সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘তারিখবিহনী’ পদত্যাগপত্র তুলে দেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা।
অবশ্য অর্থমন্ত্রী আবুর মাল আবদুল মুহিত, দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন আগেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে রেখেছেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রীসভা ভেঙে দেয়া হচ্ছে না। সর্বদলীয় সরকার গড়তে মন্ত্রিসভার পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াতেই মন্ত্রীদের এই পদত্যাগপত্র।
সর্বদলীয় সরকারে যারা থাকবেন, তাদের পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করবেন না।
তাদের আর নতুন করে শপথ নেয়ারও দরকার হবে না।
আর যারা সর্বদলীয় সরকারে থাকবেন না, তাদের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। পরে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে সচিব জানান।
সংবিধান অনুযায়ী একজন মন্ত্রী পদত্যাগপত্র জমা দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা কার্যকর হয়ে যাওয়ার কথা। তবে এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না।
একাধিক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, পদত্যাগপত্রে তারা কেউ তারিখ উল্লেখ করেননি।
মন্ত্রিসভার গত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র দিতে বলেছিলেন বলে গণমাধ্যমের খবর।
আর সোমবার বৈঠকের শুরুতেই মন্ত্রিসভার সদস্যরা একে একে পদত্যাগপত্র দেয়ার পর শেখ হাসিনা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান দুইজন মন্ত্রী।
তারা জানান, মনোনয়ন ফরম কিনে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী কাজে নেমে পড়তে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রিসভার এক সদস্য জানান, মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তারা নিয়মিত দাপ্তরিক ও নির্বাহী দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়া নিয়ে ইয়াফেস ওসমান মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন বলেও একজন সদস্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভার বর্তমান কাঠামোতে এটিই ‘হয়তো’ মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক।
তবে নতুন ‘সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায়’ কতোজন সদস্য থাকবেন, কবে নাগাদ তারা শপথ নেবেন- এ বিষয়ে কিছু জানাতে না পাওলেও সচিব বলেন এই মন্ত্রিসভা হবে ‘আকারো ছোট’।
সচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এ সংখ্যা এখনো বলেননি, এটি বললে প্রজ্ঞাপন খুব কম সময়েই হয়ে যাবে। নতুনভাবে যারা মন্ত্রী হবেন তাদের শপথ নিতে হবে, এরপর নতুন করে দপ্তরও বণ্টন হবে।
”
সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা কি ধরনের কাজ করবে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে কিনা- সে বিষয়ে নতুন মন্ত্রিসভাই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।
প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সর্বদলীয় সরকারে না এলে কি হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন “প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ‘অফার’ দিয়ে রেখেছেন। সে ‘অফার’ কে কে গ্রহণ করেছন সে তথ্য আমার কাছে নেই। তবে সেখানে বিভিন্ন দলের সদস্যরা থাকবেন। ”
অবশ্য তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপিকে সর্বদলীয় সরকারের আনার চেষ্টা তারা করে যাবেন।
গত ১৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকলীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের এই প্রস্তাব দেন এবং বিরোধী দলকে তাতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
তবে এর দুই দিন পর প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাখান করে সাবেক উপদেষ্টাদের নিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নতুন প্রস্তাব দেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
ওই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার দাবিতে দুই দফায় ছয় দিন হরতাল করার পর রোববার থেকে আরো চারদিনের হরতাল করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করে বিরোধী দলীয় নেতাকে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে গণভবনে আমন্ত্রণ জানালেও খালেদা জিয়া তাতে সাড়া দেননি।
প্রধানমন্ত্রী বরাবরই বলে আসছেন, অনির্বাচিত কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচন তিনি সমর্থন করবেন না।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর মধ্য থেকেই সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা হবে, যার অধীনে হবে দশম সংসদ নির্বাচন।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে এই নির্বাচন হতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।