাইফ” Essay পড়ে নি এমন লোক খুজে পাওয়া যাবেনা... কিন্তু আমি বরাবরের মতো আলাদাই ছিলাম ... “এইম ইন লাইফ”, “ভ্যালু অফ টাইম”, “ডিসিপ্লিন” এসব Essay জীবনে পড়ে দেখি নাই... বুদ্ধি হবার পর প্রত্যেকটা মানুষই জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে ফেলে... কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, আবার কেউ আইনজীবী...বড় আপু পিচ্চিকাল থেকেই বলত ডাক্তার হব... সে তার পথে হেটেছে... ছোটটা বলতো ডাক্তার হবো নইলে নায়ক পুলিশ হব... সেও প্রথমদিকেই আছে...আমি জীবনে “এইম ইন লাইফ” পড়ি নাই বলে হয়ত আমার কখনো “জীবনের লক্ষ্য”ই ছিল না ... তারপরও কোন এক শুভক্ষণে স্থাপত্য বিদ্যার সাথে বেধে ফেলেছিলাম নিজেকে ^_^ … অনেকের মতো প্রথম প্রথম আমি ভেবেছিলাম এখানে শুধু বিল্ডিং ড্রইং করা শেখানো হবে... কিন্তু এখানে এসে দেখলাম শুধু বিল্ডিং ডিজাইন ই নয় ... আরো অনেককিছুই আছে শিখবার ...আর্কিটেকচার স্কুলে আর্কিটেকচারাল ডিজাইন এর পাশাপাশি আমরা শিখি পরিবেশ বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, পাবলিক হেলথ, লিবারেল আর্টস, আরো অনেক কিছু ... অনেকগুলো বিভাগ এই স্থাপত্যকলার... ১. আর্কিটেকচারাল ডিজাইন; ২.আর্কিটেকচারাল হিস্ট্রি; ৩. আরবান ডিজাইন;৪. আরবান স্টাডিজ;৫. বিল্ডিং সার্ভিসেস; ৬. ল্যান্ডস্কেপিং আর্কিটেকচার আরো অনেক ব্রাঞ্চ আর্কিটেকচারে... আর্কিটেকচারাল হিস্ট্রি আমাদের পড়াশোনার একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়...আমাদের কারিক্যুলামে আর্কিটেকচারাল হিস্ট্রির ৪ ভাগ... প্রথম ভাগঃ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ-১; দ্বিতীয় ভাগ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ-২; তৃতীয় ভাগঃ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি; চতুর্থঃ হিস্ট্রি অফ বেঙ্গাল আর্কিটেকচার... ফাওয়াজ স্যারের সহযোগিতায় শুরু হয় আর্কিটেকচার হিস্ট্রিতে আমার হাতে খড়ি...স্যার সবসময় এমন ভাবে পড়ান যেনো তার কথা শুনে আমাদের পড়া ক্লাসেই কমপ্লিট হয়ে যায়... সবচেয়ে বড় কথা স্যারের প্র্যক্টিক্যাল দেখে আসা জ্ঞান আমাদের বেশি হেল্প করতো ... স্যার এমনভাবে আমাদেরকে তার ট্রাভেলের গল্প বলতেন যেনো মনে হতো আমরাও সেখানে গিয়ে এসেছি ... সেদিন থেকেই ঠিক করেছি বড় হয়ে আমি ঘুরবো দেশে দেশে ... হিস্ট্রি সাবজেক্ট টা প্রথম প্রথম বোরিং লাগলেও পরে ভালো লাগতে শুরু করে...৯.৪০ এ ক্লাস শুরু হত, দ্বিতীয় ক্লাসের দিন দেরি করে যাওয়ায় স্যার আমাকে বহুত ঝাড়ি দেন ... বলেন নেক্সট দিন দেরি করলে ক্লাসে ঢুক্তে দেবেন না... সেদিনই ছিল একটা সারপ্রাইজ টেস্ট... দুঃখিত হয়ে না থেকে এক্সাম দিলাম ... পরের ক্লাসে স্যার সবার খাতা দিচ্ছেন কিন্তু আমারটা আর দেন না সেটা নিয়ে তখন ভাবছিলামও না ...তখন আমি নিসুর সাথে গপ্পো করছিলাম... সবার খাতা দেয়া শেষ; স্যার হঠাৎ জোরে করে ডাক দেন-মারজিয়া ... আমি ভয় পেয়ে যাই ... ভেবেছিলাম, গপ্পো করার জন্যে স্যার বকবে ... তারপর স্যার বলেনঃ ইউ হ্যাভ গট হাইয়েস্ট মার্ক, কংগ্র্যাচুলেশন ... এর পর কখনো ক্লাসে দেরি করেও যাইনি, বাঙ্ক ও করিনি  ... এবং ফাইনালে ১০০/১০০ পেয়েছিলাম … হিস্ট্রি-২ তে পেয়েছিলাম ৯৮ ... কোর্স টিচার ছিলেন মুজতাবা স্যার... স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আর মার্ক কই  ... স্যার বলেছিল- দেখো, ১০০ তো দিতে পারিনা... মনে কর বানান ভুল করেছ :/ আর ৯৩ থেকেই তো এ গ্রেড... সো, কোন সমস্যাই তো নাই -_- ... হিস্ট্রি-৩ তে ৯৯ ... কোর্স টিচার মুজতাবা আহসান...এবং কাহিনী সেইম... যাক, নিজের বীরত্বগাঁথা বর্ননা বন্ধ করে মানব সভ্যতার বিকাশ নিয়ে আলোচনা করি... বর্তমান মানুষের যে রুপ, নৃতাত্ত্বিকগন মনে করেন এই আকৃতির মানব সন্তান গত ত্রিশ হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে বিচরন করছে... ইতিহাসের শুরুতে মানুষ বড় বড় নদির তীরে বসত স্থাপন করে... এর প্রমান টাইগ্রিস (Tigris) ও ইউফ্রেটিস (Euphrates) নদির ব-দ্বিপে মেসোপটেমীয় সভ্যতা, নীল নদির তীরে মিশরীয় সভ্যতা, রাভি নদীর তীরে হরপ্পা ও সিন্ধু নদীর তীরে মোহেঞ্জোদারো সভ্যতা (সম্মিলিতভাবে সিন্ধু উপত্যকা বা ইন্ডাস ভ্যালি (Indus Valley) সভ্যতা) হোয়াং-হো (Hwang-Ho) ও ইয়াংজি (Yangtze) নদীর তীরে চিনা সভ্যতা গড়েও উঠেছে... বাংলাদেশের রাজধানি ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত... তবে সভ্যতার সুচনার আগেও মানুষ সেই নদীর তীরেই বসতি স্থাপন করেছিল... এখন আমি আলোচনা করব নদি তীরবর্তী সভ্যতার বিকাশ ইতিহাস নিয়ে ডেড সী’র (Dead Sea) পাঁচ মেইল উত্তরে জর্দানে প্রায় ১শত বছর খনন করার পর, ১৩৫২-৫৮ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ কেইথলিন কেনিয়ন (Keithleen Kenyon) একটি প্রাচিন দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ খুজে পান... কার্বন-১৪ (Carbon-14) সময় নির্নায়ক পদ্ধতি দ্বারা জানা যায় যে দেয়ালটি খ্রিষ্টপুর্ব ৭০০০ সালে তৈরি করা হয়েছিল... ত্রিশ বিঘা এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই মরুদ্যানের নাম জেরিকো (Jericho)--- প্রত্নতাত্ত্বিকদের জানা মতে পৃথিবীর প্রাচিনতম শহর... দুই থেকে তিন হাজার লোকের বসবাস ছিল এ নগরে... এই শহরের বাসস্থান তৈরি করা হয়েছিল মাটির ইট দিয়ে... আয়তক্ষেত্রাকার ঘরগুলো একে অপরের কাছাকাছি বসানো হত... জানালাবিহীন প্রতিটি ঘরে একটি করে দরজা ছিল... জেরিকোতে সরকারি ভবনও ছিল... জেরিকোর পর, ১৯৬১ সালে আর এক ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ জেমস ম্যালার্ট (James Malaart) তুরস্কের কোনিয় শহরের পুর্ব দক্ষিনে কার্সাম্বা (Carsamba) নদীর নিকট আবিষ্কার করেন আরেকটি প্রাচিন শহর... নাম তার চাটাল হুয়ুক (Çatal hüyük)... খ্রিস্টপূর্ব ৬২৫০ সাল থেকে ৫৪০০ পর্যন্ত এই শহর মানুষের, ব্যবসা-বানিজ্যে, ধর্মীয় ও শৈল্পিক কর্মকান্ডে ছিল মুখর... তামা ও অন্যান্য ধাতুর শিল্পকর্মের নমুনা এখানে পাওয়া গেছে... জনসঙ্খ্যা ছিল ৬ থেকে ১০ হাজার... কিছু ভবন যে সরকারি কাজে ব্যবহৃত হত তাও নিশ্চিত করে বলা যায়... চাটাল হুয়ুকে মহিলাদের খুব সম্মাণ করা হতো... এখানকার অধিবাসিরা প্রায়ই ম্যালেরিয়া,নিউমোনিয়া ও গেঁটেবাতে রোগে আক্রান্ত হত... চাটাল হুয়ুকে নানা আকারের ঘরবাড়ি ও সমাধির মধ্যে উপহার দেখে বোঝা যায় সে সমাজে বিভিন্ন পেশার স্তরের মানুষ ছিল... চাটাল হুয়ুকের বাড়িগুলি একটার গায়ে আরেকটা লাগানো থাকতো; ছাদ দিয়েই ঘরে প্রবেশ করতে হত এবং সেটাই ছিল একমাত্র প্রবেশপথ... আয়তাকার ইট এবং মর্টার বা মশলা ব্যবহার হতো... প্রায় বাড়িতে ছিল দুটি কক্ষ। ডানিয়ুব নদীর তীরে যুগোস্লাভিয়ার এক উপত্যকায় ১৮৫গজ*৫০ গজ এলাকাজুড়ে অতি প্রাচীন ছোট্ট জনপদের সন্ধান পাওয়া যায়... ১৯৬৫ সালে আবিষ্কৃত লেপেন্সকি ভির নামক এ জনপদের অবশ্য কোন হদিশ নেই... কারন জনপদটি এখন নদীর পানিতে লেকের তলায় তলিয়ে গেছে... খ্রিষ্টপুর্ব ৬০০০ সালে লেপেন্সকি ভির এর জনসংখ্যা ছিল খুব বেশি হলে ২০০ থেকে ৩০০... অনুমান করা হয় এখানকার বাড়িগুলি দেখতে তাবুর মতো ছিল... একটা হতে অন্যটা খানিক দূরে বসানো হতো... জেরিকো এবং চাতাল হুয়ুকে বেশ কয়েকটি সরকারি ভবন সনাক্ত করা গেলেও লেপেন্সকি ভির-এ শুধু চারটি মন্দির ভবন দেখা যায়... লেপেন্সকি ভির-এ সমাজ ব্যবস্থা ছিল এবং মানুষজন অতিতকালের রীতিনীতি কঠোরভাবে পালন করতো... জেরিকো, চাটাল হুয়ুক এবং লেপেন্সকি ভির প্রাচীন শহরগুলোর সন্ধান পাওয়ার পর ইতিহাস আরো জটিল হয়ে পড়েছে...কারণ এই শহরগুলোর পর এবং খ্রিষ্টপুর্ব ৪০০০ সালের মেসোপটেমীয় সভ্যতার আগ পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরাট শুন্যতা বিরাজমান... চলবে--- পরবর্তী পর্বঃ সুমেরীয় সভ্যতা ও ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান #রেফারেন্সঃ কিশোর বিশ্বস্থাপত্য

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।