শুক্রবার। মুম্বাই টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ। নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে এক তরুণী দুরন্ত সাহস বুকে নিয়ে পৌঁছে গেল ক্যারিবীয় টিম বাসের সামনে। হাতে প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা, 'গেইল প্লিজ প্লিজ স্কোর এ ডাবল টুমরো।
' ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের জন্য বাক্যটা বিঁদঘুটে মনে হতে পারে। কিন্তু মুখে গেরুয়া-সবুজ রং মাখানো তরুণীর আবেগের গভীরতা এই একটি বাক্যেই ধরা পড়ল। এরও আগে বলিউড তারকা আমির খান থেকে শুরু করে পুরো ওয়াংখেড়েই ধোনিকে অনুরোধ জানাচ্ছিল, দয়া করে এবার ইনিংস ঘোষণা কর। বিপরীতমুখী স্রোত এলো কোত্থেকে! হিসাবের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে ভক্তরা তখন ডুব সাঁতার কাটছেন কোনো এক মহাসমুদ্রে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে আছে সাত উইকেট।
সামনে পড়ে আছে ২৭০ রান দূরের প্রায় অস্পৃশ্য মাইলফলক। ভারতকে আবার ব্যাটিংয়ে নামাতে হলে এই মরুভূমি পাড়ি দেওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারতকে দ্বিতীয়বার মাঠে নামানোর জন্য যতটা না আগ্রহী তার চেয়ে শত-সহস গুণ বেশি আগ্রহ ছিল ওয়াংখেড়ের দর্শকদের। কেবল ওয়াংখেড়ে! বিশ্বের সব ক্রিকেটভক্তদেরই। তা আর হলো কই! ক্যারিয়ারের সূচনা বিন্দুতে এসেই মিলতে হলো শচীন টেন্ডুলকারকে।
১৯৮৯ সালের নভেম্বরেই পাকিস্তানের বিপক্ষে শুরু করেছিলেন টেস্ট ক্রিকেট যাত্রা। ২৪ বছর পেরিয়ে সেই নভেম্বরেই বন্ধ করলেন অসংখ্য স্মৃতিতে ভরপুর সিন্দুকের ঢালা। তাই নভেম্বর যেন টেন্ডুলকারের কাছে হয়ে থাকল 'সুইট নভেম্বর'। এমন মধুর বিদায় আর কোনো ক্রীড়াবিদের আসবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ১৯৮৯ সালে জীবনের প্রথম টেস্ট ম্যাচেও একটা ইনিংস খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন।
শেষ বেলাতেও একটা ইনিংসই খেললেন তিনি। বিপরীত কেবল প্রথমটাতে ভারত ড্র করেছিল, শেষটাতে ইনিংস ও ১২৬ রানের জয়। দুই যুগে কি জীবনের একটা বৃত্ত পূরণ হয়! হতেও পারে। শচীন টেন্ডুলকার তো তাই করলেন। মুম্বাই টেস্ট আড়াই দিনে জয় করার পর ধোনি-কোহলিদের কাঁধে চড়ে ওয়াংখেড়ের সবুজ ঘাসে ভারতীয় পতাকা উড়িয়ে ক্রিকেট জীবনের শেষ কৃত্য সারলেন তিনি।
তবে এই পূরণের মধ্যেও কত আফসোস জমা হয়ে আছে! ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে ২৬ রানের আফসোস রয়ে গেল। ৭৪ রানের ইনিংসটা তো ১০০তে গিয়ে ঠেকতেই পারত! ১৬ হাজার রানের মাইলফলকও তো স্পর্শ করা হলো না (১৫৯২১)। কিন্তু এসবে কি আসে যায়! কিচ্ছু না! স্টার টিভির দুজন ক্যামেরাম্যানকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কেবল শচীনকে ক্লোজে রাখতে হবে। সারাক্ষণ! বাজেটে কুলিয়ে উঠলে চারজন ক্যামেরাম্যান থাকত এই বিশেষ অ্যাসাইনমেন্টে! ইতিহাসে এই প্রথমবার অনেক কিছুই ঘটে গেছে।
ব্র্যাডম্যানের মতো শচীনকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়নি। শেষ বিকালেও দুপুরের প্রখর রোদের মতোই বিকিরণ করেছে তার ব্যাট। অখ্যাত নরসিংহ দিওনারাইনকে একটা দারুণ খ্যাতি দিয়ে গেলেন শচীন টেন্ডুলকার। ক্রিকেট ঈশ্বরের শেষ উইকেটটা তার দখলেই গেল।
ব্র্যাডম্যানকে শেষ ইনিংসে আউট করা এরিক হোলিস নিজের কাছে অনেকদিন বলটা রেখে দিয়েছিলেন।
দিওনারাইনও নিশ্চয়ই তাই করবেন। এরিক হোলিসের মতো তিনিও বলটা প্রদর্শনী করে বেড়াতে পারেন যেখানে সেখানে। শেষ হয়ে গেছে একটা অধ্যায়। তবে সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। এমনকি শচীনের মতো কিংবদন্তির জন্যও নয়।
আগের মতোই টেস্ট ম্যাচ খেলবে ভারত। জয়ে হাসবে, পরাজয়ে কাঁদবে। কিন্তু একজন শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটিং দেখার সাধ মেটাতে হবে কেবলমাত্র ফেলে আসা দিনের ভিডিওগুলোতেই! তবে ওয়াংখেড়ের ৩২ হাজার দর্শক বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন, সেই দিনটায় আমি উপস্থিত ছিলাম! মানসচক্ষে তারা জীবনের শেষ মুহূর্তেও দেখতে পাবেন ক্রিকেট ঈশ্বরের ব্যাটিং কারিশমা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।