আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুম্বাই প্রস্তুত শচিন টেন্ডুলকার প্রস্তুত



প্রস্তুত মুম্বাই। প্রস্তুত ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। প্রস্তুত শচিন রমেশ টেন্ডুলকার। ভারতের এই বিস্ময়বালক আজ শেষ টেস্ট খেলতে নামছেন। এটা তার ২০০তম টেস্ট।

এর আগে আর কোনো ক্রিকেটারই এত টেস্ট খেলেননি। অনেক দিন ধরেই একটি কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল যে, শচিন টেন্ডুলকার অবসর নেবেন কবে। কারণ তার ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে প্রাপ্তি যোগ তো কম হয়নি। তিনি একের পর এক রেকর্ড গড়েছেন। টেস্ট ও ওয়ানডেতে ইতিহাস গড়েছেন।

তিনি এই দুই ফরম্যাটে নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যার কোনো তুলনাই চলে না। সেই শচিন টেন্ডুলকার শেষ পর্যন্ত তার ক্যারিয়ারের ইতি টানছেন মুম্বাই টেস্টের পর। এর আগে ইডেন টেস্টে দর্শকেরা উত্তেজনায় বারবার কেঁপেছে। যখন মাঠে ছিলেন শচিন। কিন্তু সবার প্রত্যাশাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে তিনি ১০ রানের বেশি করতে পারেননি।

এবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দর্শকেরা অধীরে আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ঘরের ছেলে শচিন টেন্ডুলকার নিজের মাঠে কী করেন তাই দেখার জন্য। শেষ টেস্টে কি শচিন পারবেন আগের অনেক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে? এক নজরে শচীন ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেকের মাধ্যমে ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয় ভারতের ব্যার্টি বিস্ময় শচীন টেন্ডুলকারের। এরপর দুই যুগ তিনি শাসন করেছেন ২২ গজের মধ্যে আসা সব বলকে। ১৯৯ টেস্টে ৫১টি সেঞ্চুরি ও ৬৭টি ফিফটিতে করেছেন ১৫৮৪৭ রান। আর ৪৬৩ ওয়ানডে ম্যাচে ৪৯টি সেঞ্চুরি ও ৯৬টি ফিফটিতে করেছেন ১৮৪২৬ রান।

দুই ফর্মেট মিলিয়ে তিনি করেছেন ১০০টি সেঞ্চুরি। ক্রিকেট ইতিহাসে যা এক ‘ইতিহাস’। সেই শচীন সম্পর্কে জানা-অজানা অনেক তথ্য নিম্নে দেয়া হলো। * তার পুরো নাম-শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। * তার দু’জন ভাই ও একজন বোন রয়েছে।

বড় ভাই অজিতের প্রেরণায় তিনি ক্রিকেটার হয়ে ওঠেন। * শচীনের ডাকনাম লিটল মাস্টার, টেন্ডলিয়া, রিঠল চ্যাম্পিয়ন ও মাস্টার ব্লাস্টার। * শচীনের উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। * তিনি ডানহাতে ব্যাট এবং বল করেন কিন্তু বাঁহাতে লেখেন। * বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী শচীন দেব বর্মনের নামের সঙ্গে মিলিয়ে তার নাম রাখেন তার প্রায়ত বারা।

* ১৯৮৮ সালে ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে ভারতের বিরুদ্ধে একটি এক দিনের অনুশীলন ম্যাচে বদলি হিসাবে পাকিস্তানের হয়ে ফিল্ডিং করেছিলেন টেন্ডুলকার। * ফাস্ট বোলার হওয়ার জন্য ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়েছিলেন শচীন। কিন্তু ১৯৮৭ সালে তরুণ বয়সে এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে তার বাসনাতে মাটি দিতে বলেন অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ফাস্ট বোলার ডেনিস লিলি। * কিশোর বয়সে ক্রিকেট ব্যাগ মাথার নিচে দিয়ে ঘুমাতেন টেন্ডুলকার। * স্কুলজীবনে গ্রীষ্মের এক বন্ধে রোববার সন্ধ্যায় গাছ থেকে পড়ে যান টেন্ডুলকার।

শাস্তিস্বরূপ বড় ভাই অজিত তাকে ক্রিকেট কোচিংয়ে ভর্তি করে দিয়ে আসেন। * রঞ্জি, দিলীপ ও ইরানি ট্রফিতে সেঞ্চুরির মাধ্যমে অভিষেক ঘটে টেন্ডুলকারের। * শচীন সব সময় ভারী (৩.২পাউন্ড) ব্যাট ব্যবহার করেন। তার চেয়ে বেশি ভারি ব্যাট ব্যবহার করতেন একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার ল্যান্স ক্লুজনার। * তরুণ বয়সে নেট অনুশীলনে আউট না হয়ে পুরো সেশন ব্যাট করতে পারলে তার তৎকালীন কোচ রমাকান্ত আচরেকারের কাছ থেকে টেন্ডুলকার একটি করে কয়েন পেতেন।

এমন ১৩টি কয়েন পেয়েছিলেন টেন্ডুলকার। * ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে ওয়াংখেডেতে ভারত ও ইংল্যান্ডর মধ্যকার সেমিফাইনালে বল বয় ছিলেন টেন্ডুলকার। তখন তার বয়স ছিল ১৪ বছর। * থার্ড আম্পয়ারের সিদ্ধান্তে আউট হওয়া প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার টেন্ডুলকার। ১৯৯২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ডারবান টেস্টের দ্বিতীয় দিনে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে থার্ড আম্পয়ারের সিদ্ধান্তে আউট হন তিনি।

* ১৯ বছর বয়সে ভারতের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট খেলেন টেন্ডুলকার। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। * খেলোয়াড়ি জীবনেই রাজ্য সভার সদস্য মনোনীত হওয়া ভারতের প্রথম ক্রিকেটার টেন্ডুলকার। * ওয়ার্ল্ডটেলের সঙ্গে ৩১ দশমিক পাঁচ কোটি রুপিতে পাঁচ বছরের চুক্তি করে ১৯৯৫ সালের অক্টোবরে সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটার হন টেন্ডুলকার। * পারফিউম ও ঘড়ি সংগ্রহের প্রবল ঝোক রয়েছে টেন্ডুলকারের মধ্যে।

* তার প্রথম ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল ৮০০ সিসির মারুতি। * প্রথম বিজ্ঞাপন চিত্রায়নের সময় মুখে মেকআপ নিতে অস্বীকার করেন টেন্ডুলকার। * টেন্ডুলকারের প্রথম বিজ্ঞাপন স্বাস্থ্যকর পানীয় ‘বুষ্ট’-এর। ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে এ কোম্পানির অনেক বিজ্ঞাপনে কপিল দেবের সঙ্গে দেখা যেত টেন্ডুলকারকে। * ইংলিশ ফাস্ট বোলার অ্যালান মুলালি নিজের অভিষেক টেষ্টে টেন্ডুলকার স্বাভাবিকের চেয়ে চওড়া ব্যাট দিয়ে খেলছেন বলে অভিযোগ আনেন।

* রবি শাস্ত্রির সময়ে রঞ্জি ট্রফিতে শচীনের অভিষেক ম্যাচেই ফিল্ডিংয়ের সময় রবির অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব করেন টেন্ডুলকার। * সৌরভ গাঙ্গুলিকে শচীন ‘বাবু মশাই’ আর গাঙ্গুলি শচীনকে ‘ছোটা বাবু’ বলে ডাকতেন। * ১৯৯৫ সালে ছদ্মবেশে ‘রোজা’ নামক সিনেমা দেখতে হলে যান। কিন্তু কিছুক্ষণ পর চোখের সান গ্লাস খুললে তাকে সবাই চিনে ফেলে । * ১৯৮৯ সালের ১৫ই নভেম্বর পাকিস্তনের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে তিনি ১৫ রান করেন।

* একই বছর ১৮ই ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে অভিষেকে ওয়াকার ইউনুসের বলে কোন রান না করেই আউট হন তিনি। * ভারত সরকারের কাছ থেকে রাজিব গান্ধি খেলরত্ম, অর্জুনা অ্যাওয়ার্ড ও পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন টেন্ডুলকার। এ সকল পুরস্কার পাওয়া তিনিই একমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটার। * সুযোগ পেলেই মাছ শিকার করেন টেন্ডুলকার। * মহারাষ্ট্রের ‘বড় পাও’ নামক স্ন্যাকসের প্রতি দুর্বল টেন্ডুলকার।

* ঐতিহাসিক ৫০তম টেস্ট সেঞ্চুরি করার সময় নিজের প্রিয় ব্যাট ব্যবহার করেছিলেন তিনি। * পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে সুনীল গাভাস্কারের দেয়া প্যাড ব্যবহার করেছিলেন টেন্ডুলকার। * সাবেক টেনিস তারকা জন ম্যাকেনরোর অসম্ভব ভক্ত ছিলেন টেন্ডুলকার। ম্যানেরোকে আদর্শ হিসাবে বিবেচনা করে টেন্ডুলকার তার মত (ম্যাকেনরো) চুল কাটাতেন ও হাতে একটা ব্যান্ড পরতেন। * ১৯৯৮ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে তার মোট রান ১৮৯৪।

ক্রিকেট বর্ষপঞ্জিতে ওয়ানডে ক্রিকেটে যে কোনো ব্যাটসম্যানের এটাই সর্বাধিক রান। * টেনিস তারকা পিট সামপ্রাস, বরিস বেকার ও আর্জেন্টিনার দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো অন্য অনেক ক্রীড়াবিদের রোল মডেল টেন্ডুলকার নিজেই। * কিশোর কুমার ও রক ব্যান্ড গ্রুপ ডায়ার স্ট্রেইটের ভক্ত শচিন। * শচীন খাওয়ার জন্য একবার তার মাকে ব্যাঙ ‘ভাজি’ করে দিতে বলেছিলেন। * শচীনকে দেখাশুনা করা মহিলা আয়া তাকে সব সময় ‘শচুচি ভাই’ বলে ডাকতেন।

* নিজের ফেরারি গাড়ি ব্যবহারে শচিন এতটাই দুর্বল যে, স্ত্রী অঞ্জলি তাকে কখনো এটা চালাতে দেন না। * টেনিস বলে ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করেন টেন্ডুলকার। * ১৯৯৬ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত কোনো ব্যাট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি ছিল না টেন্ডুলকারের। এ টুর্নামেন্টের পর বিখ্যাত একটি ব্যাট প্রস্তুতকারী কোম্পানি তার ব্যাট স্পন্সর করে। * ১৯৯২ সালে সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হিসাবে টেস্টে এক হাজার রান পূর্ণ করেন শচিন।

* টেস্ট ক্রিকেটে ১১ হাজারের বেশি রান ও ৪০ উইকেট শিকার করা একমাত্র ক্রিকেটার টেন্ডুলকার। সুত্রঃ Wikipedia

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।