অধ্যায় দুই: রাহুতলা
“তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, আমাদের প্রজেক্টের কাজের জন্য এই গ্রামটিই বেস্ট?” টেবিলের অপর পাশে বসা মাঝারি গড়নের লোকটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন রায়হান আবীর। লোকটি মাথা নাড়লেন। “যদিও আপনি ইতোমধ্যে আমাদের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটরের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন, কিন্তু আপনি কি আবারও আমাকে বলবেন কেন আমরা এই গ্রামটিকেই সিলেক্ট করবো?” রায়হান আবীরের প্রশ্ন শুনে লোকটি ব্যাগ থেকে তিন-চারটি মাঝারি আকৃতির ম্যাপ বের করে টেবিলে বিছিয়ে দিলেন।
“আমি জানতাম, আপনি বিস্তারিত জানতে চাইবেন। তাই কিছু ম্যাপ যোগাড় করেছি”- বলা শুরু করলেন ভদ্রলোক।
নাম পাপন, পাপন রায়। “আসলে পত্রিকায় আপনাদের বিজ্ঞপ্তিটি দেখার পর যোগাযোগ করেছিলাম আপনাদের অফিসে। সেখান থেকে আপনাদের রিকোয়ারমেন্ট জেনে সে অনুযায়ী কয়েকটি স্থানের তালিকা তৈরি করি। তারপর প্রতিটি স্থানকে আলাদা আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করে স্থানগুলোর একটা সিরিয়াল তৈরি করি এবং দেখতেই পাচ্ছেন এই গ্রামটি সিরিয়ালের সবার আগে। আমি মনে করি, অন্য স্থানগুলোর তুলনায় এটা নানা দিক দিয়েই এগিয়ে আছে”।
একটু থামলেন ভদ্রলোক। অপ্রস্তুত মুখে আমতা আমতা করে বললেন, “ইয়ে, মানে একটু চা বা কফি হলে ভালো হয়। ব্যাখ্যা করতে তো সময় লাগবে! গলা শুকিয়ে আসছে”। পাশের ঘরে গিয়ে নিজের হাতেই দুকাপ চা বানিয়ে আনলেন বিজ্ঞানী ও এই প্রজেক্টের প্রধান ব্যক্তি রায়হান আবীর।
“আমি প্রথমে যে তালিকাটি তৈরি করি তাতে সবার আগে প্রজেক্টের জন্য বেছে নিয়েছিলাম নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার একটা গ্রামকে...” পাপন সাহার বক্তব্যে বাধা দিয়ে রায়হান আবীর বললেন, “অন্যগুলো সম্পর্কে কি আমার জানার প্রয়োজন আছে।
বরং যেটা সিলেক্ট করলেন সেটা কেন সিলেক্ট করলেন, তা বলাটাই কি ভালো নয়?”
“না। পুরোটা জানলে আপনি সহজেই তুলনা করতে পারবেন কেন তালিকার প্রথম নামটি সেরা”। রায়হান আবীরের সম্মতিসূচক মাথা নাড়া দেখে ভদ্রলোক শুরু করলেন, “চলনবিলের ঠিক এক কর্নারে যে গ্রামটিকে প্রাথমিকভাবে সিলেক্ট করেছিলাম, সেটি জায়গা হিসেবে ভালো ছিল। নিরিবিলি। আপনাদের কেউ ডিস্টার্ব করতো না।
কিন্তু আপনারা যে ধরনের নিরাপত্তা চেয়েছেন, একটা পর্যায় পরে সেটা বজায় রাখা সম্ভব হতো না। জানেন বোধহয়, চলনবিলের মাঝখান দিয়ে একটা হাইওয়ে তৈরি করা হয়েছে। ওটা গিয়ে মিশেছে নাটোর-পাবনা রোডে, তিন রাস্তার মোড়টার নাম বনপাড়া বাজার। ওই জায়গা দিন দিন এমন ব্যস্ত হয়ে উঠছে যে, ওখান থেকে আমার নির্বাচিত জায়গা প্রজেক্টের শেষদিকে হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠতে পারে, কারণ বনপাড়ার মানুষজন ওদিকে বাড়িঘর তৈরি করে বাজারের এলাকা বাড়ানোর একটা চেষ্টা চালাচ্ছে। তাছাড়া একটু এগিয়ে গেলেই বড়াইগ্রাম উপজেলা বাজার।
বেশ কোলাহলপূর্ণ। সুতরাং সব মিলিয়েই এটাকে বাদ দিয়েছি”।
“দ্বিতীয় যে জায়গাটি নির্বাচন করেছিলাম, তা একেবারে সুন্দরবনের পাশে, সাতক্ষীরার শ্যামনগরে। কিন্তু বছরখানেক ধরে রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে পরিবেশবাদী ও বামপন্থীরা বেশ হইচই করেছে [১]। এর দ্বারা সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আপনাদের প্রজেক্ট সম্পর্কে আমার খুব বেশি জানা নাই, কিন্তু সুন্দরবনের পাশে আরও কোনো প্রজেক্টের জন্য ল্যাব স্থাপন করতে গেলে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষ করে পরিবেশবাদীরা ক্যাঁক করে ধরতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনারা যে ধরনের গোপনীয়তা আপাতত চাচ্ছেন, সেটা রক্ষা করা সম্ভব নাও হতে পারে”।
“তৃতীয় জায়গাটি নির্বাচন করেছিলাম মৌলভীবাজারের জুড়িতে। আপনাদের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর জানালেন, ওই জায়গাটি সরকার ইতোমধ্যে আরেকটি প্রজেক্টের জন্য বরাদ্দ করেছে।
নতুবা এটা একটা দারুণ জায়গা হতো”।
“এর পরে নজর দিই আরেকটি এলাকা যেটার সঙ্গে তালিকার এক নম্বর স্থানটির সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওরে এমন অনেক গ্রাম আছে, যেগুলোর সঙ্গে প্রজেক্টের ক্রাইটেরিয়া পুরোপুরি মিলে যায়। কিন্তু যেহেতু এর একটি বিশাল অংশকে রামসার স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সুতরাং এটাকে বাদ দিতে হচ্ছে।
আমি ভেবেছিলাম, যে অংশটি রামসার স্থান হিসেবে চিহ্নিত নয়, সেখানে প্রজেক্ট ল্যাব স্থাপন করা যেতে পারে; কিন্তু রামসার স্থানের আশেপাশে কোনো স্থাপনা থাকলে, তা নাকি পরিবেশে জন্য হুমকিস্বরূপ হবে”।
“আমি বুঝতে পেরেছি” ভদ্রলোককে থামিয়ে দিয়ে বললেন রায়হান আবীর। “যে জায়গাগুলো বাদ দেয়া হয়েছে সেগুলো বাদ দেয়ার কারণগুলো সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পেয়েছি। এখন যেটি আপনি সিলেক্ট করেছেন, সেটি সম্পর্কে বলুন”।
“আপনি কি আমার কথায় বিরক্ত হচ্ছেন?” জানতে চাইলেন ভদ্রলোক।
একটু বিব্রত হলেন রায়হান আবীর। মনে মনে ভাবলেন, এভাবে বলা হয়তো ঠিক হলো না- “না, না, বিরক্ত হবো কেন? আমি আসলে একটু উত্তেজিত। অনেকদিন ধরেই আমরা প্রজেক্টের জন্য জায়গা খুঁজছিলাম, কিন্তু নিজেরা পেরে উঠছিলাম না। শেষে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিই। এখন মনে হচ্ছে, আমরা মোটামুটি জায়গা নির্বাচনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।
কারণ আপনি এতোক্ষণ যে জায়গাগুলোর কথা বললেন, সেগুলোর খোঁজ পেলে আমরা হলে ইতোমধ্যে এগুলোর কোনো একটিকে বেছে নিয়ে কাজ শুরু করতাম- আগেপিছে কিছু না ভেবেই। আপনি যেভাবে বিস্তারিত বলছেন, সেভাবে আমরা চিন্তা করি নি। আপনি বলেন প্লিজ”।
“ঠিক আছে। যেহেতু মূল বিষয়টা বুঝাতে পেরেছি, তাহলে সরাসরি তালিকার প্রথমে থাকা স্থানের বর্ণনায় চলে আসি।
আপনাদের জন্য যে জায়গাটি সবচেয়ে উপযুক্ত সেটি একটি গ্রাম- হাওরের মধ্যে। রাহুতলা”। ম্যাপে আঙ্গুল দিয়ে দেখালেন পাপন।
“রাহুতলা! অদ্ভুত নাম! যা হোক, এই গ্রামের বৈশিষ্ট্য কী”? জানতে চাইলেন রায়হান আবীর।
“প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গ্রামটির অবস্থান।
এটি হাওরের মধ্যে। আশেপাশের এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন। যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ দুর্গম। বর্ষাকালে প্রচুর পানির ব্যবস্থা আছে। আপনারা চেয়েছিলেন এমন একটা বিচ্ছিন্ন এলাকা যেখানে মূল প্রজেক্ট ল্যাব যেখানে হবে, তার চারদিকে আরও কিছু ল্যাব তৈরি করা হবে।
রাহুতলার আশেপাশে আছে বেশ কিছু গ্রাম, সেগুলোও বিচ্ছিন্ন। যেমন- আপনি আরও কয়েকটি ল্যাব স্থাপন করতে পারবেন আঁটগাও গ্রামে, শালদীঘা গ্রামে, লেপসিয়া বাজারে, চাকুয়া গ্রামে, দাউদপুর ও মামুদপুর গ্রামে। একটা ওয়াচ টাওয়ার আপনারা স্থাপন করতে চান। এক্ষেত্রে লেপসিয়া বাজার সবচেয়ে উপযুক্ত। বাজারটি হাওরের মধ্যে হওয়ায় এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে তা সহজে ঢেউয়ের কারণে ভেঙ্গে না যায়।
তাছাড়া আশেপাশের গ্রামগুলোর মধ্যে বাজারটি অনেক উঁচু। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, রাহুতলা গ্রামটি এমন জায়গায় অবস্থিত যেখান থেকে নেত্রকোনা জেলা, সুনামগঞ্জ জেলা, কিশোরগঞ্জ জেলা ও হবিগঞ্জ জেলা মোটামুটি সমদূরত্বে অবস্থিত। লেপসিয়া বাজার থেকে রাহুতলার দূরত্ব মাত্র ৩/৪ কিলোমিটার। কিন্তু রাহুতলা অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলায় আর লেপসিয়া, শালদীঘা বা চাকুয়া অবস্থিত নেত্রকোনা জেলায়। এদিকে কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন বা নিকলি কিংবা সুনামগঞ্জের দিরাই, তাহেরপুর বা ধর্মপাশাও মোটামুটি কাছাকাছি।
হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ, নবীগঞ্জ কিংবা আবদুল্লাহপুর একই দূরত্বে অবস্থিত। সুতরাং আপনি চাইলে চারটি জেলা প্রশাসন ও অন্তত দশটি উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা নিতে পারবেন” [২]। থামলেন ভদ্রলোক।
অবিশ্বাসের দৃষ্টি দেখা গেলো রায়হানের চোখে। এই ভদ্রলোক যেভাবে অনুপুঙ্খ বর্ণনা দিলেন, সেটা এক কথায় অবিশ্বাস্য।
বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকা সম্পর্কে ভালোভাবে জানাশোনা না থাকলে এভাবে বর্ণনা দেয়া মুশকিল। “কিন্তু আমি যেখানে প্রজেক্ট ল্যাব স্থাপন করতে চাই, সেটাকে আবার দুভাগে বিভক্ত থাকতে হবে এবং কোনো দেয়াল বা কৃত্রিম কিছু দিয়ে নয়। নিরেট পানি দিয়ে”। বললেন রায়হান।
ভদ্রলোক হাসলেন- “সেজন্যই তো বলছি রাহুতলা গ্রামটা আপনার পছন্দ হবে।
পুরো গ্রামটার দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটারের কিছু বেশি, প্রস্থে ৩০০ মিটারের বেশি হবে না। মূল রাহুতলা গ্রামটি পূর্বদিকে, প্রায় এক কিলোমিটারের মতো লম্বা। অপরদিকে গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে একটা খাল, যেটি রাহুতলা গ্রামটিকে দুইভাগে ভাগ করেছে। অপর পাশটি অর্থাৎ পশ্চিম দিকের বড় অংশটির নাম সাত নম্বর। রাহুতলা গ্রামের বাসিন্দারা তুলনামূলকভাবে ধনী, অধিকাংশই স্বচ্ছল কৃষক।
হাওরের শুকনো মৌসুমে ধান উৎপাদনই তাদের মূল পেশা। অপরদিকে সাত নম্বরের মানুষজন গরীব, সারা বছর মাছ ধরা ও বিক্রি করা তাদের মূল কাজ। বছরে ছয় মাস হাওরে পানি থাকে না, তখন তারা বেকার হয়ে পড়ে। কিন্তু সাত নম্বরে নদীর ও হাওরের ভাঙন তুলনামূলকবভাবে কম যা রাহুতলা অংশে বেশি দেখা যায়। ফলে রাহুতলার অনেক মানুষ এখন সুনামগঞ্জ কিংবা নেত্রকোনায় বসতবাড়ি স্থাপন করছে”।
“গুড! গুড!” দারুণ খুশি রায়হান।
“কিন্তু একটা সমস্যা থেকে যাচ্ছে, অবশ্য সেটা সমাধানের দায়িত্ব আপনাদের”। বললেন পাপন রায়।
“কী সেটা”? জানতে চাইলেন রায়হান।
“আমি যে গ্রামগুলোর কথা উল্লেখ করলাম, তার প্রতিটির বাসিন্দারাই গরীব।
যারা তুলনামূলক স্বচ্ছল, তারাও উজানের এলাকার চেয়ে গরীব। নদী ভাঙন ও হাওরের ভাঙন, যোগাযোগের অপ্রতুলতা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি কারণে অনেকে এই এলাকা ছাড়তে পারলে বাঁচে। তবে তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আপনারা যদি এই এলাকাগুলো প্রজেক্টের জন্য নেন, তাহলে মানুষগুলোর কী হবে? তাদেরকে কি উচ্ছেদ করে জোর করে প্রজেক্ট ল্যাব স্থাপন করবেন”? পাপনের চোখে প্রশ্ন।
“না, না, তা অবশ্যই নয়” দ্রুত জবাব দিলে রায়হান।
“আমরা যে প্রজেক্টে কাজ করছি, তাতে যদি সফল হতে পারি, তাহলে এ থেকে যে অর্থ আসবে তা সম্পূর্ণভাবেই সাধারণ মানুষের কাজে ব্যয় করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ আমরা সবাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সে অনুযায়ী প্রজেক্ট প্রপোজাল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়সমূহ ঠিক করা হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে কিছু করবো না। এই প্রজেক্ট ল্যাব স্থাপন করা হলে অনেককে ভিটামাটি ছাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে তাদের পছন্দ অনুযায়ী অন্য কোনো জেলায় পুনর্বাসন করবো।
শুধু তাই নয়, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় চাকরি বা জমির বন্দোবস্ত করে দিব। এমনকি তারা এখন যে অবস্থানে আছে, তার চেয়ে ভালো অবস্থা বা সুযোগ সৃষ্টি না করে কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না”।
“স্বস্তি পেলাম শুনে” - ভদ্রলোক বললেন। ওদিকে রায়হান আবীর মনে মনে ঠিক করে ফেলেছেন এই জায়গাটিতেই তিনি প্রজেক্ট ল্যাব স্থাপন করবেন। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে রায়হান বললেন, “আপনার বর্ণনা আমার পছন্দ হয়েছে।
ভাবছি, যখন আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবো, আপনাকেসহই আমরা সেখানে যাবো। আপনার কি আপত্তি থাকবে”?
“আমি সম্মানিত বোধ করবো” ভদ্রলোকের মুখে হাসি।
একটু ইতস্তত করে রায়হান বললেন, “একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি, যদি কিছু মনে না করেন। আপনি এতো খুঁটিনাটি বর্ণনা দিলেন কীভাবে? শুধু রাহুতলা নয়, অন্যান্য জায়গা সম্পর্কে আপনার অনেক জ্ঞান। আপনি কি এই জায়গাগুলোতে গিয়েছেন? নাকি ইন্টারেনটের সহায়তা নিয়ে জেনেছেন”?
পাপন হেসে ফেললেন।
বললেন, “আপনি কি আমার সিভিটা দেখেছিলেন? ওটা দেখলে হয়তো আপনার অনেক কিছু জানা হয়ে যেত”।
“স্যরি, না, আসলে আমি দেখতে পারি নি। আসলে এতো ব্যস্ত থাকতে হয় যে, সবকিছু একা দেখা মুশকিল। তাছাড়া আমি জানতাম আমাদের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর সঠিক মানুষ বাছাই করতে ভুল করবে না। প্লিজ, আপনি যদি আপনার সম্পর্কেও বলেন একটু।
প্লিজ”। রায়হান অনুরোধ করলেন।
“বেশ। আমি একজন শিক্ষক। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার আগে দুটো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় বছর দশেক গবেষক হিসেবে কাজ করেছি। সেই সুবাদে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রায়ই দেশের আনাচেকানাচে যেতে হতো। বর্তমানে সম্ভবত দেশে ৫০০টির মতো উপজেলা রয়েছে [৩]; বলতে একটু লজ্জা লাগলেও গর্ব হয় যে, এর মধ্যে ৪৭৫-৪৮০টির মতো উপজেলায় আমি গিয়েছি। যদিও সব উপজেলার সবকিছু আমার খুঁটিনাটি মনে নেই, কিন্তু এই সব উপজেলা সম্পর্কে কিছু না কিছু ধারণা আছে। আজকে যে কথাগুলো বললাম বা তথ্যগুলো দিতে পারলাম, তা সম্ভব হয়েছে এই ভ্রমণের জন্যই।
এতে আমার আলাদা কোনো ক্রেডিট নেই। আর রাহুতলা! ওটায় আমি গিয়েছি অনেকবার। আমার মামাবাড়ি। যখন দেখলাম যে, আপনাদের প্রজেক্টের সঙ্গে এই গ্রামের প্রায় সব বৈশিষ্ট্যই মিলে যাচ্ছে, তখন মনে হলো এর জন্য একটু চেষ্টাচরিত্র করা উচিত। আপনাদের প্রজেক্ট স্থাপনের ফলে যদি রাহুতলা ও আশেপাশের গ্রামের মানুষদের দারিদ্র্যতা দূর হয়, আমি অত্যন্ত খুশি হবো” ভদ্রলোক আস্তে আস্তে কিন্তু জোর দিয়ে প্রতিটা কথা বললেন।
কিছুক্ষণ পর ভদ্রলোক চলে যাওয়ার পর রায়হান কিছুটা ভাবলেন তাঁকে নিয়ে। তাঁর সঙ্গে কথা বলার আগে রায়হানের উচিত ছিল সিভিটা দেখে নেয়া। তাহলে অনেক সুবিধা হতো। দেশের আনাচেকানাচের এলাকা সম্পর্কে ভদ্রলোকের যে জ্ঞান, তাতে মনে হয় তাঁকে ভবিষ্যতে কাজে লাগানো যাবে। তাছাড়া তাঁকে সাধারণ মানুষের প্রতি বেশ আন্তরিকও মনে হলো।
বোধহয় কাজে লাগানো যাবে। একটা সিদ্ধান্ত নিলেন রায়হান। ইন্টারকমে প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটরকে ডাকলেন। ভদ্রলোকের ফাইল ও অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে আসতে বললেন। একটু পর বিশাল মোটা এক ফাইল ও প্রচুর কাগজপত্র নিয়ে ঢুকলেন প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর বিজয় লক্ষ্মী চৌধুরী।
প্রাসঙ্গিক টীকা
[১] রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে পরিবেশ ও বামপন্থীদের প্রতিবাদের খবরটি দেখতে পারেন এখানে এবং এই বিতর্কের কারণগুলো জানতে পারেন এখান থেকে।
[২] গুগল ম্যাপে সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার রাহুতলার কোনো উল্লেখ নেই। থাকার কথা না। এই লিংক ধরে আপনারা যে ম্যাপটি দেখতে পাবেন, সেখানে দেখবেন মাঝখানের একটা বিশাল এলাকাতে কোনো নাম চিহ্নিত করা নেই। ওখানেই কোথাও রাহুতলাসহ অন্য গ্রামগুলো অবস্থিত।
[৩] উইকিপিডিয়া অনুসারে বাংলাদেশে বর্তমানে উপজেলা সংখ্যা ৫০০।
---
মঙ্গলের ছায়া: প্রথম পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।