আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাঁদা ফুলের উপাখ্যান



প্রথম পর্ব নিরিবিলি দুপুর। পার্কের মাঝখানের বড় পকুরটাতে আজ কটা হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাতাসটাও যেন ভালো খেলছে। এমন একটা দুপুর আসলেই উপভোগ করার মত। কিন্তু শহরের এই ব্যস্ততার মাঝে এমন অনর্থনৈতিক জিনিসের নিমন্ত্রন অর্থনৈতিক কাজকর্মের নির্দেশের তলায় চাপা পড়ে থাকে বলে মানুষ উপভোগ করার সময়ও খুঁজে পায় না।

না না, ভুল বললাম, সব মানুষ নয়, বরং বেশিরভাগ মানুষ সময় পায় না । কিছু কিছু মানুষ তো অবশ্যই সময় পায়। নয়তো নির্জন পার্কে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচের বেঞ্চটাতে ঐ ছেলেটা বসে থাকবে কেন ?? সবুজ পাঞ্জাবী, সাদা পায়জামা পরনে, বেঞ্চের ওপর নিজের শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে । হাতে একটা ঘড়ি আছে কিন্তু ছেলেটার সময় নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। কারন যারা তাকে চেনে, তারা দেখেছে, গত কয়েক বছরে একমাত্র ঘড়িটা হাতে পরার সময় ছাড়া তাকে আর ঘড়ির দিকে তাকাতে দেখা যায় নি।

ঘড়ির কাঁচটাও ঘোলা হয়ে আছে। কিন্তু তাতে কি ? সারা শহরের মানুষ কিন্তু আসলেই ব্যস্ত। পার্কের অন্যদিক থেকে তাই হনহনায়মান এক আকৃতি দেখা দিল। ভাগ্যিস, পার্কের রাস্তাগুলো লাল ইট দিয়ে বাঁধানো। ধূলিধূসরিত হলে আজ তার হনহন করে চলার দাপটে সারা পার্ক একাকার হয়ে যেতো।

কিন্তু তা আর হল না। তাই চোখ মুদে বসে থাকা যুবকের চোখও খুলল না। কিন্তু সেই দ্রুতগতি ছায়ামুর্তিটা যখন কাছে এসে যুবককে ডেকে তুলল তখন ভদ্রতার খাতিরেই চোখ খুলল যুবক । তাকাল পেছন দিকে। দেখল... প্রথমে কিছুই দেখতে পেল না।

কারন পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার কাপড়ের গাড় টিয়া রঙ তার চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে। একটু ধাতস্থ হয়ে বলল, “জি, আমাকে বলছেন ??” “জি মশাই, আপনাকে বলছি, এখন কটা বাজে বলুনতো ?” অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল কিশোর। হ্যাঁ, আমাদের আজকের গল্পে যুবকটির নামও কিশোর। কিশোর বুঝতে পারছেনা , কটা বাজে মানে কি......... তার তো এখানে কারো জন্য অপেক্ষা করার কথা না, তাছাড়া এই মেয়েটাকে তো চেনাজানা বলে মনে হচ্ছে না...... “আরে মশাই, আমার ইন্টারভিউ আছে, কটা বাজে জানতে চাইছি” “ও আচ্ছা, এই কথা, আমি ভাবলাম, আমি আবার আমার অজান্তেই আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম কিনা............ ২ টা ১৫ বাজে। ” কয়েক বছরে আজ এই প্রথমবার ঘড়ি দেখল কিশোর ।

ঘোলা কাঁচটা ঘষে পরিষ্কার করে নিয়ে সময় দেখল সে। কিন্তু সে আবার বসে পড়ার আগেই দেখল মেয়েটা ছুটে চলছে অন্য প্রান্তের গেটের দিকে। বসে পড়ল কিশোর। বসে বসে স্বপ্ন বানাতে লাগলো। হ্যাঁ , আমাদের কিশোর স্বপ্ন দেখে না, স্বপ্ন বানায়।

দ্বিতীয় পর্ব নিরিবিলি দুপুর। পার্কের মাঝখানের বড় পকুরটাতে আজ কটা হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাতাসটাও যেন ভালো খেলছে। আর আজকেও আমাদের কিশোরকে দেখা গেল সেই পার্কে । সেই বেঞ্চে, সেই কাপড়ে, হঠাত কিছুটা দূরে দেখা দিল এক মানুষের আকৃতি , কিন্তু আজকের মানুষটি হনহনায়মান নয়।

কাছে আসতেই জুতার হালকা খসখসে আওয়াজে চোখ খুলল কিশোর। দেখল, আজকের মানুষটি হল সেই দিনেরই সেই সময় জানতে চাওয়া মহীয়সী । কিশোরের কাছে এসে দাঁড়াল সে। “আজ পকেটে টাকা আছে, চলেন, আপনাকে একটা ঘড়ি কিনে দেই। ” “না না, আজ আর সময় জানতে আসিনি।

এলাম ধন্যবাদ দিতে। ” “ধন্যবাদ দিতে? কেন?” “বা রে, ঐদিন আমার ইন্টারভিউ ধরতে হেল্প করলেন যে । ” “কিন্তু শুকনো ধন্যবাদে মন ভরে না, ঐ যে , আইসক্রিমওয়ালা আসছে, আমি ডাকছি, আপনি দুটো আইসক্রিম অর্ডার করবেন ” “আপনি তো দেখি বহুত চালু............ দেখে তো ভবঘুরে টাইপের মনে হয়। সে যাকগে, ডাকুন দেখি, আইসক্রিমই খাই । ” “এই তো ভাল মানুষের মতন কথা, তা ভালো মানুষের নামটা কি জানতে পারি ??” বলল কিশোর।

“যাক, তবে জিজ্ঞেস করলেন অবশেষে। আমি তো ভাবলাম আর নিজের নামটাই বলা হবে না। আমি রমা । ” আইসক্রিম নেয়া হল, খেয়েই চলেছে কিশোর, চরম মনোযোগের সাথে। অবশেষে রমাই কথা বলল, “প্রতিদিনই কি এখানে এসে বসেন ?” “এইতো, যখন সময় পাই।

” “তা এখানে এসে বসেন কেন ?? স্মৃতিচারণ করেন নাকি?? আছে নাকি কিছু ??” বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো রমা। “স্মৃতিচারণ করি না, স্মৃতি তৈরির আশায় বসে থাকি। ” “তা আজ পর্যন্ত কয় গন্ডা স্মৃতি জমল?” “আপনি ছাড়া এই ক মাসে আর কিছু কামাই করতে পারিনি। ” “আমাকে কামাই করলেন ?? এই, মানে কি এগুলার ??” “না, মানে আপনার স্মৃতিটুকু ছাড়া আর কোন কিছু পাইনি স্মৃতির খাতায় টুকে রাখবার জন্য। ” “ও আচ্ছা, তাই বলুন।

” কিন্তু কিশোর জানে সে কি বলেছে। সে জানে রমা যা ভেবেছে তাই সত্যি। সে তাকিয়ে রইল রমার মুখের দিকে। পড়ন্ত বিকেলে রোদটা রমার মুখের অনুজ্জ্বল ফর্সা রঙটাকে সোনালী রঙে পরিনত করেছে। স্বর্ণের রংটাকে কিশোর দুই জায়গায় ভালবাসে।

এক, যখন ভোরের সূর্যের প্রথম কিরন তার ঘরের দেয়ালসহ সবকিছুকে স্বর্ণালী করে দেয়। আর আজ থেকে, সেই স্বর্ণালী রঙ যা রমার মুখটাকে রাঙ্গিয়ে দেয়। তৃতীয় পর্ব আজ থেকে বছর দুয়েক আগে কিশোর নামে এক যুবকের হঠাত স্বর্ণালী রঙ ভালো লাগতে শুরু করে। আর সেদিন থেকে প্রতিটি দিন তাই একই সময়ে একই জায়গায় সে বসেছিল , তার প্রিয়াকে সামনে নিয়ে, স্বর্ণালী রঙ দেখবার আশায় । পড়ন্ত বিকেলের রোদে তার প্রিয়ার মুখে যে স্বর্ণালী রঙ পড়ে তা বসে বসে দেখে।

আর তার প্রিয়া, রমাও তার দিকে চেয়ে বসে থাকে। চলতে থাকে কত হেয়ালি, সাথে খামখেয়ালি। কিন্তু তারই ফাঁকে ফাঁকে কত কথা বলা হয়ে যায়, কেবল দুটি মানুষই জানে । “ভাইয়া, আপুকে একটা ফুল দেন। ” ছোট্ট একটা কণ্ঠ বলে উঠলো পাশ থেকে।

একটা ছোট্ট মেয়ে, হাতে কিছু ফুল। “আচ্ছা, ফুল দেব? তুমিই নাহয় পছন্দ করে দাও একটা। ” “আমি দিমু ?? তবে এইটা লন। ” মেয়েটা কিশোরের হাতে তুলে দিল একটি গাঁদা ফুল। “আমি তো জানতাম তোমার অন্য ভাইয়ারা আপুদের গোলাপ ফুল দেয়, কিন্তু তুমি আমাকে গাঁদা ফুল দিলে কেন ? ” “ভাইয়া, গোলাপ তো শুকাইলেই শেষ।

কিন্তু গাঁদা ফুল শুকাইলে তো তার থিকা আরও অনেক গাছ হইব, তার থিকা অনেক অনেক ফুল। আমি চাই আপনেরাও এইভাবে চিরকাল থাকেন । ” এমন অপ্রতিভ মুখে সপ্রতিভ উত্তর শুনে তো কিশোর স্তম্ভিত............ মেয়েটা হাত থেকে ৫ টাকার নোটটা নিয়ে দৌড়ে চলে গেল। আর এদিকে কিশোর ফুলটা রমার হাতে দিতে দিতে ভাবতে লাগলো, “মরনেই জীবন ??” কিন্তু এ ভাবনা স্থায়ী হল না বেশিক্ষণ । হঠাত এক আর্তচিৎকার ভারী করে তুলল আকাশ-বাতাস সবকিছু।

“গেটের কাছ থেকে এসেছে” বলেই ছুটল রমা, পাশে কিশোর। যা দেখলো তা ভুলতে পারবে না কিশোর। একটা মৃতদেহ পরে আছে। মুখটা কোমল, অক্ষত রয়ে গেছে। পাশে পড়ে আছে হাতের ফুলগুলো ।

রমা ডুকরে কেঁদে উঠলেও কিশোর কিছু বলল না, শুধু একটা কথা ছাড়া, “মরনেই জীবন ???” চতুর্থ পর্ব জীবন সম্পর্কে চিন্তা ধারা বদলে গেছে যেন কিশোরের । আগের মতন আর হেয়ালি নেই। খামখেয়ালিও নেই। মরন আসার আগেই জীবনকে উপভোগ করে নিতে সে বদ্ধ পরিকর। কিন্তু রমার মনে হচ্ছে কিশোর যেন তার কাছ থেকে প্রায়ই দূরে সরে যাচ্ছে ।

আজ আর প্রতিদিনকার মতন পার্কে বসে থাকা হয়না। হয়না বলতে কিশোরের হয়না, রমা আজও এসে প্রতি বিকেলে বসে থাকে পার্কের পুকুরের ধারে। বেঞ্চটাতে বসে, চোখ বন্ধ করে, ভাবছে সে, “কি হল কিশোরের? দিন দিন সে কেমন যেন আনন্দোচ্ছল হয়ে উঠছে। আগে আর কোন মেয়ের সাথে কথাও বলত না, কিন্তু এখন তাকে প্রায়ই দেখা যায় ভার্সিটির ছেলে মেয়েদের সাথে ঘুরছে, পার্কে আর আসছে না। কিশোর আমাকে তোমার মতন আবেগপ্রবন বানিয়ে আজ তুমি কোথায় ঘুরছ?” ভাবতে ভাবতেই আসতে দেখা গেল কিশোরকে।

“তোমার কি হয়েছে কিশোর ?” উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল রমা। একটা হেঁয়ালির হাসি দিয়ে কিশোর তার জবাব দিল, “তোমার সাথে আমি খেলছি। ” ঐদিন আর কোন কথাই হল না, দুজন বসে রইল, তারপর যার যার মতন চলে গেল। “আমিও খেলবো , দেখব তুমি কেমন খেলতে পার। ”, যাবার সময় নিচু গলায় বলল রমা, যেন কিশোর শুনতে না পায়।

তার ঠিক দুদিন পর, রমা বসে আছে পার্কের ঐ বেঞ্চটাতে। চোখ বন্ধ, হাতে একটা চিঠি। কিশোর তার জন্য রেখে গেছে । চিঠিটাতে লেখা আছে অল্প কিছু কথা। “রমা, হয়তো আর দেখা হবে না।

আমি যে অন্য কোথাও বাধা পড়ে গেছি। গাঁদা ফুলটাতে আমার ভালবাসা জমা রেখে দিও। কিশোর” পঞ্চম পর্ব বেশ অনেক বছর পর , নিজের বাড়ির দোতলার বারান্দাতে বসে আছে রমা , রমা চৌধুরী । বারান্দাতে রাখা বড়সড় একটা টাবে অনেকগুলো গাঁদা ফুলের গাছ। শীতের সকালের মিঠে রোদে ফোটা ফুলগুলো ঝলমল করছে।

চেয়ারে বসে বসে পত্রিকার পাতা ওলটাতে ওলটাতেই খালি চাএর কাপটা রাখলেন পাশের টেবিলটাতে। তারপর পত্রিকাটা। কিন্তু পত্রিকাটা রাখতেই যখন গাঁদা ফুলগুলো চোখে পড়ল, তখন এত বছর আগের স্মৃতিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠল তার। শেষ যেদিন কিশোরের সাথে কথা হয়েছিল, মনে পড়তে লাগলো তা, মনে পড়তে লাগলো সেই দিনটা যেদিন কিশোর তার জন্য চিঠিটা ফেলে গেছিল পার্কের বেঞ্চে । এত বছরে যে কিশোরের কথা তার একদম মনে পড়েছে তেমন নয়।

বরং আসল ব্যপার হল প্রতি মুহূর্তই তার শুধু ঐ একটা নামই মনে পড়েছে। কোন এক কারনে আজ তার কিশোরকে দেখতে খুবই ইচ্ছা করছে। এতগুলো বছর পর আজ কিশোরকে দেখতে যাবার সিদ্ধান্ত নিল । সেই ১৮ বছর আগের হলুদ হয়ে যাওয়া চিঠিটার পেছনের ঠিকানাটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো সে, পলেস্তারা খসে পড়া একটা বাড়ি, দোতলা। সামনের দরজায় নক করতেই বেড়িয়ে এলেন দাড়িওয়ালা এক ভদ্রলোক ।

“জি, কাওকে খুজছেন ??” “এটা কিশোরদের বাড়ি না ?” “ও কিশোর সাহেব ?? হ্যাঁ , তিনি তো এ বাড়িতেই থাকতেন, সে তো আজ অনেক বছর হল, চলে গেছেন আজ প্রায় বছর দশেক হল। তিনি যাবার পরেও অনেক মেয়ে তাঁর খোঁজ করতে আসতো, কিন্তু এত বছর পরেও কেউ আসবে, তা বুঝিনি। ” “ও আচ্ছা, তাই নাকি, তা বিয়ে শাদী করেছে কিছু ?” “তা তো করেছেনই, আমার বাড়িতে থাকা অবস্থায়ই করেছেন । একটা ছেলেও হয়েছিল শুনেছিলাম। এ বাড়ি থেকে যাবার পর আর কোন খবর পাইনি।

” “ঠিক আছে, আর বলতে হবে না। কিশোরকে আমার ছোট মেয়ের জন্মদিনে দাওয়াত দিতে এসেছিলাম । আমি বরং চলি। ” “সে কি, চা খেয়ে যান। ” “নাহ, অফিস যেতে হবে, আমি চলি।

” “ঠিক আছে, আসুন বরং। ” ঘুরেই চলতে লাগলো রমা। কিন্তু গলিটার শেষ মাথায় আসার আগেই পেছনে সেই ভদ্রলোকের গলা আবার শোনা গেল। “এই যে ম্যাডাম, একটু দাঁড়ান,” বলে ছুটতে ছুটতে এসে হাজির হলেন, বাড়িয়ে দিলেন একটা প্যাকেট, “কি আছে এটাতে ?” “কিশোর সাহেবের ডায়রি। এই একটা জিনিসই ফেলে গেছিলেন তিনি, ভাবলাম আপনাকে দিয়ে দেই।

এ ডায়রি দিয়ে আমার কি কাজ ?” ডায়রি টা হাতে নিলেন রমা চৌধুরী । উলটে পালটে দেখলেন, অনেক কিছু লেখা, রমার সাথে দেখা হবার দিনগুলোও লেখা আছে। কিন্তু শেষ লেখাটা দেখে রমা ডায়রিটা বন্ধ করে দিল। সেই পাতাটায় লেখা ছিল, “আমি তোমার সাথে খেলবো , রমা। ” ষষ্ঠ পর্ব বারান্দায় বসে আছেন রমা চৌধুরী ।

আজ আর সামনে নেই গাঁদা ফুলের গাছগুলো। নতুন জীবনের সূচনা ঘটাতে তারা বিদায় নিয়েছে দুনিয়ার বুক থেকে । কিন্তু রমার চা আর পত্রিকা ঠিকই আছে, পত্রিকাটা হাতে নিল রমা । আজকের হেডলাইন, “দেশের বিখ্যাত সমাজসেবক ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব রফিকুল ইসলামের মৃত্যু” পড়তে লাগলো রমা , পড়া শেষ হলে ওর সমাজসেবার সংগঠনের লোকদের ডাকল সে। “হ্যাঁ কায়সার?” “হ্যালো, ম্যাডাম, কায়সার বলছি ।

” “রফিকুল ইসলাম মারা গেছেন। ” “কোন রফিকুল ইসলাম ??” “দেশের অন্যতম সমাজসেবক, শিশু অধিকারের ফিল্ডে কাজ করতেন.........” “ও আচ্ছা ?? ঐ কিংবদন্তী রফিকুল ইসলাম ?? যিনি ১০ পনেরটা এতিমখানা আর ভিক্ষুক বৃদ্ধদের জন্য বিশাল এক বৃদ্ধাশ্রম খুলেছেন ? ম্যাডাম , আমি বুঝছি না, তিনি এই এতগুলো প্রতিষ্ঠানের প্রায় হাজার তিনেক মানুষের খরচ বহন করতেন কিভাবে?? ” “রহস্য নিয়ে আমাদের কাজ নয়। আজ দুপুরে তাঁর কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছি আমরা, সবাইকে নিয়ে হাজির হয়ে যেও। আমি ওখানেই থাকব। ” “জি ম্যডাম।

” নতুন গড়া কবরটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রমা। ১ টা বেজে ১৫ মিনিট। তাঁর লোকজন এখনও এসে পৌঁছায়নি । কে ভাববে এই সাধারন কবরটার নিচেই আছে দেশের এক কিংবদন্তী ? দেশের যে কোন মানুষ তাকে চেনে... বিশেষ করে অভাবীরা। দেশ ছাড়িয়ে আফ্রিকার ঐ নিপীড়িত মানুষ গুলার পাশেও দাঁড়িয়েছেন তিনি ।

বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য নিয়ে ওখানে পাঠিয়েছেন , মূলত ওখানকার শিশুদের কল্যানার্থেই । এই কবরেই শুয়ে আছে রফিকুল ইসলাম, ওরফে কিশোর। “তুমি কি জিততে পেরেছ কিশোর ?? তুমি কোথায় বাধা পড়েছিলে, কোথায় বাধা পড়তে পারো তা কি আমার অজেনে ছিল ?? তুমি কেন আমায় সাথে নিয়ে একসাথে কাজে নামলে না? আমি কি তোমার সেই ভালবাসায় ভাগ বসাতাম ?? শুধু কি তাই ?? সেদিন দরজা খুলে তুমি যে চমকে গেছিলে তা কি আমি বুঝিনি ?? লম্বা পাঞ্জাবী আর দাঁড়ির আড়ালে থেকে শোনালে একগাদা মিথ্যা কথা। কিশোর বিয়ে করেছে, ছেলে হয়েছে, মেয়েরা খুজতে আসতো। হা হা হা।

কিন্তু আমাকে হারাতে পারো নি। তুমি এই ধারনা নিয়ে মারা গেছ যে আমি বিয়ে করেছি, মেয়ে হয়েছে, তোমাকে দাওয়াত করতে গেছিলাম, কিন্তু হায় তুমি বুঝতে পারলে না, আমিও খেলছিলাম। শেষমেশ আর থাকতে না পেরে তুমি যখন তোমার পুরানো ডায়রিটা নিয়ে হাজির হলে তখনও কিন্তু আমি শক্তই ছিলাম। তুমি কি আমাকে এতটাই বোকা ভাবো, যে আমি ১৮ বছর আগেকার লেখা আর ২ মিনিট আগের লেখার মধ্যে পার্থক্য করতে পারব না? কিন্তু তুমি থাকতে না পেরে আমাকে জানালে, তুমি খেলছ, আমি সবই বুঝলাম, কিন্তু আমিও যে খেলছি, আমি হারবো কেন ? ” কথাগুলো বলতে বলতে এক মুষ্ঠী গাঁদা ফুলের বীজ ছড়িয়ে দিল কবরটার ওপর। পেছনে শোরগোল শোনা গেল, রমার সংগঠনের লোকেরা এসে গেছে।

“তুমি থাকো কিশোর, একলাই থাকো। আমার খেলা যে এখনও বাকি। তাছাড়া তোমার ফেলে যাওয়া খেলার ভার যে আমাকেই নিতে হবে........................” কথাগুলোই শেষ ছিল। সবাই আসলো, কবর জিয়ারত হল, সবাই চলে গেল, ফিরতে লাগলো রমাও। রমনা পার্কের পাশ দিয়ে গাড়ি করে যাবার সময় তাদের সেই বেঞ্চটার দিকেল তাকালো সে, কিন্তু একী ? বেঞ্চটা আজ আর ফাকা নেই।

সেখানে বসে আছে এক যুবক। ঢুলছে। একটু দূরেই দেখা গেল হনহনায়মান এক মানবীমূর্তি। একটু মুচকি হাসি ছাড়া রমার যে আর কিছুই দেবার ছিল না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।