ম্যাচ শেষ হওয়ার ২-৩ ওভার আগ পর্যন্তও ফলাফল নিয়ে একটু অনিশ্চয়তা ছিলই। টেস্ট-ওয়ানডেতে অমন পারফরম্যান্সের পর শেষ ওভারে বাংলাদেশ ২২ রান করে টি-টোয়েন্টি ম্যাচটাও জিতে যাবে—এমন আশাবাদীর সংখ্যাও নিশ্চয়ই কম ছিল না। শেষপর্যন্ত ১৫ রানে হার। তা টি-টোয়েন্টিতে বরাবরই ম্রিয়মাণ বাংলাদেশ ২০৪ রান তাড়া করতে নেমে যা করল, এটাই বা কম কী! অধিনায়ক তো তৃপ্ত হবেনই। খুবই স্বাভাবিক যে লড়াই করে এই হারের মধ্যে অনেক ইতিবাচক দিক বের করে সংবাদ সম্মেলনে হাসবেন তৃপ্তির হাসি।
তৃপ্ত? মুশফিকুর রহিমকে তাহলে আপনি চেনেননি। হাসির তো প্রশ্নই ওঠে না। পুরো সংবাদ সম্মেলনেই থমথমে মুখ। ‘পাওয়ার প্লেতে বাজে বোলিং হয়েছে’, ‘২০ রানের মতো বেশি দিয়ে ফেলেছি’, ‘ব্যাটিংটাও এলোমেলো হয়েছে’—স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দলের হাজারও সমস্যা বের করার পর ঘোষণা করে দিলেন, ‘টি-টোয়েন্টিটা কীভাবে খেলতে হয়, এটা আসলে আমরা এখনো বুঝতেই পারিনি। ’
এ থেকেই আপনি চিনে নিতে পারেন ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমকে।
নির্মোহ দৃষ্টিতে যিনি নিজের ও দলের পারফরম্যান্স নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে পারেন। নিজেই হয়ে যেতে পারেন তাঁর দলের সবচেয়ে কঠোর সমালোচক। লড়াই করে হারার মধ্যে সান্ত্বনা না খুঁজে বলতে পারেন, ‘আজ ১০০ করে হারলেই বা কী হতো! হার হারই। ’
স্মরণীয় এই সিরিজটা জয় দিয়ে শেষ করতে না পারার অতৃপ্তি হয়তো ছিল, তবে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং দেখে দর্শকেরা যে খুব অতৃপ্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, তা বলা যাবে না। সেখানে মুশফিকুর কী বলছেন শুনুন, ‘আমাদের ব্যাটিং দেখে বলতে পারেন, আমরা অনেক ফাইট করেছি।
বাস্তবে এভাবে খেললে আমরা কখনোই জিততে পারব না। আমাদের অনেক কাজ করার আছে, অনেক কিছু শেখার আছে। ওরা যে খুব ধুমধাড়াক্কা মেরেছে তা নয়। হিসাব করে, শান্ত থেকে খেলেছে। ’ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ তুলনামূলকভাবে কম খেলাটা বাংলাদেশ দলের মধ্যে সেই চর্চাটা না থাকার একটা কারণ হতে পারে।
মুশফিকও বললেন, ‘বছরে ১-২টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে কখনোই শেখা যাবে না। চার-পাঁচ মাস পর পর একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবেন আর জিতে যাবেন, এটা খুবই কঠিন। ’
মুশফিকের সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েছেন বোলাররাও। বোলাররা পরিকল্পনা অনুযায়ী বল করতে পারেননি, নিউজিল্যান্ডকে ১৮০-১৮৫ রানের মধ্যে আটকাতে পারলে ম্যাচ অন্য রকম হতে পারত—এসব তো বলেছেনই, সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘যতই ভালো ক্রিকেট খেলেন না কেন টি-টোয়েন্টিতে ৫-৬ ওভারে ৮০ রান দিয়ে দিলে সেখান থেকে ফেরা কঠিন। ওরা যেভাবে ব্যাটিং করেছে...আমাদের একটা সুযোগও দেয়নি।
আমাদের পাওয়ার প্লের বোলিং ভালো হয়নি। এ রকম অনেক জায়গা আছে, যেখানে উন্নতি দরকার। ’ পরে সে জায়গাগুলোর একটা তালিকাও দিলেন। ব্যাটিংয়ে বেশি ডট বল, এক-দুই নিয়ে স্কোরবোর্ডটাকে সচল রাখতে না পারা, দ্রুত উইকেট পড়ে গেলে বড় জুটি গড়ার সামর্থ্যের অভাব ইত্যাদি ইত্যাদি।
আয়নার সামনে নিয়মিত দাঁড় করান নিজেকেও।
ব্যক্তিগত প্রাপ্তির তৃপ্তি ছাপিয়ে সেখানেও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ‘অসমাপ্ত কাজ’-এর ছবিটাই বড় হয়ে ওঠে। কাল আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ফিফটি করলেন। কিন্তু সেটির উদ্যাপন বলতে কিছু নেই। উল্টো ফিফটি করেই আউট হয়ে গেছেন বলে নিজেকে দাঁড় করালেন কাঠগড়ায়। দল জেতার পরও যেমন মনে রেখেছেন প্রথম ওয়ানডেতে নিজের ভুলটা, ‘প্রথম ওয়ানডেতে আমি যে পরিস্থিতিতে আউট হয়েছিলাম, ৯০ কেন, দেড় শ রান করে আউট হলেও আমার খারাপ লাগত।
ওই সময়ে আমার আউট হওয়া উচিত হয়নি। পাওয়ার প্লে তখনো চলছিল। আজও (গতকাল) আমি ওই সময়ে আউট না হলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারত। আমি যদি আরও পাঁচটা ওভার খেলতে পারতাম...। ’ অতৃপ্তিটা দূর হয় না বলেই দর্শক যে পারফরম্যান্স দেখে হাততালি দেয়, মুশফিক সে পারফরম্যান্স করেও মাঠ ছাড়েন মাথা নামিয়ে।
‘আমার যে উদ্যাপন করতে ইচ্ছে করে না, তা নয়। তবে অনেক সময় পরিস্থিতি সে রকম থাকে না’—এখানেও সেই অতৃপ্ত অধিনায়কের প্রতিমূর্তি।
উন্নতির পরও উন্নতির সুযোগ থাকে। ভালোর পরও থাকতে হয় আরও ভালো করার তাড়না। যোগ্য অধিনায়কের মতো মুশফিকুর রহিম সেটিই প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দিচ্ছেন সতীর্থদের—কথায়-আচরণে, শরীরী ভাষাতেও।
স্কোরকার্ড
টস: নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ড
রান বল ৪ ৬
ডেভচিচ ক শামসুর ব রাজ্জাক ৫৯ ৩১ ১০ ১
রাদারফোর্ড ক নাসির ব সোহাগ ১৭ ১৭ ১ ১
টেলর ক নাঈম ব জিয়াউর ২৮ ২৫ ৩ ০
মানরো অপরাজিত ৭৩ ৩৯ ৩ ৫
অ্যান্ডারসন ব আল আমিন ১৮ ৬ ১ ২
রনকি ক ও ব আল আমিন ০ ২ ০ ০
নাথান অপরাজিত ০ ০ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ২, ও ৭) ৯
মোট (২০ ওভারে, ৫ উইকেটে) ২০৪
উইকেট পতন: ১-৭৩ (রাদারফোর্ড, ৭.১ ওভার), ২-৮৩ (ডেভচিচ, ৯.২), ৩-১৭৬ (টেলর, ১৭.৩), ৪-২০০ (অ্যান্ডারসন, ১৯.২), ৫-২০০ (রনকি, ১৯.৪)।
বোলিং: মাশরাফি ৪-০-৪৬-০ (ও ১), সোহাগ ৩-০-৩০-১ (ও ১), আল আমিন ৪-০-৩১-২ (ও ১), নাসির ১-০-১৬-০, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-৩৪-০ (ও ১), রাজ্জাক ২-০-১৯-১, জিয়াউর ২-০-২৬-১ (ও ১)।
বাংলাদেশ
শামসুর ক ম্যাকলেনাহান ব সাউদি ৪ ২ ১ ০
জিয়াউর ব সাউদি ৬ ২ ০ ১
মুমিনুল ক মিলস ব ম্যাকলেনাহান ৯ ৬ ০ ১
মুশফিক ক টেলর ব অ্যান্ডারসন ৫০ ২৯ ৭ ১
নাঈম ক সাউদি ব মিলস ১৮ ১০ ৩ ১
নাসির ক ও ব নাথান ২৮ ২০ ৪ ০
মাহমুদউল্লাহ ক টেলর ব অ্যান্ডারসন ৩৪ ২৫ ০ ৩
সোহাগ রানআউট ২৪ ১৫ ১ ১
মাশরাফি অপরাজিত ৭ ৭ ১ ০
রাজ্জাক ব সাউদি ০ ১ ০ ০
আল আমিন অপরাজিত ৫ ৩ ১ ০
অতিরিক্ত (লেবা ৩, ও ১) ৪
মোট (২০ ওভারে, ৯ উইকেটে) ১৮৯
উইকেট পতন: ১-৪ (শামসুর, ০.২), ২-১১ (জিয়াউর, ০.৬), ৩-১৯ (মুমিনুল, ১.৪), ৪-৬২ (নাঈম, ৪.৬), ৫-১১৬ (মুশফিক, ১০.৬), ৬-১২০ (নাসির, ১১.৬), ৭-১৭৭ (সোহাগ, ১৭.৫), ৮-১৭৭ (মাহমুদউল্লাহ, ১৮.২), ৯-১৮৩ (রাজ্জাক, ১৯.১)।
বোলিং: সাউদি ৪-০-৩৮-৩ (ও ১), ম্যাকলেনাহান ৩-০-৪৫-১, মিলস ৪-০-৩২-১, নাথান ২-০-১৮-১, ডেভচিচ ৩-০-৩২-০, অ্যান্ডারসন ৪-০-২১-২।
ফল: নিউজিল্যান্ড ১৫ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কলিন মানরো।
বাংলাদেশের সেরা পাঁচ টি-টোয়েন্টি ইনিংস
বিপক্ষ ভেন্যু সাল
১৯০/৫ আয়ারল্যান্ড বেলফাস্ট ২০১২
১৮৯/৯ নিউজিল্যান্ড মিরপুর ২০১৩
১৮১/৭ শ্রীলঙ্কা পাল্লেকেলে ২০১৩
১৭৯/১ ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিরপুর ২০১২
১৭৫/৬ পাকিস্তান পাল্লেকেলে ২০১২
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।