দেশে ফিরতে শুরু করেছে পলাতক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ জঙ্গিরা। নভেম্বরের শেষভাগ থেকে ডিসেম্ভরের শুরুর দিককে টার্গেট করে দেশব্যাপী তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকার পর পুনরায় জেগে উঠেছে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরির। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আস্তানা গেড়ে পুনরায় তৎপরতা চালাচ্ছে। পরবর্তীতে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিযবুত তাহরিরের এক নেতাকে আটক করেছে প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা।
ওই নেতা নাশকতার প্রশিক্ষণ নিতে কয়েক দফা পাকিস্তানে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। একটি চক্র জঙ্গিদের মদদ দিয়ে এর থেকে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনীতে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উসকানিমূলক পোস্টার সেঁটেছে এই সংগঠনটি।
র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, তফসিল ঘোষণার পর স্বাধীনতাবিরোধী চক্র নাশকতা ঘটাতে পারে। সবকিছুই আমলে নিয়ে তা মোকাবিলা করার জন্য র্যাব সদস্যরা প্রস্তুত।
তবে পলাতক জঙ্গিদের দেশে ফেরার ব্যাপারে তার কাছে তথ্য না থাকলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে অতি গোপনে দুবাই থেকে সমুদ্র পথে দেশে এসেছেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজিবি) নেতা মাওলানা আবদুল কুদ্দুস দেশে ফিরেছেন। মাওলানা কুদ্দুস আরাকান হরকাতুল জিহাদের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি মিয়ানমারের নাগরিক। সম্প্রতি বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করে সৌদিতে থাকার বৈধতা নিয়েছেন।
তিনি ইন্টারপোলের রেড নোটিসপ্রাপ্ত আসামি। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। দেশে আসার পর ফটিকছড়ির হেফাজত নেতা জুনায়েদ বাবু নগরীর মাদ্রাসায়ও তিনি দুদিন অতিবাহিত করেছিলেন। সবকটি জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের সমন্বয় করে একটি সম্মিলিত প্লাটফরম তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। এর কিছুদিন আগে সমুদ্র পথে অতি গোপনীয়তায় দেশে ফিরেছিলেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি মাওলানা তাজউদ্দীন।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় দেশে অবস্থানের পর তিনি পুনরায় দেশ ছেড়েছেন। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। তবে তাজউদ্দীন চলে যাওয়ার পরই বিষয়টি অাঁচ করতে পারেন গোয়েন্দারা। মাওলানা তাজউদ্দীনও চট্টগ্রামের হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, তাজউদ্দীনের ব্যাপারে তিনি শুনতে পেরেছিলেন।
তবে হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে তিনি সেদিকে মনোযোগ দিতে পারেননি। তাজউদ্দীন বাবুনগরীসহ কয়েকজন হেফাজতে ইসলামের নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সূত্র জানায়, মাওলানা তাজউদ্দিনের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের নেতা মুফতি ইজহারের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। চট্টগ্রামের লালখান বাজারে অবস্থিত জমিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় বোমা বিস্ফোরণের পর মুফতি ইজহার পলাতক। তাজউদ্দিন দেশে ফেরার পর ওই মাদ্রাসায়ও গিয়েছিলেন।
কিছুদিন আগে পুলিশ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে গ্রেফতার করে। তাজউদ্দিন তার আপন ভাই। পুলিশ রিমান্ডে টুকুকে তাজউদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে তাজউদ্দিনের গোপনে দেশে ফেরার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে গোয়েন্দাদের। নতুন করে দেশের ভেতর বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে দেশে আনা হয়েছে কি না, এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন তারা।
এরই মধ্যে তাজউদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চট্টগ্রামে অভিযানও চালিয়েছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলায় তাজউদ্দিন চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার আরেক ভাই রাতুল বাবুও একই মামলার আসামি। এ দুই সহোদরের মাথার ওপর ঝুলছে ইন্টারপোলের রেড নোটিস। ২০০৬ সালে মোহাম্মদ বাদ নামে পাসপোর্ট করে তাজউদ্দিন প্রথমে পাকিস্তানে পালিয়ে যান।
সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়া চলে যান। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা তার ছোট ভাই রাতুলের কাছে তার যাতায়াত রয়েছে। সর্বশেষ মালয়েশিয়া থেকে তিনি সমুদ্র পথে দেশে ফিরেছিলেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শিবির, হুজি ও জেএমবির প্রশিক্ষিত বোমা প্রস্তুতকারীরা বোমাগুলো তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ধারকৃত বোমাগুলো সুদক্ষ হাতে তৈরি।
আগামী ডিসেম্বরকে টার্গেট করে বোমাগুলো তৈরি করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের তথ্য দিয়েছেন কলাবাগানের একটি মেস থেকে ১৭৯টি বোমাসহ গ্রেফতারকৃত শিবিরের সাত সদস্য। সর্বশেষ লালবাগ থেকে ৪০৭টি বোমা উদ্ধারের পর চোখ কপালে উঠেছে গোয়েন্দাদের। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, একটি চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তারা কোনোভাবেই সফল হতে পারবে না। জঙ্গিদের দেশে ফেরার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ধারকৃত বোমাগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বড় ধরনের নাশকতা চালাতেই মজুদ করা হয়েছিল। গ্রেফতারকৃতরা বোমার প্রস্তুত ও মজুদকারী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঢাকায় আরও বোমা তৈরির কারখানা আছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।