আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে সামরিক আগ্রাসনের সক্ষমতা ভারতের নাই।



নিচের লেখাটি শেখ মহিউদ্দিন আহমেদের, এটি শেখনিউজ নামক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছিল। হুবহু লেখাটি দিয়ে দিলাম। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে রক্ষায় ভারত প্রয়োজনে সামরিক আগ্রাসন চালাতে পারে একথা শুনতে শুনতে নিজের কান পচে যাওয়ার উপক্রম। মোটা হলেই যেমন দারোগা হওয়া যায় না, তেমনি বিশাল বাহিনী থাকলেই সামরিক শক্তি হওয়া যায় না। বিশ্বের তাবৎ সামরিক জার্নাল ঘাঁটলে এটাই প্রতিয়মান হয়।

বিশ্বব্যাংকের সামরিক ডাটা অনুযায়ী বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ২১ হাজার। পক্ষান্তরে ভারতের ২৬ লাখ ৫০ হাজারের মত। চীনের ৩০ লাখের মতো। এবং পাকিস্তানের প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার। চীন ও পাকিস্তানের প্রসংগ টেনে আনা হলো এই জন্য যে ভারতের সামরিক সক্ষমতার সব চেয়ে বড় অংশ নিয়োজিত থাকে এই দু'দেশের সম্ভাব্য আক্রমন ঠেকাতে।

আমি কোন সামরিক বাহিনীর সদস্য নই। তবে কম বেশী সামরিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে পড়াশুনা করার চেষ্টা করেছি। দিনের পর দিন সামরিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বড় বড় সমরবিদদের সাথে আলোচনা করেছি। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় থেকে সংখ্যালঘু হিন্দু সহপাটিদের কাছ থেকেও ভারতের এই বিশাল মহাভারতীয় কিসসা শুনতে শুনতে মেজাজটা বিগড়ে যেতো। কিন্তু তখন জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে কোন জবাব দিতে পারতাম না।

সেই স্কুল জীবন পিছনে ফেলে এসে বাস্তবতার কাছাকাছি বসে আজ আমি তথ্যের নিরিখেই বলে দিতে পারি আমাদের চেয়ে প্রায় দশগুন বড় সশস্ত্র বাহিনীর অধিকারী ভারতের সক্ষমতা নেই বাংলাদেশে সামরিক অভিযান চালানোর। তাই ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। ভারতের সামরিক স্ট্র্যাটেজি বর্ণনার আগেই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে কিছু বলছি। মরহুম প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাকে স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার সমার্থক হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিন্যস্ত করেছিলেন ব্যাপকভাবে। এই বিষয়টি ভারতীয় সমর নায়ক এবং প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্টদের চিন্তিত করে তোলে।

যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভারত এতোটা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই লক্ষ্য ভিন্নদিকে প্রবাহিত হলে ভারতের প্রতিরক্ষা হুমকির মুখে পড়তে পারে ভেবেই তারা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল। কি ছিল জিয়াউর রহমানের সেই প্রতিরক্ষা বিন্যাসে? জিয়াউর রহমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে গণমুখী করে পুরো জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রচলিত বাহিনীর পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত গড়ে তুলেছিলেন প্রতিরক্ষার কাঠামো। তিনি প্রায় ১ কোটি মানুষকে যেকোন সামরিক দুর্যোগ মোকাবেলার মত সাহসী করে গড়ে তুলেছিলেন। সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআর’কে সামরিক বাহিনীর সামন্তরালে এনেছিলেন।

গড়ে তুলেছিলেন আনসার ব্যাটালিয়ন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর যার নেতৃত্ব ছিল সামরিক বাহিনীরই হাতে। এছাড়া রাইফেল চালাতে সক্ষম হিসেবে গড়ে উঠেছিল ১ কোটি মানুষ। সীমান্ত সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ছোট বড় অনেক সেনানিবাস। সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষন কাঠামতে সম্ভাব্য শত্রুর একটি প্রতিচ্ছবিও তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। যে কারনেই বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মনোবল একটি নির্দিষ্ট ছকে তৈরি হয়ে যায়, যা ছিল আমাদের প্রতিরক্ষা কাঠামোর অনস্বীকার্য একটি ধারা।

এই ধারা থেকে আমাদের সামরিক বাহিনীকে বিমুক্ত করার লক্ষ্যে ভারতের পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হয়। যার পরিনতিতেই জেনারেল মইন ইউ আহমেদদের আগমন আর আমাদের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারনার উৎপত্তি। খুদ খাওয়া বানরদের কলমেও আজকাল ভারতকে আমন্ত্রন জানানো হয় সামরিক হস্তক্ষেপের। টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় কলাম লেখা ঐ সকল বানরদের জ্ঞানের দৌড় দেখে আমি বেকুব হয়ে গেছি; হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছি না। এ সকল পদলেহি সারমেয়রা চিরদিন পদলেহন করেই খালাস।

নিজেদের এরা কখনোই বাংলাদেশী ভাবতে পারেনি। বাঙালী ভাবের ভেতরে ভারতীয় ভাবের সম্পৃক্ততা আছে বলেই এরা নিজেদের বাঙালী ভাবতে বেশী সাচ্ছন্দ বোধ করে। মহান দেশপ্রেমিক সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার মূল কারন ছিল পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার বিষয়ে তার সামরিক স্ট্র্যাটেজি। বন্ধু রাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে যেন স্বাধীন পূর্ব বাংলার ভুমি ব্যবহৃত হতে না পারে সেই লক্ষ্যে তিনি মুক্তিযুদ্ধের দলিল প্রনয়ন করেছিলেন। সিরাজ সিকদার বলেছিলেন স্বাধীন পূর্ব বাংলার ভুমি হবে সম্প্রসারনবাদী ভারতের কবল থেকে মুক্তিকামী রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অভয়ারন্য।

পূর্ব বাংলার ভুমিকে ব্যবহার করা হবে ঐ সকল মুক্তিকামী রাজ্যের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। এই দুজন মানুষের স্বপ্নের বিশ্লেষণই বাংলাদেশের সামরিক কৌশল বোঝার জন্য যথেষ্ট। আমাদের মানুষগুলোর চেতনাও এই আকাংখাকে ধারন করে। এইবার আমরা যদি মনে করি ভারত সত্যি আমাদের দেশের দিকে অভিযান চালাতে পারে, তবে কিভাবে তা করবে। প্রায় ২৬ লাখ ৫০ হাজার সেনার ভেতরে সে কয়জনকে বাংলাদেশে অভিযানের জন্য প্রেরন করতে পারবে।

আর আমাদের সামরিক বাহিনীই বা কি করবে? ভারতের এই বিশাল সেনাবাহিনীর মধ্যে বেশিরভাগ মোতায়েন থাকে চীন ও পাকিস্তান সীমান্তে। চীনের সীমান্তে একটু ঢিলে ঢালা ভাব হলে ৮০ হাজার বর্গমাইলের অরুনাচল প্রদেশ আর লাদাখ সংলগ্ন ভুমি ভারতের হাতছাড়া হয়ে যাবে। এমনিতেই ১৯৬২ সালের যুদ্ধে ভারত গো-হারা হেরে ৬৫ হাজার বর্গ মেইল খুইয়েছে। হাতছাড়া হয়ে গেছে কাশ্মীরের একটি অংশ পাকিস্তানের সাথে লড়াই করতে না করতেই। প্রতিবছর কারগিলের মতো ছোট খাট লড়াই চলতেই থাকে আর সংখ্যা কমতে থাকে ভারত বাহিনীর।

তাই চীন ও পাকিস্তানের মোট ৪০ লাখ সেনার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ২০ লাখ সেনার সাথে আরও ২০ লাখ রিজার্ভ ও সীমান্ত বাহিনী সর্বদাই মোতায়েন রাখতে হয়। এর মধ্যে বিমান, নৌ এবং অন্যান্য বাহিনী অন্তর্ভুক্ত। ভারতের আভ্যন্তরীণ মুক্তিকামী জাতি গোষ্ঠীর মুক্তিযোদ্ধাদের সামলাতে আরও কমপক্ষে ৫ লাখ সেনা প্রয়োজন। এখন বলুন বাংলাদেশে কত ডিভিশন সেনা অভিজান চালাতে পাঠানো সম্ভব? তার পরেও যদি আমরা ধরি ভারত যেভাবেই হোক বাংলাদেশে ১০টি ডিভিশন মানে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ সেনা অভিযানে পাঠালো। এই ১০ ডিভিশন সৈন্য কি আমাদের বাহিনীকে মোকাবেলা করতে সক্ষম? প্রচলিত যুদ্ধে আনবিক বোমা মারার কোন স্কোপ ভারতের থাকবে না।

১০ ডিভিশন পাঠানোর সুযোগে চীন তার ভুমি উদ্ধারে অভিযান চালাবে। পাকিস্তান নেমে পড়বে কাশ্মীর অভিযানে। এতো রিস্ক কি ভারত নেবে? এই রিস্কের ভেতর চীনের বর্তমান মিত্র রাশিয়াও আসবে না, আর যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকেও হাতছাড়া করার রিস্ক নেবে না। উল্টো আমাদের বাহিনীর কমপক্ষে ৫ টি ডিভিশন ভারতে ঢুকে পড়ে সেভেন সিস্টারের সাপ্লাই রুট দখল করে নেবে। একটু চেষ্টা করলে কোলকাতা দখলে নিয়ে নেয়াও অসম্ভব নয়।

আর একটি কথা সবার জ্ঞাতার্থে বলে রাখা ভালো পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতু সেনাবাহিনী হলো ভারতের বাহিনী, যাদের মনোবল চাংগা রাখতে রেশনে মদ সাপ্লাই দিতে হয়। আর ভারতের সেনাবাহিনীর প্রথম অগ্রযাত্রা রুখে দিতে আমাদের ৭০ হাজার সদস্যের সীমান্ত রক্ষা বাহিনীই যথেষ্ট। কোন জেনারেল সাহেব যদি ভারতীয় আগ্রাসনের সময় পলাশীর প্রান্তরের ভুমিকা পালন করেন তবে মীর মদন আর মহন লালের মতো মধ্য সারির কমান্ডারদের হাতে দালাল কমান্ডারদের জীবনহানি ঘটারও সভাবনা থাকবে। পলাশী বার বার ঘটে না। সব চেয়ে বড় যে ঘটনাটি তা হলো আমাদের সর্বমোট সামরিক সক্ষমতা প্রায় ৫ লাখ নিয়মিত সশস্ত্র যোদ্ধার মতো।

আর এই মুহূর্তে পূর্ণাংগ যুদ্ধ করতে সক্ষম মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ১০ লাখ। যা জয় করা ভারতের পক্ষে সক্ষম নয়। তাই ভারত সামরিক ঝুঁকি নেয়ার স্বপ্নও দেখে না, রাজনৈতিক চরিত্রহীনদের খরিদ করার ভেতরেই তাদের খেলা সীমাবদ্ধ রেখেছে। কারন পয়সা দিয়ে সরকার খরিদ করতে পারলে, রাজনীতিবিদ ও সমাজের অন্যান্যদের খরিদ করতে পারলে কেউই সামরিক ঝুঁকি নেয় না। ভারতও এমন বোকামি কখনোই করবে না।

তাই বাংলাদেশীরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারেন, পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতু সেনাবাহিনী কখনোই বাংলাদেশ আক্রমন করার ঝুঁকি নেবে না এবং তাদের সে সামর্থ্যও নাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.