আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।
একটি গণবিরোধী , ফ্যাসিস্ট , প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রের অন্তর্গত চরিত্রই হলো সেখানে ক্রমশ মত প্রকাশ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে অন্যান্য সকল রাজনৈতিক অধিকার ক্ষয়িষ্ণু হতে হতে অনেকাংশেই খর্ব হয়ে আসবে । রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা শাসকশ্রেণীর অংশটি বিরোধীপক্ষে থাকা শাসকশ্রেণীর অপর অংশের নেতা-কর্মীদের উপরেও প্রয়োজনবোধে খড়গহস্ত হয় , হবেই । এমনটা অনিবার্য । এই অনড় , অচল স্ট্যাটাস কো অক্ষত রাখবার জন্যেই জনগণের বাইরেও প্রয়োজনবোধে শাসকশ্রেণীর যেই অংশটি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেনা তার উপর শাসকশ্রেণীর ক্ষমতাসীন অংশটি খড়গহস্ত হয়ে এক ধরণের ক্যামোফ্লেজ ঘটানোর চেষ্টা করে ।
শাসকশ্রেণীর এই দুই অংশের দ্বন্দ্ব , বিরোধ ইত্যাদি নতুন করে কোন রাষ্ট্রের চিত্র তুলে ধরেনা । কারণ এই দ্বন্দ্ব , বিরোধ ইত্যাদি গণবিরোধী রাষ্ট্রের অন্তর্গত । সেই রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যেই এই দ্বন্দ্ব , বিরোধের বীজ বপন করা থাকে । জনগণের বুদ্ধিমান অংশ মাত্রই তাদের আজন্ম শত্রুদের এই আপাত দ্বন্দ্ব , বিরোধের মাঝে নিজেদের জড়ায়না , নিজেদের জড়াবেনা । কারণ দিনের শেষে এই দ্বন্দ্ব , বিরোধে তাদের কোন প্রাপ্তি নেই ।
তারা সর্বদা পরাজিত হয় , পরাজিত হবেই । পক্ষ - বিপক্ষ নির্ধারণের বিবেচনায় এই বিষয়টি স্মরণে রাখা বুদ্ধিমত্তারই পরিচয় বটে । সেই কারণে বিএনপির নেতা - কর্মীদের ধরপাকড়ে আম পাবলিকের আলাদা করে দুশ্চিন্তা করার কিছু দেখিনা । এই সংঘাতে আর যাই হোক তাদের কোন প্রাপ্তি নেই , কোন প্রাপ্তি থাকবেনা ।
গণতন্ত্র নামক সেই সোনার পাথরবাটির কথা শুনতে শুনতে আমাদের সবার কান ঝালাপালা সেই গণতন্ত্রের ভিত্তির দিকে লক্ষ্য করলে আমরা শুভঙ্করের ফাঁকিটা ধরতে পারি ।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিকে সার্বভৌম হিসাবে দেখা হয় বলে ধারণা দেওয়া হয় । যে কোন রাষ্ট্র যা গণতান্ত্রিক বলে পরিচিত সেই রাষ্ট্রে ব্যক্তির ইচ্ছা এবং সংকল্পকে কেন্দ্র করে সেই রাষ্ট্র গড়ে উঠে বলে ধারণা দেওয়া হয় । এই ধারণাগুলোতে স্ববিরোধীতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় সেই রাষ্ট্রের আইন - কানুন , সংবিধান ইত্যাদি সমূহ দেখলে । সেসবে মানুষ মাত্রই স্রেফ নাগরিক যাকে তার নাগরিক অধিকার এবং কর্তব্যের মাঝেই সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে । অর্থাৎ জীবের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন যেই চরিত্রের সমন্বয়ে মানুষ গঠিত তাকে সন্তর্পনে সরিয়ে রাখা হয়েছে আইন - কানুন , সংবিধানে ।
যেমন সেখানে বর্ণিত আছে খুন করলে শাস্তি মৃত্যুদন্ড । কিন্তু এটা নিশ্চিত করা হয়নি মৃত্যুদন্ডের পরিবার , পরিজনের অর্থনৈতিক জীবনে কিভাবে সেই মৃত্যুদন্ডের ক্ষতিপূরণ করা হবে । সমাজের বৃহৎ অংশে তাদেরকে কিভাবে আগের মতো একীভূত করা যাবে । আইন - কানুন , সংবিধানে অপরাধী মানেই তার সমাজ , পারিপার্শ্বিক ইত্যাদি থেকে বিমূর্ত এক চরিত্র । অথচ প্রকৃত চিত্র কখনোই এমন হতে পারেনা ।
একদিকে বলা হচ্ছে ব্যক্তির ইচ্ছা এবং সংকল্পের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র । অন্যদিকে আইন - কানুন , সংবিধান ইত্যাদিতে তাকে স্রেফ নাগরিক অধিকার , নাগরিক কর্তব্যের সীমারেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে মোদ্দাকথা তাকে যান্ত্রিকভাবে স্রেফ নাগরিক পরিচয়ে পরিচিত রেখে তার অন্তর্গত প্রাণগত বৈশিষ্ট্যকে প্রান্তিক করে ফেলা হয়েছে । এই দ্বন্দ্বের জায়গাগুলো বুঝতে সক্ষম না হলে যে কোন ধরণের জগাখিচুড়ীকেই গণতন্ত্র বলে চালিয়ে দেওয়া সম্ভব । বাংলাদেশে যেই চিত্র আমরা প্রতিদিন অবলোকন করছি ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।