মুঠোফোনের মাধ্যমে দেশে প্রতারণার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ভুয়া কুইজের পর এবার লটারির মাধ্যমে পুরষ্কার জেতার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জালিয়াতেরা।
‘হ্যালো! আমি গ্রামীণফোন কলসেন্টার থেকে সুমন আহমেদ রাকিব বলছি। আপনার ব্যবহৃত নম্বরটি লটারিতে পালসার মোটরসাইকেল পেয়েছে। আপনি মোটরসাইকেলের বদলে দুই লাখ ৬২ হাজার টাকা নিতে পারেন।
তবে আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যেই আপনাকে ট্যাক্সসহ আনুষ্ঠানিকতা মেটাতে হবে। ’
গত ৬ সেপ্টেম্বর খবরটি শুনে খুশি হন পান্থপথের বাসিন্দা মো. শামস জুবায়ের। ০১৭৫৯-৫১৮৫০৩ নম্বর থেকে আসা ওই লটারি নিয়ে তাঁর মনে খটকা নেই। কারণ, রাকিব নামে ওই প্রতারক তাঁর মায়ের নাম, জন্ম তারিখসহ গোপনীয় তথ্য জানিয়েছেন।
শামসকে জানানো হয়, ২০টি নম্বরে ৩৯ হাজার ২৫০ টাকা ফ্লেক্সিলোড করতে হবে।
এগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন হিসাবের মুঠোফোন নম্বর। একই সঙ্গে পুরস্কারের অর্থ পাঠাতে মো. শামসের ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাব নম্বর এবং তাঁর কর শনাক্তকরণ নম্বরও জেনে নেন কথিত কলসেন্টারের রাকিব।
বেলা আড়াইটার মধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ১৮টি ফোন নম্বরে এক হাজার টাকা করে মোট ১৮ হাজার এবং আরেকটি নম্বরে ২৫০ টাকা ফ্লেক্সি করেন শামস। এর মধ্যে সাতটি গ্রামীণফোনের, ২০টি বাংলালিংকের, একটি এয়ারটেল এবং একটি রবির সংযোগ। শামসের মুঠোফোনে খুদে বার্তায় জানানো হয়, ‘ইউর একাউন্ট হ্যাজ বিন রিফিলড সাকসেসফুলি বাই টাকা ২৫,৫৭০।
ইউর ট্রানজেকশন আইডি ইজ বিডি ৩০২২১১১২৭০৭৭৩। ’ শামস ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, সেখানে টাকা যায়নি। শামস অর্থ জমা না হওয়ার বিষয়টি রাকিবকে জানান। রাকিব দ্রুত বাকি অর্থ পরিশোধের তাগাদা দিলে শামসের সন্দেহ হয় এবং তিনি আর টাকা ফ্লেক্সি করেননি। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে।
পরে ঘটনাটি সাধারণ ডায়েরি করে গ্রামীণফোনে জানানো হয়। কর্তৃপক্ষ ‘লটারি চক্রে’ ব্যবহূত গ্রামীণ ফোনের সংযোগগুলো বন্ধের আশ্বাস দেন। একইভাবে বাংলালিংক ও রবি কর্তৃপক্ষও তাদের সংযোগ বন্ধে পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু সবগুলো নম্বর প্রি-পেইড হওয়ায় শামসের অর্থ আর ফেরত আসেনি।
মো. শামসের ব্যক্তিগত তথ্য ওই সুমন আহমেদ কোথা থেকে পেল—এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, কলসেন্টারগুলোতে কাজের জন্য খণ্ডকালীন লোক নিয়োগ করা হয়।
এদের কেউ কেউ কোনো তথ্য সংগ্রহ ও তার অপব্যবহার করতে পারে।
বাংলালিংকের করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের প্রধান জাকিউল ইসলাম লটারি বা কোনো ধরনের সন্দেহজনক বিষয়ে কেউ অফার দিলে তা ১২১ নম্বরে ফোন করে যাচাই করে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
রিচার্জের নামে প্রতারণা: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সেলিম সামাদ প্রথম আলোকে জানান, তাঁর পরিবারের একটি মুঠোফোনে দুই হাজার টাকার ফ্লেক্সিলোড হওয়ার খুদে বার্তা এসেছে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ওই ফ্লেক্সিলোড সংযোগ থেকে জনৈক ব্যক্তি ফোন দিয়ে সেলিম সামাদকে অনুরোধ করেন টাকাটা ফেরত দিতে। তা-ও আবার ‘বিকাশের’ মাধ্যমে।
বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্ট অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, তাঁর ওই পোস্ট-পেইড সংযোগে কোনো অর্থ আসেনি।
এদিকে তিনি অর্থ ‘বিকাশ’ না করায় এবং তাঁর প্রতারণা বুঝে ফেলায় ওই ব্যক্তি সেলিম সামাদকে হুমকি দিয়েছেন।
কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত মিসড কল: বছর খানেক ধরে দেখা যাচ্ছে, +২৪৩ বা +৮৮০২৪০০ বা +০৯০৪ দিয়ে শুরু হওয়া নম্বর থেকে মুঠোফোনে মিসডকল আসছে। ওই সব নম্বরে কল ব্যাক করলেই মুঠোফোনের অর্থ শেষ।
মুঠোফোন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলোর কোনোটা বিদেশে বসে করা হয়, কোনোটা বাংলাদেশে বসে কম্পিউটারের মাধ্যমে কল করা হয়।
একে ‘সিম ক্লোনিং’ বলা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন জানান, সিম ক্লোন ছাড়াও একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে মুঠোফোনের তথ্য ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এমন ঘটনা ঘটেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের এমবিএ ছাত্র হাসান এর ক্ষেত্রেও। তিনি ফোন পান এয়ারটেল কাস্টমার কেয়ার থেকে। ফোনের ব্যাক্তিটি তাকে ওয়ারিদ থেকে এয়ারটেল হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন এবং এয়ারটেলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক উপলক্ষ্যে একটি র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানায়।
যেখানে প্রথম সাত জনকে ৭৫ হাজার টাকা পুরষ্কার দেয়া হবে। এই ড্র-তে হাসানে মোবাইল নাম্বারটি উঠেছে বলে জানানো হয় এবং হাসান কিভাবে টাকাটা পেতে চান – মোবাইলে না নগদে তা জানতে চাওয়া হয়। তিনি মোবাইলেই থাকুক বলে জানালে তাকে পুরষ্কারের টাকা পাওয়ার জন্য একটি নাম্বারে ফ্লেক্সি করতে বলে হয়। এসময় তাকে এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কাস্টোমার কেয়ারের একজনের সাথে কথা বলানোর ব্যবস্থা করে দেয়া হবে বলে জানানো হয়।
এই সময় হাসানের মনে সন্দেহ জাগে, কিছুদিন আগে তার পাশের বাসার এক ব্যক্তি এভাবে ২ লক্ষ হারিয়েছে বলে শুনেছিলেন তিনি।
আর তাই সঙ্গে সঙ্গে লাইন কেটে দিয়ে এয়ারটেলের কাস্টোমার কেয়ারে ফোন করেন তিনি। এয়ারটেলের গ্রাহকসেবা তাকে ব্যাপারটা ভুয়া বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন এধরণের কোন উদ্যোগ প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া হলে তা গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হবে।
খবর : অনিবার প্রযুক্তি ম্যাগাজিন
ফেসবুক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।