'তোমরা চুপ করো, ঈশ্বর এখন ব্যাটিং করছেন। ' -এক ভক্ত প্ল্যাকার্ডে লিখে নিয়ে এসেছিলেন কথাগুলো। শচীন টেন্ডুলকার যখন ব্যাটিং করছিলেন, তখন বার বার টিভি ক্যামেরায় প্ল্যাকার্ডটি দেখানো হচ্ছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা! দর্শকরা কি অনেক সাধনা করে টিকিট কেটে স্টেডিয়ামে গিয়েছেন চুপ করে থাকার জন্য? তাছাড়া শচীনের ব্যাটিং দেখে নীরব থাকার উপায়ও তো ছিল না! গত তিন বছরের ঝিমিয়ে শচীনের ব্যাটে কাল ওয়াংখেড়েতে ছিল তারুণ্যের জয়গান। আহ! কী চমৎকার স্ট্রোক ঝলমলে ব্যাটিং!
শচীন কি এমন আহামরি বড় ইনিংস খেলেছেন! ৭৩ বলে অপরাজিত ৩৮ রান...স্ট্রাইকরেট মাত্র ৫২।
চুলোয় যাক স্ট্রাইকরেট! টেস্টে কী আর কেউ এতো সব দেখে! তার ব্যাটিং স্টাইলটা ছিল অসাধারণ। বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিল সেই তরুণ টেন্ডুলকারকে, যাকে স্ট্রাইকিং প্রান্তে ব্যাট হাতে দেখলেই বোলারদের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেতো। সে যাই হোক, এটি তো শচীনের ২০০তম টেস্ট খেলার মাইলফলক এবং বিদায়ী অর্ভথনা জানানোর বিশেষ এক সিরিজ। সে কারণেই সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে এক টেন্ডুলকার।
মুম্বাইয়ের আকাশে কাল সকালে ছিল কালো মেঘের ঘনঘটা! ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ায় সবার মুখ বেজার! আশা ছিল, টস জিতে দর্শকের কথা চিন্তা করে হলেও ব্যাটিং নিবেন ধোনি।
ওয়াংখেড়ের রান বন্যার উইকেটে শচীনের ব্যাটিং দেখার জন্য সবাই যেন উন্মুখ হয়েছিল ক্রিকেট দুনিয়া। কিন্তু ধোনির ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তে সে আশায় গুঁড়েবালি। 'ক্যাপ্টেন কুল' এর ওপর আস্থা হারান অনেকেই! তবে দিন শেষে যেন পাল্টে গেল সবার ধারণা, যখন ব্যাটিং স্বর্গে ক্যারিবীয়দের মাত্র ১৮২ রানে অলআউট করে দিয়ে শচীনের ব্যাটিং বিনোদন দেখার ব্যবস্থা করলেন ধোনি। দিন শেষে দুই উইকেটে ভারতের সংগ্রহ ১৫৭ রান। যদিও ২৫ রানে পিছিয়ে স্বাগতিকরা, কিন্তু এসব নিয়ে আর কে ভাবছে! সবাই তো শচীনের ব্যাটিং দেখেই মহানন্দে ঘরে ফিরেছেন।
টেন্ডুলকার ম্যানিয়ায় প্রজ্ঞান ওঝার দাপুটে বোলিংয়ের কথা কেউ যেন আমলেই নেয়নি। মাত্র ৪০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ক্যারিবীয়দের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন তিনিই। রবিচন্দন অশ্বিনও কম যান না। তিনিও নিয়েছেন ৪৫ রানে তিন উইকেট। দুই স্পিনারেই ধরাশায়ী হয়ে যায় উইন্ডিজ।
স্যামির দলকে অলআউট করতে ধোনি ব্যবহার করেছেন মাত্র চার বোলার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ না পারলেও রান বন্যার উইকেটে ভারত যে বড় স্কোরের পথে হাঁটবে এটা সবার জানাই ছিল। দুই ওপেনার মুরালি বিজয় ও শেখর ধাওয়ান খেলতে থাকেন ওয়ানডে স্টাইলে। বাউন্ডারি হচ্ছিল ঠিকই কিন্তু উচ্ছ্বাসে কোনো জোস আসছিল না। আর কিভাবেই বা আসে! দর্শকরা তো আর বিজয়-ধাওয়ানের ব্যাটিং কিংবা ভারতের বড় স্কোর দেখতে মাঠে যাননি।
দর্শকের চাওয়াটা মনে হয়, দ্রুত কবুল করে নিলেন উপরওয়ালা! তাই তো ৭৭ রানের মাথায় পর পর দুই উইকেটের পতন। আহা! দর্শকের সে কী উল্লাস। ভারতের উইকেট পতনে ভারতীয় দর্শকরা খুশি হন, এমন দৃশ্য বিরল! এসবই তারা করেছেন শচীনের ব্যাটিং দেখার জন্য।
লিটল মাস্টার যখন মাঠে নামছিলেন তখন তার সম্মানে দর্শকরা দাঁড়িয়ে যান। আর ড্রেসিং রুমের সামনেই শচীনকে গার্ড অব অনার দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা।
গ্যালারি থেকে হাত নেড়ে শচীনকে অভিবাদন জানান বলিউড তারকা আমির খান। স্ত্রী অঞ্জলী মাঠে প্রবেশ করেন শচীন তিন রান করার পর। এই প্রথম স্বামীর খেলা স্বচক্ষে দেখার জন্য মাঠে গিয়েছেন অঞ্জলী। শচীনও তাকে অসম্মান করেননি! গত তিন বছর তো মাঠে শচীন ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। কাল যেন খোলস থেকে বেরিয়ে এলেন।
ক্যারিবীয় স্পিনার গ্যাব্রিয়েলের বলে কাভার ড্রাইভ করে প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান। সে কী স্টাইল...ঠিক যেন আগের সেই শচীন। যার ভয়ে সবসময় তটস্থ থাকতেন বোলাররা। কাল সব মিলে ছয়টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনি। প্রত্যেকটিই ছিল দুর্দান্ত।
দিন শেষে ৩৮ রানে অপরাজিত মাস্টার ব্লাস্টার ব্যাটসম্যান। স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে ভক্তদের মনে...শেষ ম্যাচে একটা সেঞ্চুরি হয়ে গেলে মন্দ হয় না।
একে তো শচীনের ২০০তম টেস্টের মাইলফলক, তার ওপর বিদায়ী ম্যাচ, তাই দর্শকের মাতামাতি করাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তাদের উল্লাস প্রকাশের ধরনটা যেন বাড়াবাড়ি রকমের ছিল। তাই তো ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার নবজিৎ সিং সিঁধু বলছিলেন, 'দর্শকের কী দোষ বলুন।
শচীন রমেশ টেন্ডুলকার তো আর ক্রিকেটার নন। তিনি তো ভগবান! আর ভগবানকে স্বচক্ষে খেলতে দেখে আবেগকে কি আর লাগামে আটকে রাখা যায়!'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।